ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

পাবিপ্রবি ভিসির নামে ৫০ কোটির মামলা, সমন জারি

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২১:৪৭, ২৪ মার্চ ২০২২

বাদী শিক্ষক আওয়াল কবির ও ভিসি অধ্যাপক রোস্তম আলী

বাদী শিক্ষক আওয়াল কবির ও ভিসি অধ্যাপক রোস্তম আলী

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম রোস্তম আলীর নামে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা হয়েছে। মামলাটি আমলে নিয়ে সমনও জারি করেছেন আদালত। 

মামলা দায়ের করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রক্টর ও রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ড. আওয়াল কবির জয়। তিনি বৃহস্পতিবার পাবনার আমলী আদালত-১ এ স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারা মোতাবেক মামলাটি দায়ের করেন। 

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নেন এবং বিবাদীর প্রতি সমন জারি করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ (১) ও অ্যাডভোকেট চৌধুরী সুলতানা রাজিয়া টুলটুলি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাদীর আরজি সূত্রে জানা যায়, আসামি অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী, পিতা মৃত মাবুদ আলী (বর্তমান ঠিকানা- অধ্যাপক, ফলিত রসায়ন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালে গত ২৩/১২/২০১৯ তারিখে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ড. আওয়াল কবির জয়কে রেজিস্ট্রার কর্তৃক চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর পরে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 

শুধু তাই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্ত কমিটির নামে নানাভাবে হয়রানি করেন এবং দীর্ঘসময় তার রিপোর্ট প্রদান না করে উপাচার্যের মেয়াদ শেষের আগে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান। এতে ড. আওয়াল কবির জয়ের সামাজিক, ব্যক্তিগত এবং প্রশাসনিক সম্মান হানী হয়েছে এবং সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। 

উক্ত প্রকার মানহানী ঘটায় উপাচার্য রোস্তম আলী ড. আওয়াল কবির জয়ের ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি করে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় গুরুতর অপরাধ করেছেন। আসামি এতকাল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আসীন থাকায় বাদীর গুরুত্বর ক্ষতি করতে পারে বিধায় মামলা করতে বিলম্ব হলো। 

মামলার শুনানী শেষে বৃহস্পতিবার আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারি করেন। 

উলেখ্য, অধ্যাপক রোস্তম আলী উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। নিয়োগবাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার, একাডেমিক-প্রশাসনিক আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ইউজিসির তদন্তে নানা অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তিনি অনেক টাকা ফেরতও দেন। তার অদক্ষতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। 

সর্বশেষ গত ৭ মার্চ মেয়াদ শেষ হয় তার। মেয়াদ শেষের আগে গণনিয়োগ আয়োজন করেন এবং রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে সভা বাতিল করে পুলিশ পাহারায় রাতের অন্ধকারে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন। 

এর আগে অনৈতিকভাবে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন নিজের ভাতিজি কানিছ ফাতিমা (সেকশন অফিসার), ভাগিনা হাসিবুর রহমান (অফিস সহকারী), ভাইয়ের ভায়রার ছেলে মীর রমজান আলী (টেকনিশিয়ান), নাতি ফজলুল হক (মেসেঞ্জার), ভাতিজা নূর মোহাম্মদ (অফিস সহকারী), নাতি হাসান উৎসব (অফিস সহায়ক), ভাগনে ছানোয়ার হোসেন (ল্যাব এটেডেন্ট) ও নাতি আসিকুর রহমানকে (বাস হেলপার)। 

রোস্তম আলীর নিয়োগ বাণিজ্য ও গণনিয়োগ বন্ধ করতে শিক্ষক-কর্মকর্তারা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন, ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং বিদায়বেলা ঝাড় ও জুতা মিছিল করে।

রোস্তম আলীর অনিয়ম, ক্ষমতার অবব্যবহারের প্রতিবাদ এবং নানা দাবিতে গত প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে তালা ঝুলিয়ে রাখেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে সৃষ্টি হয়েছে নানা সঙ্কট। 

মামলার বাদী শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. আওয়াল কবির জয় বলেন, ‘উপাচার্য রোস্তম আলী ক্ষমতার অবব্যহার করে ভুয়া সব অভিযোগ তুলে আমাকে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ঢুকতে দেননি এবং কোনো কারণ দর্শানো ব্যতীত প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে বিরত রেখে আমার ব্যক্তিগত, চাকরি, এবং সামাজিক ক্ষতি করেছেন। আশা করি আদালতে ন্যায় বিচার পাবো। 

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ ও অ্যাডভোকেট চৌধুরী সুলতানা রাজিয়া টুলটুলি বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের মক্কেল ন্যায় বিচার পাবেন।’ 

এদিকে, এ বিষয়ে জানতে পাবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম রোস্তম আলীকে মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি