ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘প্রশ্নফাঁস ঠেকানো যেতে পারে প্রশ্নব্যাংকে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৪৬, ১ মার্চ ২০১৮

অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ

অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ

একসময় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যেতো। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এখন তো সেটি আরও ব্যাপকতা পেয়েছে। এইচএসসি-এসএসসির পর প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনাও ঘটছে। প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের রাতেই প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে হুমকির মুখে এমনকি বিপর‌্যয়ে ফেলে দিচ্ছে এ প্রশ্নফাঁস।

গত একমাসজুড়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় জায়গাজুড়ে স্থান পেয়েছে এসএসসিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর। এ নিয়ে তুমুল বির্তক চলছে দেশজুড়ে। একের পর এক প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। এ থেকে উত্তরণে ওপেন বুক এক্সামের প্রস্তাব করেছেন শিক্ষাসচিব। কেউ কেউ বলছেন, সব পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো দরকার। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অনেকেই বলছেন শিক্ষকদের তৈরি না করে শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি সংযোজন করায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। যার কারণে বাধ্য হয়ে কোচিংয়ের ধারস্থ হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাই সৃজনশীল পদ্ধতিকে আদর্শ শিক্ষাপদ্ধতি মানতে নারাজ বহু শিক্ষাবিদ।  

এছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ার কারণে একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে শিক্ষার্থী, চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর ৩ থেকে ৪ বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। করতে হচ্ছে কোচিংও। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলতটা আসলে কোথায়? এর সুলোক সন্ধানে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের। তিনি মনে করেন, আমাদের শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। শিক্ষা ব্যবস্থায় ও পদ্ধতিতে হুটহাট পরিবর্তন না এনে চাই সুপরিকল্পিত ও টেকসই পদ্ধতির প্রয়োগ। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষাটা পাবে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে প্রশ্নব্যাংক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো যেতে পারে। দেশের প্রথিতযশা এ শিক্ষাবিদের পূর্নাঙ্গ সাক্ষাতকারটি পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কী কারণে বারবার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটছে বলে আপানি মনে করেন?

অধ্যাপক কায়কোবাদ:  এখন নিয়মিতভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অর্থ হচ্ছে আমরা এ ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে পারছি না। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে পরীক্ষার হলে পৌঁছানো পর্যন্ত যে পদ্ধতিটা আমরা অনুস্মরণ করি, সেই পদ্ধতিতে সম্ভবত অনেকেই প্রশ্নপত্র দেখার সুযোগ পান। যেমন সচিব মহোদয় এরইমধ্যে বলেছেন প্রশ্নপত্র পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ২৫০ থেকে ২৬০ জন মানুষ সেটা দেখতে পারেন।

এখানে আমার কথা হচ্ছে একটা গোপনীয় জিনিস এতো মানুষ দেখতে পারলে তো হবে না। এটা আমাদের আগে থেকেই বোঝা উচিত ছিল যে, এ রকম একটা গোপনীয় জিনিসি দেখতে পারবে কী না?

প্রশ্নপত্র ফাঁস মানে এই নয় যে, সব প্রশ্ন ফাঁস হতে হবে। আমি যদি শিক্ষার্থীকে একটি প্রশ্নও বলে দিই তবে সেটাও কিন্তু ফাঁস। এটাকে এভাবেই দেখতে হবে।

আবার প্রশ্নপত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার ক্ষেত্রে যার উপস্থিত থাকার কথা তিনি অনেক সময় থাকেনও না। যেটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য না। তার মানে আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রশ্নফাঁস রোধে পরীক্ষা পদ্ধতিটা আসলে কেমন হওয়া উচিত?

অধ্যাপক কায়কোবাদ:  আমরা কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত একটা সমাধান খুঁজি। যেমন শুনলাম পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখা হবে। কম গতির ইন্টারনেট থাকবে। ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।

আমাদের দেশে আইনের সংখ্যা তো কম নেই। কিন্তু আইনের বাস্তবায়নের দূর্বলতা আছে। প্রশ্ন তৈরি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নেওয়া পর্যন্ত সময়টা কমানো যায় কি না ভেবে দেখতে হবে।

এছাড়া প্রশ্নব্যাংকও করা যেতে পারে। যেখান থেকে খুব কম সময়ে প্রশ্ন যাচাই করে পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রশ্ন ব্যাংকের এমন পদ্ধতি থাকতে হবে যেখানে একটি পছন্দ করলে দ্বিতীয়বার সেটি পছন্দ করার সুযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে একই প্রশ্ন বারবার আসবে না। তাতে ফাঁসের সুযোগটাও কমে আসবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি কিভাবে দেখছেন? 

অধ্যাপক কায়কোবাদ:  সৃজনশীল প্রশ্নে ছাত্র এবং অভিভাবক উভয়ই অসহায়। শিক্ষকদের অবস্থাও তাই। কথা হচ্ছে আমাদের সময় তো সৃজনশীল ছিল না। তবে কী আমরা সৃজনশীল ছিলাম না। সৃজনশীল হওয়াতে তো বাধা নেই। এখন সৃজনশীলতার নামে এভাবেই যে প্রশ্ন করে যেতে হবে তার তো মানে হয় না।

সৃজনশীলতার নামে যে প্রশ্ন করা হয় সেগুলো অনেক সময় মূল্যবোধ সম্পন্ন হয় না। সুতরাং এখানেও ভাববার বিষয় আছে যে, আমরা সৃজনশীল প্রশ্ন করলাম কিন্তু শিক্ষকদের সেভাবে তৈরি করলাম না। শিক্ষকদের আগে থেকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ভিতরে আস্থা এনে এ কাজগুলো করা উচিত ছিল। আমার মনে হয় সেখানেও কিছুটা ঘাটতি আছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: জনসংখ্যার বোনাস যুগ অতিবাহিত করছে দেশ। অথচ সরকারি হিসেবে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি। দেশের এই বিশাল জনশক্তিকে কেন কাজে লাগাতে পারছি না? মূল সমস্যা ও সমাধান কোথায়? কেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রি নেওয়ার পরও চাকরি মিলছে না?

অধ্যাপক কায়কোবাদ: আমাদের দেশে একমাত্র উদৃত্ত সম্পদ হলো মানুষ। এ মানুষগুলো শুধু নিজের দেশের কাজই করবে না। অন্য দেশের কাজও করতে হবে। কিন্তু তারা যে কাজ করবে সেই মানের শিক্ষা তাদের দেওয়া হচ্ছে না। স্কুল পর্যায় থেকে স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব গড়ে উঠছে না।

আমাদের দেশে জনঘনত্ব পৃথিবীর গড় জনঘনত্বের ২৪ গুণ বেশি। এর অর্থ হলো আমরা সংখ্যায় প্রায় ২৪গুণ বেশি ভূমিতে বসবাসের যোগ্য ছিলাম। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলো কোনো হিসেবেই আমাদের সেটা হয়নি। অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে থাকে মাত্র ৩ জন মানুষ। আর আমার বাংলাদেশে থাকে ১১শ’ মানুষ। আমরা যদি আমাদের এ মানুষগুলিকে শিক্ষা দিতে পারতাম। তবে দক্ষ মানুষগুলো দেশের উন্নয়নে আসতো। সেজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। এখানে বিনিয়োগ করতে হবে। শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এখনও শিক্ষায় সেইভাবে গুরুত্ব ও বিনিয়োগ হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক স্কুলে যদি টিভি রুম থাকে তাহলে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে শেখার সুযোগ পাবে। দেশের ভালো মানের শিক্ষকদের পাঠদান করানোর ভিডিও যদি িএকই সময়ে দেশজুড়ে সব স্কুলগুলোতে সম্প্রচার করানো সম্ভব হয় তবে শিক্ষার্থী সঠিক ও কার‌্যকর শিক্ষাটাই পাবে। একসঙ্গে কোটি শিক্ষার্থী উপকৃত হতে পারবে।

আমাদের সময় মেধা তালিকা ছিল। যে তালিকায় স্থান পেতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী চেষ্টা চালাতো। স্থান পেত হয়তো ২০ জন। বাকিরা স্থান না পেলেও চেষ্টার কারণে মোটামুটি অনেক কিছুই শিখতে পারতো। তাই শিক্ষায় প্রণোদনারও ব্যবস্থা করতে হবে। প্রণোদনা দিলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে। কারণ কোনো যুবক বা তরুণ কখনও চায় না যে সে পিছিয়ে থাকুক। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব অনেক বেশি।

আমার মনে হয় শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রণোদনার নিদারুণ অভাব। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক বা কম মূল্যের কার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। যেমন গণিত অলিম্পিয়াডে আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি ভালো করেছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে এতো শিক্ষিত যোগ্য লোক, অথচ পোশাক শিল্পসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বিদেশি এক্সপার্টদের বেশি বেতনে আনা হচ্ছে। কেন আমরা সে জায়গাটা নিতে  পারছি না?

অধ্যাপক কায়কোবাদ: এতো ঘণবসতিপূর্ণ দেশ, সেখানে যদি অন্য দেশের লোকজনকে দিয়ে কাজ করাতে হয় তার মানে হলো আমরা দক্ষ না। আর দক্ষ না বলে বিদেশীরাই যদি আমাদের কাজ এভাবে করতে থাকে তো আমাদের জনসম্পদ আর সম্পদ থাকলো না। সেটা হয়ে গেল সমাজে বোঝা বা বেকার।

আমাদের দেশে ৩২ হাজার কোটি টাকা পাচারের কথা শোনা যায়। তার এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে তো আমাদের ২৫ থেকে ৩০ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতো। যারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারতো।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

অধ্যাপক কায়কোবাদ : আমরা তো জানি আমাদের দেশে একসময় মালয়েশিয়া, কোরিয়ার ছেলে-মেয়েরা অধ্যয়ন করতে আসতো। এখন স্রোত বিপরীতমুখী। এখন আমারা উল্টো মালয়েশিয়া, কোরিয়াতে পড়তে যাই। এ থেকে বুঝতে হবে যে আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা আপেক্ষিকভাবে নিম্নগামী। এর মান উচু হচ্ছে না। যেহেতু আমাদের দেশে তারা পড়তে আসছে না। সেহেতু বুঝতে হবে আমাদের দেশে শিক্ষার  মান ক্রমে অবনতি হচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কেন শিক্ষার মান এমন নিম্নগামী হচ্ছে?

অধ্যাপক কায়কোবাদ: যে দেশে জায়গা সীমিত। প্রাকৃতিক সম্পদেরও ছড়াছড়ি নেই। যে দেশে মানুষই একমাত্র অবলম্বন। সেই দেশ একমাত্র জনসম্পদকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর ভর করেই উন্নতি লাভ সম্ভব। কিন্তু দু:খের বিষয় আমাদের শিক্ষা খাতে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে মানুষকে দক্ষমানব সম্পদে পরিণত করতে হলে তাকে শিক্ষা দিতে হবে। শুধু শিক্ষা না বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে হবে।

শিক্ষায় যে বিনিয়োগ করা দরকার সেই বিনিয়োগ আমরা করতে পারছি না। আমরা শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে মুল্যসংযোজন বেশি হবে। এটা বিশ্বাস করতে হবে যারা শিক্ষায় বিনিয়োগ করেছে তারা অনেক উপরে উঠে গেছে। যেমন কোরিয়া, মালয়েশিয়া। আমরা বিনিয়োগ করি নাই, তাই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হয়নি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষাকে কীভাবে নিরেট সেবায় রূপান্তর করা যায়?

অধ্যাপক কায়কোবাদ: একদিকে কোচিং নিষিদ্ধ করছি। অন্যদিকে তার বিস্তার ঘটার ক্ষেত্র তৈরি করছি। এই সৃজনশীলতায় কোচিং বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরো তৈরি হয়েছে। সৃজনশীলতায় যখন ছাত্ররা প্রশ্নের উত্তর বুঝতে পারছে না তখন তো তারা কোচিং মুখী হবেই। যে কারণে গত চার-পাঁচ বছর কোচিং বাণিজ্য বন্ধের কথা আমরা জোরেশোরে বলেও তা কমেনি বরং বেড়েছে। এর কারণ দিনশেষে ছাত্রকে পরীক্ষা দিতে হবে। তাকে ভালো রেজাল্ট দেখাতে হবে। তাই যখন ছাত্ররা ক্লাসে সৃজনশীলতা বুঝতে না পারে তখন ইচ্ছা না থাকলেও কোচিং সেন্টারে যেতে হয়।

কারওয়ান বাজারে যেকোনো পণ্য ক্রয়ে নির্দিষ্ট দাম দেওয়া আছে। আবার বেশি দাম নিলে সেখানে সরকারের বিধি-নিষেধও আছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কী তেমন কোন ফি নির্দিষ্ট আছে? নেই। তাই বিভিন্ন ফি নিয়েও ভাবতে হবে। সেখানে সরকারের ফি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবেই বাণিজ্য না হয়ে সেবার দিকটি বেরিয়ে আসবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে অনেকটাই সনদনির্ভর। দেশপ্রেম, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এগুলোর চর্চার অভাবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী দেশের সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়?

অধ্যাপক কায়কোবাদ : শিশু-কিশোরদের মনে যাতে নীতি-নৈতিকতা, দেশের প্রতি মমত্ববোধ গড়ে ওঠে সেজন্য শিক্ষায় আমাদের কোনো ধরণের কর্মসূচি নেই। আমি জানি বিভিন্ন দেশের তরুণ প্রজন্মকে দেশের জন্য মানুষের জন্য সেবা দিতে হয়। কোরিয়া ও রাশিয়াতে এটা দেখেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে শুধুমাত্র একাডেমিক রেজাল্ট দিয়ে হয় না। সেখানে দেখাতে হয় তারা স্বেচ্চাসেবক হিসেবে সমাজে কতটা কাজ করেছে।

আমাদের ছেলে-মেয়েদের যদি নিয়মিত স্কুলের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে লাগাতাম। যদি গ্রামের সড়কটা মেরামতের কাজে লাগাতাম। বয়স্ক শিক্ষায় যদি কাজে লাগাতাম। সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে পারতাম। তবে দেশের প্রতি সমাজের প্রতি তাদের একটা মমত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা জন্মাতো।

যেমন আমাদের ঢাকা শহরের চারদিকে প্রাকৃতিকভাবে জলপথ ছিল। বিভিন্ন জায়গাতে তার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে। আমরা জানি ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। যাতায়াতে যানজটসহ বিভিন্ন ধরণের কষ্ট ও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। আমরা যদি ঢাকা শহরের চারদিকে জলাধার তৈরি করতে পারতাম। তবে ওই জলপথটা অনেক যাত্রী পার হতে পারতো। যাত্রীরা জলাধারের সৌন্দার্য অবলোকন করতে পারতো। যেমনটা হাতিরঝিলে দেখা গেছে। এ ধরণের কাজে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাত্র-ছাত্রীদের স্বেচ্ছা শ্রমের ব্যবস্থা করতে পারতাম। এতে শিক্ষার্থীদের মনে এক ধরণের গর্ব জন্মাতো। তারা গর্ব করতো আমাদের হাতেই এগুলো তৈরি। আবার এ কাজের মাধ্যমে তাদের পরিশ্রম করার মানুষিকতাও তৈরি হতো। এ ধরণের কাজ টাকা দিয়ে বা প্রকল্প করে হয় না। কারণ মনে রাখতে হবে  আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কোন প্রকল্প বা টাকা দিয়ে করা হয়নি। এটা ছিল মানুষের দেশাত্ববোধ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা বদলানো যাবে কি না? আর গেলে তা কীভাবে করা যায়?

অধ্যাপক কায়কোবাদ : শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে এটা অহরহ করা যাবে না। অস্থিতিশীল করা যাবে না। একবার  এই পরিবর্তন  আর একবার ওই পরিবর্তন, এমন করা যাবে না। আমি যখন স্কুলে পড়েছি তখন এতো পরিবর্তন তো ছিল না। কিন্তু আমি যে কম শিখছি সেটা আমি ভাবতে পারি না। সুতরাং পরিবর্তন হবে, তবে সে পরিবর্তন হবে দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের চমৎকার পাঠ্যপুস্তক দিতে হবে। স্কুল কলেজে যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ শিক্ষক দিতে হবে।

আরকে// এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি