পূর্ব প্রস্তুতির ফলে ‘ফণী’র আঘাতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ কম
প্রকাশিত : ২২:০২, ৪ মে ২০১৯
১৯টি উপকূলীয় জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা,৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুতসহ আইনশৃক্ষলা বাহিনী এবং আবহাওয়া অফিসের তৎপরতার কারনে ঘূর্ণীঝড় ফণীর আঘাতে ক্ষয় ক্ষতি কম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যন্ত সারা দেশে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া কিছু জায়গায় ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলেও জানা যায়। তবে পূর্ব থেকে মানুষকে সচেতন করায় বেশিরভাগ উপকূলবর্তী মানুষ নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণ করে।
এদিকে ‘ফণী’র বিপদ কেটে যাওয়া এবং জানমালের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী কর্মব্যস্ত সময়ের মধ্যেও ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক পরিস্থিতি এবং তা মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন।
শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর শুকরিয়া জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন। সভায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর দুর্যোগ মোকাবেলায় গৃহীত প্রস্তুতির বিষয়েও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ দুর্বল হয়ে শনিবার সকালে ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি স্থলপথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের যশোর-সাতক্ষীরা জেলা অতিক্রমের সময় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।
সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষকে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে আসার জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ এসব এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো, বিশেষ করে সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতার প্রশংসা করা হয়। এছাড়া, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার-ভিডিপিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গৃহীত কার্যক্রমেরও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
সভায় বিশ্বপরিমণ্ডলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল হিসেবে খ্যাত যেকোনো দুর্যোগকালে বাংলাদেশ সরকারের সব সংস্থার সমন্বিতভাবে কাজ করার যে কৃষ্টি তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় করতে গুরুত্বারোপ করা হয়।
সভায় মুখ্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতে জাতির যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কারণে আগাম তথ্য পেয়েছিলো বিধায় আমাদের সরকার ও দলীয়ভাবে ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি আমরা। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে দলীয় মনিটরিং সেলের কর্মকাণ্ড ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী’র বিপদ কেটে গেছে। দেশের সকল সমুদ্রবন্দরের সতর্ক সংকেত কমিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। শনিবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ তথ্য জানান।
এনামুর রহমান বলেন, আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। ফণীর বিপদ কেটে গেছে। তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের কোনও সমস্যা হবে না।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে গেছে। ঘূর্ণিঝড়টি এখন স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সেজন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন বিকালের মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। তাদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে এর বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
###
আরও পড়ুন