ঢাকা, সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

প্রাইভেট টিউটর

সাবরিনা সুলতানা

প্রকাশিত : ০০:০১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

ছবি- লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া।

ছবি- লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া।

Ekushey Television Ltd.

ছোট্টবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি অনিহা আমার তিব্র ছিল। সারাদিন টই টই করতাম, সুপার হাইপার ছিলাম। সন্ধ্যা বেলায় পড়তে বসলেই প্রচুর ঘুম পেতো, কোনো রকমে হোমওয়ার্ক শেষ করতাম। ফলশ্রুতি- রেজাল্ট খারাপ হতে শুরু করলো, বিশেষ করে অংকে। 

আমি তখন ক্লাস ফাইভের। বাবা মাস্টার রাখার কথা বললেন। আমি তো একথা শুনে বাড়ি ঘর তোলপাড় করে দিলাম। বাবার আদরে আমি ছিলাম বাঁদর। দেখতে অবিকল দাদির মতো ছিলাম। এইজন্য বাবা আমায় তেমন শাসন করতেন না। বাবা আদর করে বুঝালেন- মাত্র এক মাস পড়তে, বিনিময়ে পুতুল কিনে দিবেন। ওই সময় অনেক পুতুল খেলতাম, তাই রাজি হলাম পড়তে। 

বাবার ডিপার্টমেন্টে একজন নতুন ইন্টার্ন মাত্র জয়েন করেছে কিছু দিন হলো। উনাকে ঠিক করলেন আমার আর ভাইকে পড়ানোর জন্য। ভাই আমার ২ বছরের বড়ো হলেও আমার কথায় উঠতো-বসতো। 

যাইহোক, শুরু হলো স্যার-এর আগমন। লম্বা টিংটিঙে ছিলেন দেখতে। প্রথম দিন বলে আম্মা মজার মজার নাস্তা দিলেন। স্যার-এর সেই দিকে মন নেই, খালি পড়াচ্ছিলেন। কিন্তু আমার আর তর সইছিলো না। বললাম স্যার নাস্তা করেন। বেচারা লাজুক, বলে তুমি খাও। বলা মাত্রই ঝাপিয়ে পড়লাম। বেচারা স্যার-এর কপালে তেমন কিছুই জুটে নাই সেদিন। 

এরকমই চলছিল প্রতিটা দিন। আম্মা টের পেয়ে আমায় দিলেন উরাধুরা মাইর। আর তাতেই আব্বা গেলেন খেপে আম্মার ওপর। বললেন, তুমি কি করে মারতে পারলা কচি মেয়েকে? ভুলে যাও কেনো- ও যে আমার মা-এর মূর্তি। বাবা রকস্, আম্মা সকস্। এরপর থেকে আলাদা পিরিচে নাস্তা দিতো আম্মা। 
মজার মজার নাস্তা খেয়ে দিন ভালোই কাটছিল। কিন্তু বেশি দিন এই সুখ সইলোনা কপালে, শুরু হইলো স্যার-এর পড়াশোনার অত্যাচার। আমি অমনোযোগী থাকতাম বলে খালি বেশি বেশি কাজ দিতো। ভাই আবার সুবোধ বালকের মতো সব কথা শুনতো। এইজন্য স্যার অনেক প্রসংশা করতেন, আর আমায় খালি বকা দিতেন। 

একদিনের কথা বলি- আমি হাতে ঝাড়ুর কাঠি নিয়ে পড়তে বসেছি। কিছুক্ষণ পর পর ভাইয়ের পায়ে খোঁচা মারছিলাম। একবার তো ভুল করে খোঁচাটা স্যার-এর পায়ে গিয়ে লাগলো। আর যাই কই, স্যার এদিক-ওদিক তাকিয়ে ওয়াল-এ দেখলেন ব্যাটমিনটন র‍্যাকেট। ওইটা নিয়ে আমার মাথায় মারলেন এক বাড়ি, রাগে দুঃখে অপমানিত হয়ে চেয়ার ঠেলে ঘরে চলে গিয়ে আম্মাকে বললাম ঘটনা। ওমা, উল্টো আম্মা বলে বেশ করছে। আরো মারতে বলবো। 

তো, আমি ঘোষণা দিলাম- আর পড়বো না উনার কাছে। আব্বা শুনে স্যারকে বললেন, কেনো এমন তিনি করেছেন। পুরো ঘটনা শুনে আব্বা খুবই লজ্জিত হলেন। বাসায় এসে আমায় বললেন, মাগো এ কেমন আচরণ তোমার? স্যারকে ঝাড়ুর শোলা দিয়ে খোঁচা কেনো দিলা? বাবাকে বুঝালাম খোঁচা তো ভাইকে দিতে গিয়ে এক্সিডেন্টলি স্যার-এর পায়ে গিয়ে লেগেছে। 

বুঝিয়ে সুজিয়ে আবারও স্যার-এর কাছে পড়তে রাজি করানো হলো আমায়। রাজি হলাম ঠিকই, ভিতর ভিতর স্যার-এর উপর খেপে ছিলাম। কি করে এই স্যারকে বিদায় করবো, তাই ভাবতে লাগলাম। হঠাৎ চেয়ার-এর দিকে তাকিয়ে আইডিয়া পেয়ে গেলাম। সেগুন কাঠের চেয়ারগুলো কালো রঙের ছিল। টেবিলে রাখা লাল কালির দোয়াত থেকে কালি নিয়ে স্যার যে চেয়ারে বসেন তাতে ভালোমতো মেখে রাখলাম। কিছুক্ষণ পর স্যার এলেন। ওইদিন স্যার খাকি রঙের প্যান্ট পরেছিলেন, চেয়ারে বসার পর শুরু হইলো আমার মুচকি মুচকি হাসা। খুব বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলেন কেনো অহেতুক হাসছি। ভাই ভয়ে মাথা নিচু করে রেখেছিলো। 

পরের দিন বাবা মুখ কালো করে বাসায় আসলেন জলদি অফিস থেকে। পুরো ঘটনা আমায় বললেন, কাজটা ভালো করিনি আমি। স্যার তো বলেই দিলেন, আমি আর পড়াবোনা আপনার মেয়েকে। বাবার অনেক রিকোয়েস্টে খালি ভাইকে পড়াতে রাজি হলেন। আমায় দেখলেই স্যার নড়েচড়ে বসতেন। বেচারা স্যার!! এটাই ছিল আমার প্রথম আর শেষ টিউটর।

লেখক- সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি