ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশে চাকরি পেল হবিগঞ্জের হতদরিদ্র দু’বোন

প্রকাশিত : ১২:৪৭, ৮ জুলাই ২০১৯

হবিগঞ্জে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছে তিনজন। এর মধ্যে রয়েছে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা দু’বোন ও হতদরিদ্র মাটিকাটা শ্রমিকের ছেলে। এ ছাড়া দৈনিক ১০২ টাকা মজুরির চা শ্রমিকের মেয়েও প্রাথমিকভাবে মনোনিত হয়েছেন।

রোববার বিকেলে পুলিশ লাইনে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ সময় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানান মনোনিতরা। তাদের বক্তব্যে অনুষ্ঠানস্থলে আবেগঘণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই।

নিয়োগ কমিটির তথ্য থেকে জানা গেছে, বাছাই প্রক্রিয়ায় ৩ হাজার ৬৩৪ জন অংশ নিলেও মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন ২১৬ জন। আর সব প্রক্রিয়া শেষে ৯৭ জনকে প্রাথমিকভাবে মনোনিত করা হয়। এর মাঝে ৫৮ জন পুরুষ ও ৩৯ জন নারী রয়েছেন। তবে এবার পুলিশে চাকরি পাওয়াদের অধিকাংশই দরিদ্র ঘরের সন্তান।

মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে লালন পালন করতেন। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। এলাকার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে আরেক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। চরম দারিদ্রতার মাঝে কখনও খেয়ে, আবার কখনও না খেয়ে কেটেছে দিন। মাকে কিছুটা প্রশান্তি দিতে দুই বোনও মায়ের সঙ্গে কাজ করতেন। আর এমন প্রতিকূলতার মাঝেও চালিয়েছেন পড়ালেখা। স্বপ্ন দেখেছেন ভাল একটা চাকরির। এবার স্বপ্ন বুঝি সত্যি হলো। মায়ের ওষুধ কেনার টাকার আর অভাব হবেনা। এসব কথা বলেই চোখে পানি এসে যায় পুলিশে নিয়োগ পাওয়া জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামের রিমা রাণী দেব ও তার ছোট বোন রুনা রাণী দেবের।

বাবা দূর্গাচরণ দেব মারা গেছেন প্রায় ৭ বছর পূর্বে। এরপর থেকেই ৩ মেয়ে, ২ ছেলেকে নিয়ে জীবন সংগ্রামে নামেন বাসন্তি রাণী দেব। সংসার চালাতে নিজে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেন। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দেন। এবার এক সঙ্গে দুই মেয়ের চাকরি হওয়ায় আনন্দে চোখে পানি এসে যায় তার। বলছিলেন এবার বুঝি সুদিন ধরা দিয়েছে তার সংসারে।

সরকারি শিশু সদন থেকে এসএসসি পাস করা মো. শাকিল আহমেদেরও কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে। বাবা কদর আলী মারা গেছেন ২০০৪ সালে। দারিদ্রতার ঘানি টানতে সংগ্রামে নামেন তার মা রহিমা খাতুন। বাড়ি সদর উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামে। মা করতেন মাটি কাটার শ্রমিকের কাজ। অসহায় হয়ে ছেলেকে দেন সরকারি শিশু সদনে। মাঝে মাঝেই তিনি দেখতে আসতেন। তখন ছেলে বাড়ি চলে যেতে চাইলে ধমক দিয়ে রেখে যেতেন। এবার বুঝি দুঃখ ঘুচবে তার। এসব কথা বলেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন রহিমা খাতুন। তার কান্নায় অনেকেরই চোখে পানি এসে যায়।

চুনারুঘাট উপজেলার আমু চা বাগানের বাসিন্দা সাগর খাড়িয়ার মেয়ে কনিকা। বাবা দৈনিক মাত্র ১০২ টাকা মজুরীর চা শ্রমিক। এ টাকাতেই অনেক দন্যতার মাঝে সংসার চলতো। বেশ কষ্ট করে চালিয়েছে লেখাপড়া। আর স্বপ্ন দেখেছে হয়তো একদিন চাকরি হবে, বাবা মায়ের দুঃখ ঘুচাবে। সে স্বপ্ন এখন সত্যি হতে চলেছে তার। শুধুই বাবা-মায়ের দুঃখ ঘুচানো নয়, দেশের জন্যও কিছু করতে চায় কনিকা। কনস্টেবল নিয়োগের ফলাফল ঘোষণার পর তার এ স্বপ্নের কথা অকপটেই বলেছে সে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি হয়েছে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের। তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তিনি বলেন, তবে পুলিশ তদন্তে নিয়োগপ্রাপ্তদের পারিবারিক অবস্থা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। যাদের চাকরি হয়েছে তাদের অধিকাংশই অতিদরিদ্র। এত দারিদ্রতা এবং প্রতিকূলতার মাঝেও তারা এমন মেধার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি