ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

রম্য রচনা

পৃথিবীটা ঘুরছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আতিক সাহেবের একমাত্র ছেলে গুড্ডু। একটু মোটা তাজা বলে সবাই আদর করে গুড্ডু বলেই ডাকে। গেলো সোমবার তার সাত বছর সমাপ্তির কেক কাটলো। ছেলেটার বুদ্ধি হবার পর থেকে আতিক সাহেবকে বেশ বিরক্ত করা শুরু করেছে। ছেলে বাবাকে বিরক্ত করবে এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু বিরক্তির ধরণ যদি অসহনীয় পর্যায়ের হয় তাহলে সেটা হজম করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সে তার বাবা-মায়ের মাঝখান ছাড়া ঘুমাবে না। সে কখন ঘুমে থাকে কখন জেগে থাকে তা অনুমান করা কঠিন।    

একদিন গভীর রাতে তার মনে হলো বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে। বাবাকে জড়িয়ে ধরতে হাত বাড়াল। বুঝল বাবা বিছানায় নেই। উল্টে মায়ের দিকে হাত বাড়াল। দেখল মাও বিছানায় নেই। বিছানায় উঠে বসে গুড্ডু। তাদের খুঁজতে যাবে এমন সময় বাবা-মা এসে দেখেন সে বিছানায় বসে আছে। রাগে-ক্ষোভে প্রশ্ন ছোড়ে দেয় গুড্ডু, ‘‘তোমরা আমাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলে?” গুড্ডুর বাবা-মার বুদ্ধি লোপ পায়। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে ভাবতে হয়। ভাবার উত্তরের মধ্যে গুড্ডুর প্রশ্নটাও পড়ে।

গুড্ডুর বাবা ছেলেকে বললেন, বাবা, ‘‘বাসায় মনে হলো, চোর দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। তাই আমরা চোর তাড়াতে গিয়েছিলাম।” গুড্ডু এ উত্তরে খুব একটা আশ্বস্ত না হলেও বলে, ‘‘আমাকে নিয়ে গেলে না কোনো? কতদিনের সখ আমার চোর দেখার।’ অন্যদিন যাবো বাবা, এখন ঘুমাও। বাবা-মা একে অপরের মুখপানে চেয়ে থাকেন। একটা আতঙ্কের ছাপ দুজনের চেহারায়। বিপদ থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। তারা চাপা আতঙ্ক নিয়ে যথাস্থানে গিয়ে গুড্ডুকে আদর করে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেন।

একদিন গুড্ডুকে যখন তার বাবা পড়াচ্ছিলেন তখন হঠাৎ করেই গুড্ডু তার বাবাকে প্রশ্ন করে, ‘‘আচ্ছা বাবা, সূর্য কি অস্ত যায়?” বাবা বিলম্ব না করেই উত্তর দেন, ‘‘এটা কোনো প্র্শ্ন হলো। সূর্য অস্ত যাবে এটাই তো পৃথিবীর নিয়ম, সবাই জানে এ কথা।” কিন্তু গুড্ডু মানতে চায় না। চেচিয়ে গুড্ডু বলে, না বাবা, সূর্য কোথাও যায় না, সে ঠিক স্থানেই থাকে। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে।” বাবা কোনভাবে বুঝাতে পারেন না যে, সূর্য অস্ত যায়। বাবা বললেন, তোকে আগামী সপ্তাহের ছুটিতেই কক্সবাজার নিয়ে যাবো, দেখিস কেমন করে সূর্য অস্ত যায়, তোকে আমি চাক্ষুস দেখিয়ে দেবো। গুড্ডু মুখ ভেংচিয়ে বলে, কক্সবাজার কেনো? পৃথিবীর সব দেশে আমাকে নিয়ে গেলেও সূর্য অস্ত যায় দেখাতে পারবে না।

আতিক সাহেব এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গেলেন গু্ড্ডুকে। সূর্যাস্তের আগে আগেই পৌঁছে গেলেন সৈকতে। গুড্ডুকে দেখাচ্ছেন সূর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য। আতিক সাহেব খুশী হয়ে বললেন, কি বাবা, এবার দেখলে তো কি করে সূর্য অস্ত যায়?” গুড্ডু বলে, অস্ত যায় না বাবা, পৃথিবী ঘোরে।” আতিক সাহেব ছেলের কথায় বিরক্তির চরম স্তরে পৌছান। গুড্ডুকে কোনোভাবেই বুঝাতে পারেন না। তার একটাই কথা সূর্য অস্ত যায় না পৃথিবী ঘোরে। সে এবার পৃথিবী ঘোরাটা দেখতে চায়। আতিক সাহেব কল্পনায় ফিরে যান তার ছোটবেলায়। আতিক সাহেবের বাবা মাঝে মাঝে তার দুহাতে ধরে কেমন করে শুন্যে তুলে ঘুরাতেন। ঘুরাতে ঘুরাতে একসময় দাঁড় করিয়ে রেখে দিতেন। তখন মনে হতো হ্যা সত্যি সত্যি পৃথিবীটা তো ঘুরছে। কাল-বিলম্ব না করে তিনি গুড্ডুকে দুহাতে ধরে শুন্যে তুলে ঘুরাতে লাগলেন। তাকে নিয়ে বেশ কিছুটা বেশিই চক্কর দিয়ে হঠাৎ ছেড়ে দেন। গুড্ডু ঘুরতে ঘুরতে বেশ জোরেই বলতে থাকে, “এই তো আমি যা বলেছিলাম বাবা, পৃথিবী ঘোরে সত্যি সত্যি ঘুরে”।

এসি 

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি