ঢাকা, বুধবার   ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর নতুন ষড়যন্ত্র 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর কার্যকলাপে বারবারই পরিণত হয়েছে রক্তাক্ত জনপদে। তাদের ক্রমবর্ধমান চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা, গুম ও সন্ত্রাসের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও সম্প্রীতি। এত কিছুর মাঝেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমনে খানিকটা আশার আলো দেখাতে পেরেছিল নিরাপত্তা বাহিনীসমূহ। বিষয়টি পার্বত্যবাসীসহ দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনলেও ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়া সহ বেশ কিছু যোগাযোগ ও প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত নেতিবাচক প্রচারণা অনেকেরই চোখে পড়ছে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি উদ্বেগজনক মনে হলেও এর অন্তরালের চিত্র আরো ভয়াবহ। বস্তুত এই সকল প্রচারণার কোন বাস্তবভিত্তি তো নেইই বরং এর পেছনে লুকিয়ে আছে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের গভীর ষড়যন্ত্র।

স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীসমূহ বিশেষ করে জেএসএস ও ইউপিডিএফ নামধারী সংগঠন ও তাদের মদদ দাতারা নিজেদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী অপতৎপরতা টিকিয়ে রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের একমাত্র বাধা নিরাপত্তা বাহিনীকে পরাস্থ করতে কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিয়েছে অপপ্রচার, সাইবার প্রপাগান্ডা আর হেইট ক্যাম্পেইনকে। উদ্দেশ্য, জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
 
এই সকল অপপ্রচারের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমকে ব্যাহত করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার। দুষ্কৃতিকারী দমনে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত যেকোনো অভিযানকে ঐ স্থানের ধর্মীয় উপাসনালয়, কিয়াংঘর কিংবা ভাবনা কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আক্রমণ বা পবিত্রতা লঙ্ঘনের তকমা দিয়ে তারা স্থানীয় ধর্মভীরু জনসাধারণের মনে বিদ্বেষ তৈরীর চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সাথে তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলেও এ সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টাও জারি রেখেছে। সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলার বন্দুকভাঙা রেঞ্জে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সংক্রান্ত এমনই কিছু অপপ্রচার চোখে পড়ার মত। 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাঙামাটি জেলার দুর্গম বন্দুকভাঙ্গা রেঞ্জের মারিচুক ও যমচুগ নামক এলাকায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একটি সেনা অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সেনাবাহিনীর সাথে ইউপিডিএফ আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় একজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার পাশাপাশি উদ্ধার হয় অ্যাসল্ট রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, ধ্বংস করা হয় সন্ত্রাসীদের একাধিক ঘাটি এমনকি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও।  

তবে এই ঘটনার পরপরই একটি নির্দিষ্ট মহল দাবি করে যে সেনাবাহিনী যমচুগ এ অবস্থিত ভাবনাকেন্দ্র অবমাননা করেছে, ভাবনাকেন্দ্র দখল করে সেখানে ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা করছে এবং জোর পূর্বক স্থানীয় লোকজনকে উচ্ছেদ করছে। তাদের দাবি নিরাপত্তা বাহিনী যেন ঐ স্থানে অবস্থান না নেয়। 

তবে সত্য প্রকাশ হতে খুব বেশী সময় লাগেনি। সেনা অভিযানের পর গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত অভিযান এলাকার বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় ভাবনা কেন্দ্রের আসে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঐ স্থানে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের নানা চিহ্ন এমনকি নিরাপত্তা বাহিনী সাথে বন্দুকযুদ্ধে আহত সন্ত্রাসীদের রক্তের দাগও লেগে আছে ভাবনা কেন্দ্রের দেয়াল এবং মেঝেতে। মূলত জেএসএস ও ইউপিডিএফ নামধারী এই সব আঞ্চলিক সশস্ত্র দলের সদস্যরাই ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে সন্ত্রাসী অপকর্ম পরিচালনার মাধ্যমে ধর্মকে অবমাননা করছে।

পরবর্তীতে, সেনাবাহিনী চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উক্ত এলাকায় তাদের অভিযানিক কাজ সমাপ্ত করে ব্যারাকে ফেরত আসার সাথে সাথেই ঐ স্থানের দখল নেয়ার জন্য আঞ্চলিক দুই সশস্ত্র দল জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর মধ্যে শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি, যা থেমে থেমে এখনো চলমান। স্থানীয় জনসাধারণ জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে পাশের এলাকায় এবং দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপ আশা করছে । 

স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য অনুযায়ী, ভূ-প্রকৃতি গত কারণে বন্দুকভাঙ্গা এলাকাটি দুষ্কৃতি সহায়ক এলাকা। উক্ত এলাকার দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত জেএসএস ও ইউপিডিএফ নামধারী আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এলাকাটিকে সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে রেখেছে। এমনকি ঐ স্থানের দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে গত কয়েক বছরে নিহত হয়েছে প্রায় ২০-২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। মূলত একারণেই সেনাবাহিনী ঐ অঞ্চলে সন্ত্রাস নির্মূলে উক্ত অভিযান পরিচালনা করে। আর সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্মীয় উপাসনালয়ে ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি  নিতান্তই দুষ্কৃতিকারীদের ওই অঞ্চল থেকে দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে পুনরায় তাদের আধিপত্য সৃষ্টি করার একটি অপকৌশল মাত্র।

এভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক সশস্ত্র দলের চাঁদাবাজি, গুম, খুন আর অস্ত্রবাজিতে কোনঠাশা হয়ে আছে পাহাড়ী জনপদ। অবস্থার উত্তরণে একমাত্র আস্থার স্থল এই নিরাপত্তা বাহিনীই এখন দুর্বৃত্তদের অপপ্রচারণার প্রধান লক্ষ্যবস্তু

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি