ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় দরকার ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি

প্রকাশিত : ১৮:৫৫, ৩ মে ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৪৩, ৩ মে ২০১৯

দেশের পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় দরকার ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সে জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বড় কোম্পানিগুলোর বাজারে আসতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা কাটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবেই পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল পুনর্বিনিয়োগের উদ্যোগ ফলপ্রসু হবে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র জানায়, গত ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের প্রায় তিন বছর পর ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল নামে ৯০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করে সরকার। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের ঘটনা ঘটে। ব্যাপক দরপতনে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা দফায় দফায় বৈঠকও করে। এই দরপতনের মধ্যে ২০১৩ সালে বিশেষ সহায়তা তহবিলের অর্থ পুনর্বিনিয়োগের প্রস্তাব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণায়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সায় দিলে আগামী সপ্তাহেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এদিকে পুঁজিবাজারের সূচক পতনের বিষয়ে জাতীয় সংসদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে তাদের শঙ্কিত না হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে সব ধরনের পদক্ষেপ সরকার বাস্তবায়ন করছে। আমি বলব, খুব বেশি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা কীভাবে ঠিক করা যায়, আমি এই পার্লামেন্টে বসেই কয়েকদিন আগে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত সভা করেছি। বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি প্লেসমেন্ট শেয়ার বন্ধ এবং নতুন আর কোন আইপিও’র আবেদন গ্রহন না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে পুঁজিবাজার সম্পর্কে বলেন, এখন পুঁজিবাজারের শেয়ার বিক্রির সময় নয়। আগামী বাজেটে পুঁজিবাজার বিষয়ে কিছু না কিছু প্রণোদনা থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসির কিছু সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। বাজার সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবীদরা বলেন, শেয়ারবাজার সংক্রান্ত ইতিবাচক বক্তব্য ও বিএসইসির কিছু সিদ্ধান্তে বাজারে সাময়ীকভাবে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু তার স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন দেখবে বাজারে বড় ও ভালো কোম্পানি নেই। পুঁজিবাজারের কারসাজির কারণে তাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কোন কাজে আসছে না। তখন তারা বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে আবার সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন। ফলে দেখা যাবে বাজারে আবারও সূচকের পতন হয়েছে। তাই বাজারকে স্থিতিশীর করতে দরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও বড় বড় কোম্পানির তালিকাভুক্তি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শুধু তহবিল থেকে টাকা দিয়ে কতদিন চলবে? বাজারের স্থিতিশীলতায় দরকার ভালো কোম্পানি, ভালো  শেয়ার। পঁচা শেয়ার বাদ দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাঁচবিচার করে শেয়ার নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে সুস্থ পুঁজিবাজার থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে এবং এ বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত পর্যায় থাকলে তা পুঁজিবাজারের গতি সঞ্চারে সহায়ক হবে। তাই নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। দেশের ভালো কোম্পানির বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। সর্বপরি বাজারের স্থিতিশীলতায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নতুন ভালো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে। ভালো কোম্পানি কেন আসতে চাই না, সেই প্রতিবন্ধকতা কাটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। যে ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তিতে আইনি বাধ্যবাধকতা নেই, সে ক্ষেত্রে সমঝোতাই একমাত্র পন্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভালো কোম্পানি আনতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ভালো কোম্পানিকে ভালো প্রিমিয়াম দেয়া যেতে পারে। তবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যে প্রাইসিং হচ্ছে তা অনেক ক্ষেত্রেই যথার্থ না। এ জন্য বিএসইসিকে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এক দশক পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। অর্থাৎ এক দশকে বেসরকারি বিনিয়াগ মাত্র দুই শতাংশের মতো বেড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে তা শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বাজারে ভালো মানের কোম্পানি না থাকলে শুধু অর্থ প্রণোদনা দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা দূরহ ব্যাপার।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে ভালো কোম্পানির বিকল্প নেই। গত ৮-১০ বছরে হাতেগোনা দুই-একটি ছাড়া ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসেনি। যতদিন দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাবে, ততদিন মানুষ ব্যাংকে ছুটবে। যখন ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পাওয়া যাবে না তখন মানুষ আপনা আপনিই পুঁজিবাজারে আসবে।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ভালো কোম্পানির জন্য দুই-তিন বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা নিতে হবে। ভালো কোম্পানি আনতে যে যে সুবিধা দেয়া যায় দিতে হবে। তালিকাভুক্তির ফি প্রথম দুই বছর ছাড় দেয়া যায় কিনা দেখতে হবে। পাশাপাশি আইপিও দীর্ঘসূত্রিতা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি