ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পুলিশের সব কিছু ভেঙে পড়েছে: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৭, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

পুলিশের সব কিছু ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন  পুলিশের সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা। শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘৫৩ বছরেও পুলিশ কেনো জনবান্ধব হতে পারেনি : পুলিশ সংস্কার, কেনো? কোন পথে?’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। 

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের সব কিছু ভেঙে পড়েছে। পুলিশে মিলিটারাইজেশনের ফলে কি ক্ষতি হয়েছে সেটা সবাই দেখছেন। এখন পুলিশে মিলিটারী ব্রেন ডুকে পড়েছে। এজন্য পুলিশে সংস্কার জরুরী।

সাবেক আইজিপি বলেন, পলিটিক্যাল ভিশন না থাকলে কোন সংস্কারই কার্যকর হবে না। তাছাড়া জনগণকে সম্পৃক্ত করে পুলিশিং করলে বড় সংখ্যক পুলিশের প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া অন্য বাহিনী থেকে পুলিশের কোন ইউনিটে কাউকে আনলে তাকে অন্তত ৬ মাস পুলিশিং এর প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মতো বিভাজিত সমাজে পুলিশিং কঠিন বিষয়। পুলিশ পাবলিক সার্ভেন্ট থেকে ডমিস্টিক সার্ভেন্ট হয়ে গেছে। 

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য গোলাম রসুল বলেন, ভালো সমাজ হলে ভালো পুলিশ হবে। বিসিএস এর বাইরে পুলিশের আলাদা কমিশন করা যায় কি না, তা দেখতে হবে। প্রযুক্তি নির্ভর ফরেনসিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। পুলিশের বিষয়ে তদন্ত করতে আলাদা সাব-কমিশন লাগবে। মূল কমিশন এটি ওভারসি করবে। স্থায়ী কমিশন, গবেষণা সেল এবং আলাদা কমিশন কার্যালয় হতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, অতীতে অনেক কমিশন হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। আমাদের তিনিটি আইনে পুলিশের ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। পুলিশ ও আদালতের পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোও সংস্কারের মধ্যে আনতে হবে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আসলে আমরা সবাই ফেইল করেছি, পুলিশ একা নয়। নষ্ট লোকদের খুজে খুজে গত ১৬ বছর পদায়ন করা হতো। আমাদের দেখতে হবে আমরা সংস্কারের বিষয়ে উচ্চাকাঙ্খী হয়ে যাচ্ছি কি না। অঅর এ সংস্কার রাজনীতিকরা এলাও করে  কি না।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল হক বলেন, গত ১৬ বছর আমাদের পুলিশ এমনভাবে অ্যাক্ট করেছে যা সিনেমাতেও নেই। র‌্যাম্বো সিনেমাতেও নেই।

সাবেক ডিআইজি মেসবাহুন নবী বলেন, আমরা গত ৫৩ বছরে ভালো শাসক পাইনি, তাই ভালো পুলিশ পাইনি। এবার সুযোগ এসেছে। একে কাজে লাগাতে হবে। শুধু পুলিশ একা সয়, জাস্টিস সিস্টেমকেও বদলাতে হবে। পুলিশে যখন অন্য বাহিনীর লোকেরা এসেছে, তখন থেকেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড শুরু হয়।

সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজ ইয়াসমিন গফুর বলেন, পুলিশের কর্মঘন্টা ঠিক করা হয়নি, আইনে পুলিশ বাহিনী বলা হয়েছে। পুলিশ সার্ভিস বলা হয়নি। কমান্ডার কেমন তার উপরও নির্ভর করে কেমন পুলিশ হবে।

হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ পারভেজ বলেন, ৩৬ জুলাই এর পর পুলিশের মনোজগতেও পরিবর্তন এসেছে। একে ধরে রাখতে হবে। 

হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দূর্ভাগ্যপীড়িত জনগণ। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নতুন কিছু নাই। পুলিশ নিয়ে আমাদের সমাজে আলোচনাও হয় না। মানববন্ধনও হয় না।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, একটি বিবর্তন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৩৬ জুলাই ২০২৪ এর সৃষ্টি হয়। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হওয়ার পরিবর্তে সরকার তথা রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের অংশ হওয়ায় ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে পুলিশও জনরোষের শিকার হয়। কোনো একটি গোষ্ঠীর দাবী বা উদ্যোগের ফলে পুলিশ সংস্কার করা প্রায় অসম্ভব। পুলিশের ইতিহাস পাঠ ও পুনঃপাঠ করলেও একই সত্য উদ্ভাসিত হবে। তাই পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমত (রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও জনমত) থাকা বাঞ্চনীয়। পুলিশের যত প্রকারের সংস্কারের প্রস্তাব করা হোক না কেন ঐক্যমত ছাড়া তা বাস্তবায়ন বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুলিশ সংস্কারের যে দাবী উঠেছে তা যৌক্তিক এবং যথাযথ। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করার সময় পুলিশের অনাকাঙ্ক্ষিত বল প্রয়োগ, বিরোধী মত দমন, বেআইনীভাবে আটক এবং জনগণকে সাংবিধানিক অধিকার-ভোগ থেকে বঞ্চিত করার মতো যত অভিযোগ উত্থাপন করা হোক না কেন কাঠামোগত আইনী সংস্কার না হলে পুলিশ দুষ্টকে দমন ও শিষ্টকে সেবা প্রদানের মতো দায়িত্ব পালনে অক্ষম থাকবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সংস্কার এখন সময়ের দাবী। সর্বমহল থেকে দাবী করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত পুলিশী ব্যবস্থাপনার।

এই অবস্থায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা ও চাহিদার প্রতিফলন ঘটিয়ে পুলিশকে একটি সামাজিক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। এই চিন্তার বাস্তবায়নে অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবী মাত্র। আর তার জন্য সকলের এগিয়ে এসে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার কোন বিকল্প নাই।

অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক গোলাম রসুল, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, বিশিষ্ট দার্শনিক ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আনিসুজ্জামান, আইসিটি ইনভেস্টিগেশন এজেন্সী’র কো-অর্ডিনেটর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী, পুলিশের সাবেক ডিআইজি মেসবাহুন নবী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজ ইয়াসমিন গফুর, ফ্রন্ট পেইজ সম্পাদক সেলিম খান, সাংবাদিক আহমেদ সেলিম রেজা, আইনের শিক্ষক ড. আহমেদুজ্জামান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী জাকিয়া শিশির, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ পারভেজ এবং তারুণ্যের প্রতিনিধি সাইদ আবদুল্লাহ, সাবেক পুলিশ কন্সটেবল মান্নান প্রমূখ। এছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও নাগরিক প্রতিনিধিগণ মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। 

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি