ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পাহাড় কন্যাদের বাজার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশ। তবে এক সময় ছিল সারা দেশে ধান চাষই ছিল প্রধান কৃষি। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে ধান, পাটের পাশাপাশি সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছে দেশের কৃষক সমাজ। 

দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি ও প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এক সময় যেখানে শুধুই জুম চাষ হতো এখন সেখানে অন্যান্য কৃষি পণ্যের পাশাপাশি সবজি চাষও হচ্ছে অনেক বেশি। 

বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষের মূল কারিগর সেখানকার নারীরা। বিভিন্ন সবজি চাষ করে এখানে পরিবারের আর্থিক সমস্যা সমাধান করে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারীরা। সবজি উৎপাদন থেকে ‍শুরু করে বাজারে নিয়ে তা বিক্রি করা সবই করছে নারীরা। 

সবজি চাষে স্বাবলম্বী হওয়া পাহাড়ি নারীদের একজন মালতী চাকমা। একচল্লিশ বছর বয়সী মালতী চাকমা তার নিজের জমিতে ফলানো সবজি নিয়ে এসেছেন রাঙ্গামটি সদর উপজেলার কাঁচা বাজারে। আজ তিনি চার রকমের সবজি নিয়ে এসেছেন। এসব সবজির মধ্যে আছে কাঁকরোল, করলা, কাঁচ কলা আর পাহাড়ী বেগুন।

শুধু মালতীই নন, আরো অনেক পাহাড়ী নারীই এই বাজারে এসেছেন যারা সবজিসহ আরো নানান ধরণের নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন।

মালতী বলেন, ‘গত দশ বছর ধরে আমি বিভিন্ন বাজারে সবজি বিক্রি করে আসছি। আমার স্বামী একজন কৃষক। সে সারাদিন মাঠে থাকে। তিন ছেলে-মেয়ে আর শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী মিলে আমাদের সাত জনের পরিবার। আর তাই একজনের আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। আমি আর শ্বাশুড়ী মিলে বাড়ির আঙ্গিনায় সামান্য জমিতে সারা বছর বিভিন্ন সবজি চাষ করি। সেসব সবজিই বাজারে নিয়ে আসি।’

তিনি বলেন, ‘এ কাজে আমার স্বামী মিল্টন চাকমাও আমাকে সহযোগীতা করে। কিন্তু বিক্রির কাজটা আমিই করি।’

মালতীর পাশেই আরো কয়েক রকমের সবজি আর শুটকি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন জয়ন্তী মারমা। তার এসব সবজির মধ্যে আছে থানকুনি পাতা, টক পাতা, কাঁকরোল, উস্তা, টমেটো আর ওলকচু। রয়েছে ছুড়ি শুটকী, ছোট চিংড়ি শুটকী আর সিঁদল।

তিনি বলেন, আমি শুধু এখানে নয় আরো দুটি গ্রাম্য বাজারে সবজি বিক্রি করি। সেখানেও আরো অনেক নারী সবজিসহ আরো নানা রকমের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করেন।

মূলত পাহাড়ের গ্রাম্য বাজারগুলিতে পাহাড়ি নারীদের সবজি বিক্রেতার অবস্থান চোখে পড়ার মতো। দরিদ্র পরিবারের পাহাড়ি নারীরা পাহাড়ের দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন সবজি নিয়ে গ্রাম্য বাজারগুলোতে বিক্রি করেন। এমনকি অনেক নারী আবার পথের পাশে বসেও তাদের সবজি বিক্রি করেন। এদেও কেউ কেউ আবার স্থানীয় পাইকারী বাজার থেকে সবজি কিনে গ্রাম্য বাজার বা রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করেন। মূলত এসব পণ্য বিক্রির অর্থ দিয়েই তাদের সংসার চলে। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন সবজি জাতীয় ফলমূল কিনে এনে বিক্রি করেন।

তেমনি একটি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার সিঙ্গিনালা মহামুনি পাড়া গ্রামে বসে একটি ছোট্ট গ্রাম্য বাজার। এটি সিঙ্গিনালা বাজার নামেই সবার কাছে পরিচিত। এ বাজারে জুমে চাষ করা ফলমূল আর বন জঙ্গল থেকে আহরণ করে নিয়ে আসা টাটকা সবজি বিক্রি হয়। এছাড়া পাশেই রয়েছে কাপ্তাই লেক। সেখান থেকে টাটকা ছোট বড় মাছ ধরে বিক্রি করে জেলেরা। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে সিঙ্গিনালা এসে ক্রেতারা ভীড় জমান।

এই বাজারে বিক্রেতাদের মধ্যে নারীরা সবচেয়ে এগিয়ে। নারীরা কাঁচা সবজি বিক্রি করেন। সারা বছরই এখানে পাওয়া যায় বন-জঙ্গল থেকে আহরিত নানান ফল আর শাক-সবজি। মূলত দরিদ্র নারীরা সংসারের টানাপড়েন কমাতে বুনো সবজি সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রয়ের জন্য। আর এসব ভেজালমুক্ত সবজি কিনতে ক্রেতারাই প্রতিদিন সকাল-বিকাল এ বাজারে ভিড় জমান।

জুমে (পাহাড়ে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করা জমি) উৎপাদিত ফলমূল এবং বন জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা অল্প অল্প করে হলেও নানান জাতের সবজি নিয়ে বিকেলে বিক্রি করতে চলে আসেন তারা। সবজির মধ্যে বাঁশকুড়ল, তারাগাছ, কচুশাক, কচুলতি, কাঁচা-পাকা পেপে, থানকুনি পাতা থেকে শুরু করে কলার মোচাসহ রয়েছে বিভিন্ন টাটকা সবজি।

চট্টগ্রাম শহর থেকে এই বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমি প্রায় সময়ই অফিসের কাজে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি আর বান্দরবানের বিভিন্ন অঞ্চলে যাই। আর ফেরার পথে এসব গ্রাম্য বাজার থেকে টাটকা সবজি নিয়ে যাই। এসব সবজির দাম কিন্তু একটু বেশী। তারপরও পাহাড়ী টাটকা সবজি পাওয়া যায়, যার কারণে দাম সামান্য বেশী হলেও এসব সবজিই নিয়ে যাই।’

সিঙ্গিনালা বাজারের আরেক ক্রেতা মনমোহন মারমা বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এখান থেকে বাজার করি। এখানে নারী বিক্রেতারা সবাই অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পণ্য নিয়ে আসেন। মূলত সবাই দরিদ্র্য পরিবারের। এই অর্থ দিয়েই তারা সংসার চালায়।’
সুত্র : বাসস
এমএম/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি