প্রতিশ্রুতির কয়েক ঘণ্টা পরই বাগমারায় নির্বাচনী সহিংসতা
প্রকাশিত : ০৮:৩৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এবং পুলিশ সুপারের মধ্যস্থতায় কোনো প্রকার সহিংসতা না করার প্রতিশ্রুতি দেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি ও আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরই উভয়পক্ষ সহিংসতায় জড়িয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের তিনটি নির্বাচনী অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এবং তিনজন কর্মীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালানোয় তিনজনকে পিটিয়ে জখম করেছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। উপজেলার পাহাড়পুর ও বালানগর গ্রামে পৃথক দুই ঘটনায় আহত তিনজনকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার পাহাড়পুর গ্রামের রজনী কান্ত (৩৮) ও অজিত কুমার (৪০) এবং বালানগর গ্রামের লুৎফর রহমান (৫৬)। এদের মধ্যে রজনী কান্তের মাথা ফেটে গেছে আর অজিত কুমারের বাম হাত ভেঙে গেছে।
মঙ্গলবার রাতে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী এনামুল হক। এ সময় তিনি আহতদের চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।
আহত লুৎফর রহমান জানান, সকাল ১০টার দিকে বালানগর মোড়ে কাঁচি প্রতীকের ব্যানার লাগিয়ে একটা চায়ের স্টলে কেবল বসেছি। এ সময় নৌকার কয়েকজন কর্মী এসে আমাকে টেনে বের করে মার শুরু করে। আমি পড়ে গেলে তারা পা দিয়ে আমার বুকে পেটে লাথি মারা। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
রজনী কান্ত জানান, ভবনীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মালেক বিকাল থেকে পাহাড়পুর গ্রামে কাঁচি প্রতীকের পক্ষে প্রচার চালায়। আমরা তার সঙ্গে ছিলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে বিদায় করে দিয়ে একটি চায়ের দোকানে কেবল ঢুকতে গেছি। এ সময় নৌকার কিছু সমর্থক এসে আমাদের লাঠি দিয়ে পিটানো শুরু করে। এতে আমার মাথা ফেটে যায় এবং অজিতের হাত ভেঙে যায়। এ অবস্থায় আমরা দৌড় দিয়ে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করি। পরে পরিবারের লোকজন তাদের উদ্ধার করে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
দুই কর্মীকে পেটানোর খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে তাদের হাসপাতালে দেখতে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক এমপি। তিনি বলেন, এ দুটি ঘটনায় রাতেই থানায় অভিযোগ দেওয়া হবে। আমি এসব ঘটনার বিচার দাবি করছি প্রশাসনের কাছে।
এনামুল হক আরও বলেন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ শান্ত বাগমারাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। যখন তখন যত্রতত্র আমার লোকজনকে পেটাচ্ছে। তবে বাগমারাবাসী এসকল নির্যাতনের জবাব দেবে আগামী ৭ জানুয়ারী ব্যালটের মাধ্যমে। আমি শুধু ধৈর্য্য ধরে যাচ্ছি আর প্রশাসনের কাছে বিচার দিচ্ছি।
তিনি বলেন, কালামের সন্ত্রাসীরা এখন পর্যন্ত আমার ২৬টি নির্বাচনী অফি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। উপজেলার ২৭ স্থানে কাঁচির কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের ৪৮ জন নেতাকর্মী।
বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক আরও বলেন, সোমবার বিকেলে সহকারি রিটানিং অফিসারের দপ্তরের জেলা রিটার্নিং অফিসার শামীম আহমেদ আমাদের দুই প্রার্থীকে ডেকেছিলেন। সেখানে জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমানসহ সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কালাম অঙ্গীকার করেছিলেন বাগমারায় আর কোনো সহিংসতা হবে না; কিন্তু কালাম কথা রাখেনি। রাতে আমার তিনটি নির্বাচনী অফিস আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরের দিন তিনজন কর্মীকে পেটানো হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, গভীর রাতে কে কার অফিসে আগুন দিয়েছে তা বলতে পারছি না। তবে আমার লোকজন এটা করেনি। এছাড়াও তিন কর্মীকে পেটানোর ঘটনার সঙ্গেও আমার লোকজন জড়িত না।
বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, বাগমারায় নির্বাচন কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ঘটেছে সেগুলোর অভিযোগ তদন্ত করে এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, তিনটি নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া ও পৃথক দুটি ঘটনায় তিনজনকে মারপিট করার ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের প্রতিনিধির অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তিনটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, সোমবার এই আসনের প্রধান দুই প্রার্থীকে আমরা ডেকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছি। এরপরও যদি কেউ সতর্ক ও সংযমী না হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এই আসে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা তিনবারের এমপি এনামুল হক (কাঁচি), তাহেরপুর পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ (নৌকা), উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব (নাঙ্গল), বিএনএমের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম রায়হান, এনপিপির জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবুল হোসেন।
এএইচ
আরও পড়ুন