পাঁচ লাখ তরুণকে ফ্রি প্রশিক্ষণ
প্রশিক্ষণে-ই মিলবে চাকরি
প্রকাশিত : ১৮:০৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:২৩, ১৯ অক্টোবর ২০১৭
সারাদেশে ৫ লাখ দুই হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাাম বা সেইপ প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৯টি সেক্টরে ১৩০-এর বেশি ট্রেডে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)। সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের দেওয়া হবে ভাতা ও সনদ। চাকরির ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হবে। অন্তত ৭০ ভাগ সফল প্রশিক্ষণার্থী চাকরি পাবেন। নিজেকে আগামীর চ্যালেঞ্জর মোকাবেলায় তৈরি করতে চাইলে প্রস্তুতি শুরু করুন এখন থেকেই। আবেদন করুন, আর নিয়ে নিন হাতে কলমের এই প্রশিক্ষণ।
যেসব খাত ও বিষয়ে প্রশিক্ষণ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯টি সেক্টওে ১৩০ এর বেশি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল : মার্চেন্ডাইজিং, মিড-লেভেল সুপারভাইজর, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং, ওভেন মেশিন ও নিট মেশিন চালনা, মাননিয়ন্ত্রণ ও টেক্সটাইল টেস্টিং, ফায়ার সেফটি অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স, উইভিং টেকনোলজি ও নিটিং টেকনোলজি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি : গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। নির্মাণ শিল্প : ম্যাসনারি, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং, রড বাইন্ডিং অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেশন। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং : রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মেশিন টুলস অপারেশন, লেদ মেশিন পরিচালনা, অটোমোবাইল মেকানিক, মোবাইল সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স। চামড়া ও পাদুকা শিল্প : সেলাই পরিচালনা, কাটিং অপারেশন, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস। জাহাজ নির্মাণ শিল্প : ওয়েল্ডিং ও সিএনসি মেশিন অপারেশন। অ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিং : প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং আপগ্রেডিং, উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল ও টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি : ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস ও হাউসকিপিং। এছাড়া নার্সিং টেকনোলজির কোর্সও করানো হবে। যদিও এর বিষয় এখনও নির্ধারিত হয়নি।
যাদের জন্য প্রশিক্ষণ
সমাজের অনগ্রসর যুব স¤প্রদায়, বেকার অথবা মিড-লেভেলের কর্মকর্তা বা সুপারভাইজর, যারা প্রশিক্ষণ পেলে আরও দক্ষ হতে পারবেন- তাদের জন্য এ প্রশিক্ষণ। এছাড়া যাদের কাজ করার মানসিকতা, শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে অথচ বেকার- এমন তরুণ-তরুণীরাও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। প্রকল্পের নিয়ম অনুসারে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পেতে সহায়তা করা হবে। ভাতাসহ বিশেষ বৃত্তি পাবেন দরিদ্র, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী, প্রতিবন্ধীসহ সুবিধাবঞ্চিত প্রশিক্ষণার্থীরা। এখানে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ১,২৮,৩৮৮ জনকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ৫১,৩৭৭ জন। বিভিন্ন সেক্টরে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে ৮৫,৮১৩ জনের। বাকীদের ক্রমান্বয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আবেদন যোগ্যতা
সেইপ প্রকল্পের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, মার্চেন্ডাইজিং, মিড-লেভেল সুপারভাইজার, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে ভর্তির যোগ্যতা ¯œাতক। অষ্টম থেকে এসএসসি পাস হলেই ভর্তি হওয়া যাবে ওভেন মেশিন ও নিট মেশিন চালনা, মাননিয়ন্ত্রণ এবং টেক্সটাইল টেস্টিং, ফায়ার সফটি অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স, উইভিং টেকনোলজি ও নিটিং টেকনোলজি কোর্সে। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে কোর্সভেদে ভর্তির যোগ্যতা এসএসসি থেকে ¯œাতক। অষ্টম শ্রেণি পাস হলেই রাজমিস্ত্রি, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং, রড বাইন্ডিং অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে। রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মেশিন টুলস অপারেশন, লেদ মেশিন পরিচালনা, অটোমোবাইল মেকানিক, মোবাইল সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, সেলাই পরিচালনা, কাটিং অপারেশন, ওয়েল্ডিং, সিএনজি মেশিন অপারেশন প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে অষ্টম থেকে এইচএসসি পাস হলেই। এসএসসি পাস হলে প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং আপগ্রেডিং, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস ও হাউসকিপিং বিষয়ে।
যেখানে মিলবে প্রশিক্ষণ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ দেবে কারিগরি শিক্ষা অধিফতরের বরিশাল, রংপুর, শেরপুর, নরসিংদী, ঝালকাঠি, মানিকগঞ্জ ও হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ফেনী। প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম; বাংলাদেশ জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা ট্রেনিং সেন্টার, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি)। এছাড়া বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিজিএমইএ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইআইওএ), অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ (এইওএসআইবি), লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এলএফএমইএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসিও), বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বিএপিএ) দেবে প্রশিক্ষণ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এসএমই বিভাগ এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের আউটসোর্সকৃত সহযোগী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান; আর মিড-লেভেলের কর্মীদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশিক্ষণ দেবে।
যেভাবে আবেদন
আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন সেইপের www.seip-fd.gov.bd -এ ওয়েবসাইট থেকে। যেকোনো সময় প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন। আর বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন সেইপ প্রকল্পের মনোনীত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। যোগাযোগের ঠিকানা- স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ৭১-৭২, ইস্কাটন গার্ডেন, রমনা, ঢাকা। চাইলে ফোন করতে পারেন এই নম্বরগুলোতে- ০২-৫৫১৩৮৫৯৮-৯, ৫৫১৩৮৭৫৩।
সময়কাল
জুলাই ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। চলবে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পারেন।
মিলবে ভাতা ও চাকরি
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য দেওয়া হয়ে থাকে ভাতা। এর জন্য কমপক্ষে ৮০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হয়। মাসিক তিন হাজার টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। কোর্সভেদে এক মাসের জন্য তিন হাজার, দুই মাসের জন্য ছয় হাজার, তিন মাস মেয়াদের জন্য ৯ হাজার ও ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ১৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ শেষ করা মোট ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণপ্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া যাঁরা ব্যবসা বা নিজেই কিছু করতে চান, তাঁদেরও সহায়তা করা হয়। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ সনদ দেওয়া হয়। তাই শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রয়েছে কাজের সুযোগ। এ ছাড়া শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের দক্ষতার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়ায় তারা উচ্চতর পদে বেশি বেতনে চাকরি পাচ্ছে।
যোগাযোগ
প্রশিক্ষণের সব তথ্য পাওয়া যাবে প্রকল্প কার্যালয় থেকে। তবে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করতে হবে সেইপ প্রকল্পের মনোনীত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বিভিন্ন সময় কোর্সে ভর্তির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ), অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ৭১-৭২, ইস্কাটন গার্ডেন, রমনা, ঢাকা-১০০০। ফোন : ০২-৫৫১৩৮৫৯৮-৯, ৫৫১৩৮৭৫৩ ওয়েব :www.seip-fd.gov.bd।
আরও পড়ুন