ফল পরিচিতি
দেশীয় ফল ডেউয়ার পুষ্টিগুণ
প্রকাশিত : ১৪:১৪, ১২ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১২:৩৭, ১৬ জুন ২০১৯
গ্রাম-গাঁয়ের পরিচিত ফল ডেউয়া। এবড়ো থেবড়ো কিছুটা কাঁঠালের মতো দেখতে এ ফলটির ভেতরে হলুদ রঙের কোষ থাকে। পাকলে এই ফলটি অতি মোলায়েম হয়। ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই ফল ক্ষুধাবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। বৃষ্টির মৌসুমে ভর্তা করে খেতে খুবই সুস্বাদু এই ফল।
পরিচিতি : ইংরেজি নাম : Artocarpus lacucha (ঢেউয়া, ডেলোমাদার, ডেউফল বা ঢেউফল)। এক ধরনের টক-মিষ্টি ফল। এর সংস্কৃত নাম `লকুচ` ও হিন্দী নাম `ডেহুয়া`। ডেউয়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Artocarpus lacucha বা Artocarpus lakoocha Roxb. এবং ইংরেজি নাম- Monkey Jack । এটি মোরাসিই পরিবারভুক্ত ক্রান্তীয় চিরসবুজ বৃক্ষ। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচুর জন্মে। ডেউয়ার আদি জন্মস্থান বার্মা। বার্মায় এ ফলের নাম মাইয়াক লুয়াং। অঞ্চলভেদে এই ফল মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন : ঔষধি গুণে ভরপুর জামরুল
বর্ণনা : ডেউয়া গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট, বড় আকারের বৃক্ষ। প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়, এর ছাল ধূসর-বাদামী রঙের। গাছের ভেতর সাদাটে কষ বা আঠা থাকে। এর পাতা ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া হয়, যা অনেকটা কাকডুমুরের পাতার ন্যায়, তবে আকারে সামান্য বড়। স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা। স্ত্রী ফুল আকারে বড়, বোঁটা ছোট ও মসৃণ। এ ফুলে পাঁপড়ি নেই, ছোট গুটির মত। স্ত্রী ফুল থেকে ফল হয়। ফল কাঁঠালের ন্যায় যৌগিক বা গুচ্ছফল। বহিরাবরণ অসমান। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। ভেতরের শাঁস লালচে হলুদ। ফলের ভেতরে থাকে কাঁঠালের মত ছোট ছোট কোষ। ফল পাকে মে-জুন মাসে।
কাঁঠাল ও ডেউয়া একই গুণের অন্তর্ভুক্ত। ডেউয়ার ফুল দেখতে সাধারণ ফুলের মতো নয়, অনেকটা কাঁঠালের মোচার মতো। আসলে এই ছোট ছোট মোচা অনেক ফুলের সমষ্টি। ফলটির গা উঁচু-নিচু হয়। কাঁচা অবস্থায় টক টক স্বাদ। কিন্তু পাকলে অন্য রকম স্বাদ। সেটা টকও নয়, আবার মিষ্টিও নয়।
আরও পড়ুন : পুষ্টি ও ভেষজ গুণে গুণান্বিত পেঁপে
কিছু কিছু ফল আছে যেগুলোর খুব একটা পরিচিতি না থাকলেও তার রয়েছে অসাধারণ ভেষজ পুষ্টিগুণ। শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালেই এসব ফল বেশি পাওয়া যায়। এ রকম ফলের মধ্যে ডেউয়া হল অন্যতম।
যা আছে ডেউয়াতে : ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের আঁধার বলা হয় ডেউয়া ফলকে। এগুলো ছাড়াও ডেউয়া ফলে রয়েছে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডেউয়া ফলের প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে-
খনিজ ০.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৭ গ্রাম, শর্করা ১৩.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৩৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৪৮.৩৩ মিলিগ্রাম।
আরও পড়ুন : হলদে-ধূসর পাখি ফুটফুটি (ভিডিও)
ডেউয়া ফলের উপকারিতা : দেখতে অদ্ভুত ও খেতে টক-মিষ্টি ডেউয়া ফল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি এর রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণও।
অনিয়ন্ত্রিত ওজন এ সময়ের একটা বড় সমস্যা। অথচ ঠাণ্ডা পানিতে ডেউয়া ফলের রস মিশিয়ে নিয়মিত পান করলেই আমরা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। এমনকি ডেউয়া ফল রোদে শুকিয়ে নিয়ে অফ সিজনেও খাওয়া যায়।
মুখের রুচি ফেরাতে খেতে পারেন এই ফল। ডেউয়া ফলের রসের সঙ্গে সামান্য লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে হবে। সপ্তাহ না পেরুতেই মুখে রুচি ফিরে আসবে।
পেট পরিষ্কার না থাকলে সারাদিন কাটে অস্বস্তিতে। পেটের গণ্ডগোল থেকে রেহাই পেতে সকালে খালি পেটে খান কাঁচা ডেউয়া। এজন্য গরম পানির সঙ্গে কাঁচা ডেউয়া বাটা মিশিয়ে নিবেন।
আরও পড়ুন : সাত রংয়ের সমাহারে বর্ণিল ‘সুমচা’
এই ফলে বিদ্যমান ভিটামিন সি ত্বক, চুল ও দাঁতের নানা রোগ প্রতিরোধ করে। আর ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। এর পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
কোনো কারণে বমি বমি ভাব অনুভব হলে ডেউয়া খেলে দ্রুত সেরে যায়। অত্যাধিক তৃষ্ণা নিবারণে কাজ করে টক জাতীয় এই ফল। ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে মসৃণ ভাব ফিরিয়ে আনে। অর্থাৎ শরীরের শুষ্কভাব দূর করে। ডেউয়া খেলে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে। মরিচ, লবণ, চিনি দিয়ে ডেউয়ার ভর্তা খেলে সানস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
তথ্যসূত্র : এটিএম নাছিমুজ্জামানের ফল পরিচিতি গ্রন্থ এবং ইন্টারনেট।
এএইচ/