পূর্ণাঙ্গ কোনো অভিধানই নেই বাংলা ভাষায় (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:০৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৪:৪৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গেলো ৫ দশকে বাংলা ভাষায় আত্মীকরণ করেছে অসংখ্য শব্দ। তবে ঠিক কত শব্দ অভিধানে স্থান পেয়েছে, কি উপায়েই বা এসেছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই খোদ বাংলা একাডেমীর কাছেই। অভিধান সম্পাদকরা বলছেন, বাংলা ভাষায় পূর্ণাঙ্গ কোনো অভিধানই নেই।
নদীর মতোই প্রবাহমান ভাষা। সব ভাষাতেই নতুন নতুন শব্দ যোগ হচ্ছে আবার হারিয়েও যাচ্ছে। বাংলাও এর ব্যতিক্রম নয়। মুক্ত অর্থনীতির এই যুগে সারাবিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। আনছে নতুন শব্দ, এগুলো আবার যুক্ত হচ্ছে বাংলায়।
নতুন শব্দ যোগ হয় সাধারণত লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকের লেখনি কিংবা কোন ঘটনার মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই যুক্ত করেছেন প্রায় ৩০ হাজার শব্দ। কাজী নজরুল ইসলামের কলমে এসেছে ১০ হাজার শব্দ। এছাড়া বিভিন্ন লেখকের লেখনিতেও প্রচুর শব্দ যুক্ত হয়েছে বাংলায়। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শব্দটিও বাংলায় যুক্ত করেছেন এক সাংবাদিক।
বিশ্ব সমাদৃত অক্সেফোর্ড ডিকশনারীও ইংরেজিতে নতুন শব্দ যোগ করে। তবে তা সাধারণত এক দশক মানুষের মুখে ব্যবহার ও কার্যকারিতা থাকতে হয়। নতুন সংস্করণে থাকে নুতন গ্রহণ করা শব্দের অর্থ, উৎপত্তি, ব্যাকরণগত অবস্থান। আর মানুষকে জানানোর জন্য থাকে নানা ব্যবস্থা।
তবে বাংলায় বিজ্ঞান ভিত্তিক এরকম কোনো নিয়ম নেই বলে জানালেন বাংলা অভিধান সম্পাদকরাই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. স্বরোচিষ সরকার বলেন, ‘আমার পরিমার্জিত সংস্করণের সময়ে কিছু শব্দ যোগ করেছি। যেসব শব্দ যোগ করেছি তাও সাহিত্য থেকে। কোন একটা জরিপ করার সুযোগ বা অবকাশ আমাদের ছিল না। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এমন কোন অভিধান তৈরি হয়নি যা সমকালিন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংগ্রহ করে উপস্থাপন করে। আধুনিক বাংলা অভিধান যেটি আছে সেটিও আসলে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংগ্রহ করা হয়নি।’
বাংলা একাডেমির অভিধান সংকলন ও পুনঃমুদ্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি সংস্করণে নতুন শব্দ যোগ হলেও এর বুৎপত্তি, ব্যবহার ও ব্যাকরণগত অবস্থান লেখা থাকেনা।
বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা মনি হায়দার বলেন, ‘একটা শব্দ কেন এখানে যুক্ত হল, এর যৌক্তিকতা কোথায়, এর ব্যাকরণটা কি, এর ঐতিহাসিক বা ইতিহাসগত ভিত্তি কি, কিভাবে শব্দটি এখানে আসল, কোন ভাষা থেকে আসলো- এ রকম একটি গবেষণা সেল থাকা উচিত।’
একাডেমির মহাপরিচালক বলছেন, নতুন শব্দ যোগ করার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি এখন পর্যন্ত কোন প্রামাণ্য নীতি অনুসরণ করে না।
বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক নুরুল হুদা বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের যে আন্দোলনগুলো হচ্ছিল, সেগুলোতে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, সব আন্দোলন থেকেই নতুন নতুন শব্দ চলে এসেছে। আমার জানা মতে, এই ধরনের পরিপূর্ণ গবেষণা এখনও কোথাও হয়নি। এটা গবেষণা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালগুলো, বিশেষ করে ভাষা ইনস্টিটিউটে এটা হতে পারে। বাংলা একাডেমিরও একটা দায়িত্ব আছে।’
নতুন শব্দ অভিধানে সংযোজনের বিষয়টি যেমন গবেষণার দাবি রাখে তেমনি নিয়ম ও নীতিমালা তৈরিও আবশ্যক।
এএইচ/