দি ডক্টরস্
পায়ুপথের রোগ এনাল ফিসার ও চিকিৎসা
প্রকাশিত : ১৫:৫৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৬:১৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
পায়ুপথের সব রোগই সাধারণ মানুষ পাইলস মনে করে থাকেন। কিন্তু পাইলস ছাড়াও পায়ুপথে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে। যেগুলোর মধ্যে এনাল ফিসার একটি। এ রোগে মূলত পায়ুপথ ছিঁড়ে যায়। সাধারণত প্রবল কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে অথবা যথাযথ প্রক্রিয়ায় মলত্যাগ করা সম্ভব না হলে শক্ত মল অথবা অতিরিক্ত চাপের কারণে পায়ুপথ সামান্য ছিঁড়ে যায়।
যেহেতু পায়ুপথ অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা, সেহেতু ছিঁড়ে যাওয়ায় মলত্যাগ করতে গেলেই তীব্র ব্যথা শুরু হয়। ওই ব্যথা কারো আধা ঘণ্টা, কারো ক্ষেত্রে সারা দিন স্থায়ী হয়। ব্যথা পিন দিয়ে খোঁচা দেওয়ার মতো, ছুরি দিয়ে কাটার মতো হতে পারে। এ ব্যথা সারা তলপেটে ও পায়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে চুলকানি ও এক ধরনের অস্বস্থি হতে পারে। রোগী ব্যথার ভয়ে টয়লেটে যেতে চান না। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময় মলত্যাগে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। বিষয়টি দুষ্টচক্রের মতো চলতে থকে। ব্যথা ছাড়া অন্য আরেকটি উপসর্গ হচ্ছে রক্ত যাওয়া। তবে এনাল ফিসারে রক্ত বেশি যায় না। সাধারণত মলের গায়ে লেগে কিংবা টিস্যু পেপারে দেখা যায়। দুই-এক ফোঁটা রক্ত কমডেও দেখা যেতে পারে। রক্ত, ব্যথা ছাড়া পায়ুপথে সামান্য ফোলা বা গেজ, টয়লেট আসতে দেরি হওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) ‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানে আজকের আলোচনার বিষয় ‘পায়ু পথের সাধারণ রোগ এনাল ফিসার ও চিকিৎসা’। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন- অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান (বিভাগীয় প্রধান, কলোরেকটাল সার্জারী বিভাগ, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল)।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন- ডা. নন্দিনী সরকার। অনুষ্ঠানটি শুনে লিখিত রুপে সাজিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ
প্রশ্ন : পায়ু পথের কি কি সমস্যা নিয়ে রোগীরা আপনাদের কাছে আসে?
উত্তর : আসলে পায়ু পথে অনেকগুলো রোগ হয়। যে সাধারণ রোগগুলো আমাদের কাছে আসে তার মধ্যে রয়েছে- পাইলস্ বা অর্শ, ফিসার বা ফেটে যাওয়া, ফিস্টুলা বা চিরনালী ঘা, পলিপ বা নরম মাংসাবূদ, প্রলাপসাস বা ঝুলে পড়া, স্টোনোসিস বা শক্ত-সরু হয়ে পড়া, প্রুরাইটিস বা চুলকানি, প্রকটাইটিস বা প্রদাহ, কন্ডাইলোমেটা বা শক্ত আচিল, ব্লাড থ্রম্বসিস বা রক্তজমাট বদ্ধতা, আলসার বা খত, কার্সিনোমা বা ক্যানসার প্রভৃতি।
প্রশ্ন : এনাল ফিসা কি?
উত্তর : খুব সহজ বাংলায় পায়ু পথ ছিঁড়ে যাওয়াকে বলে এনাল ফিসার। এটি খুব সাধারণ একটি রোগ। সাধারণত ১২/১৪ বছর থেকে শুরু করে ৩০/৩৫ বছর বয়সীদের এই রোগ বেশি হয়। অনেক সময় শিশুদেরও হয়। বৃদ্ধ বয়সেও হয়। তবে এই বয়সে একটু বেশি হয়।
প্রশ্ন : এর লক্ষণগুলো কি ?
উত্তর : ব্যথা। এটাই প্রধান বিষয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ব্যথা তীব্র হয়। অনেক সময় রোগীরা বলেন যে- কেটে যাওয়ার মত ব্যথা। পিন দিয়ে খোঁচার মত ব্যথা। প্রথম দিকে এটি খুবই তীব্র হয়। এমন হয় যে রোগী মল ত্যাগ করতে ভয় পায়।
দেখা যায় রোগীর সাধারণ মল হচ্ছে কিন্তু হঠাৎ করে একদিন কষা হবে। তখন প্রেসার দিয়ে টয়লেট করার সময় পায়ুপথটা ছিঁড়ে যায়। এরপর থেকেই তীব্র ব্যথা শুরু হবে। এই ব্যথার কারণে রোগী টয়লেট করতে ভয় পায়। কয়েকদিন টয়লেট করে না। ফলে আরও কষা হয়। এরপর যখন আবারও টয়লেট করার চেষ্টা করে আবারও ছিঁড়ে যেতে পারে। তীব্র জ্বালা পোড়া বা চুলকানিও হতে পারে।
এছাড়া রক্তপাতও হয়। পাইলসে যেমন অনেক রক্ত যায় এখানে তেমন যাবে না। মলের সঙ্গে লেগে হালকা রক্ত যাবে।
প্রশ্ন : রক্তপাত কি কি কারণে হতে পারে?
উত্তর : পাইলস্, ফিসার, ফিস্টুলা, পলিপ, প্রলাপসাস, প্রকটাইটিস, ব্লাড থ্রম্বসিস, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন করণেই হতে পারে। তবে এনাল ফিসারের কারণে ব্যথা হবে। অন্য ক্ষেত্রে এতো তীব্র ব্যথা থাকবে না। পাইলসে কিন্তু ব্যথাই হবে না।
প্রশ্ন : চলার পথে রাস্তা-ঘাটে দেখা যায় পাইলসের বিভিন্ন চিকিৎসার চটকদার বিজ্ঞাপন। এই চিকিৎসা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
উত্তর : অনেক সুন্দর একটি প্রশ্ন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ধরণের চিকিৎসা করা বহু রোগী আমরা পাই। ওই চিকিৎসায় পায়ুপথে এসিড জাতিয় কিছু দেওয়া হয়। ফলে পায়ুপথটা সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। পায়ুপথটা কিন্তু দরজার মত। বন্ধ হয় খোলে। কিন্তু এর কারণে রোগী সারা জীবনের জন্য রোগী হয়ে যায়। এটা খুবই ভয়াবহ ব্যাপার। এসব হাতুড়ে চিকিৎসা নিয়ে জীবন নষ্ট করার কোন মানে নেই।
এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন :
এসএ/