ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

প্রতারকের গ্রাম: কুঁড়েঘর এখন দোতলা-তিনতলা দালান (ভিডিও)

আতিক রহমান পূর্ণিয়া, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৮, ১১ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ১২:১৯, ১১ এপ্রিল ২০২২

Ekushey Television Ltd.

কয়েকদিন আগের কুঁড়েঘর এখন দোতলা-তিনতলা দালান। টয়লেটে লেগেছে বাথটাব। কৃষিকাজ, মাছ ধরা কিংবা মজুরের কাজ ছেড়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে তারা এখন লাখপতি। ফরিদপুরের ডুমাইন গ্রামের এমন বদলে যাওয়ার চিত্র। 

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন গ্রাম, এক দশক আগেও এখানে ইটের বাড়ি খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিলো। এখন কুঁড়ে ঘর পাওয়াই দায়।

এক সময় ডুমাইন গ্রামের মানুষের মূল পেশা ছিল কৃষিকাজ, মাছ ধরা আর দিন মজুরি। পল্লাত বৈড়াগী, ছিলেন দিনমুজুর। কিন্তু কয়েক বছরেই পাল্টে গেছে পল্লাতের জীবন-যাপন। কী এমন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে কুঁড়ে ঘরটি দুই বছরে হয়েছে তিন তলা বাড়ি? জানালেন পল্লাতের প্রতিবেশি।

প্রতিবেশিরা জানান, “আগে চাষাবাদ করত, এখন বড়লোক।”

পাকা বাড়ি বানালেও সেখানে ঘুমাতে পারেন না মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় অভিযুক্ত পল্লাত। এক রাতে পুলিশ ধরতে এলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে গ্রেফতার এড়িয়েছিলেন।

গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় অভিযুক্ত মিঠুন বাড়ি ছাড়া। তারও এই ইটের বাড়ি হয়েছিল রাতিরাতি।

এক প্রতিবেশি জানান, “আগে কম-বেশি সবাই জড়িত ছিল, এখন নেই।”

বিকাশ প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার পেশা কী? সে নিরদ্বিধায় বলে ‘টোপের ব্যবসা’। টোপের ব্যবসা মানে হচ্ছে বিকাশের গ্রাহককে নানা কৌশলে টোপে ফেলে তার টাকাপয়সা নিজের পকেটে নিয়ে আসা। আশ্চর্য হলেও সত্যি এভাবেই ভয়ঙ্কর প্রতারণার জাল তৈরি হয়েছে পুরো গ্রাম জুড়ে।

এই গ্রামের নতুন কেউ এসেছে শুনলে বেশিরভাগ ঘর তালাবদ্ধ থাকে, নয়তো বাইরে থেকে বন্ধ।

স্থানীয়দের কাছে এ কৌশলের নাম টোপের ব্যবসা।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, “মোবাইলে ফোন দিয়ে নানা কিছু বলার পরে গ্রাহকরা টাকা দিয়ে দেয়।”

ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খুরশেদ আলম মাসুম বলেন, “এলাকার ৩০-৩৫ শতাংশ লোক আঙ্গুল ফুলে গলাগাছ হয়েছে।”

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে সারাদেশে প্রতারক চক্র হিসেবে স্বীকৃত একটি গ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে আমরা থানা-পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছি এদেরকে নিবৃত্ত করতে। ভবিষ্যতে যাতে নতুন করে কেউ না জড়ায় এবং যারা আছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”

কোনও বৈধ আয় নেই। তবুও গ্রামের প্রায় সব যুবকের আছে ৪-৫ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল। যুবকদের বেশিরভাগই মোবাইল প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাননা কেউ। 

গ্রামের সাধারণ মানুষ কেউ অপরাধীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস পান না।

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ফরিদপুরের ডুমাইন গ্রামটি শিক্ষিত ও একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এই গ্রামের দেড়শ’ মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার সাথে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি অশিক্ষা, মাদক এবং লোভে পড়ে এই এলাকার বখে যাওয়া তরুণদের কারণে গ্রামটি এখন সারাদেশে প্রতারকের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি