প্লাস্টিকের পোস্টার: কেউ মানেননি নির্দেশনা
প্রকাশিত : ২২:০৬, ৩০ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২২:৪৯, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

আর মাত্র একদিন পরেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্লাস্টিকের পোস্টারে সয়লাব পুরো শহর। হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও কেউ সেই নির্দেশনা মানেননি।
হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেছিল, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন করে প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন, ছাপানো ও প্রদর্শন করা যাবে না। কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও নির্বাচনি এলাকার সব জায়গায় ঝুলছে প্রার্থীদের লেমিনেটেড বা প্লাস্টিক আচ্ছাদিত পোস্টার।
এর আগে দেশের অন্যতম একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে সারা দেশে নির্বাচনের সময় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন ছাপানো ও প্রদর্শন বন্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, শিল্পসচিব, স্বাস্থ্যসচিব ও দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয় ওই দিন ওই রুলে।
এই নির্দেশনার পরও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে এখনও লাগানো হচ্ছে প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার। ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশান, ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার।
প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার এখনও কেনো ঝুলছে বা কেনো নতুন করে লাগানো হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হয় রামপুরা ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ প্রার্থী জানান, এটা হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে। সেটা আমি জানি না। আর হাইকোর্ট তো এমন অনেক কিছুরই নির্দেশনা দেন। সবটা কি মানা সম্ভব হয়? প্লাস্টিক আচ্ছাদিত পোস্টার বা লেমিনেটেড পোস্টার সহজে নষ্ট হয় না। এ জন্য আমরা এ ধরনের পোস্টার করে থাকি। বৃষ্টি বা কুয়াশায় পোস্টার নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ ধরনের পোস্টার করা হয়।
বাড্ডা এলাকার এক কাউন্সিলরকে হাইকোর্টের নির্দেশনা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ সময় প্রচারণা নিয়ে আছি। হাইকোর্টের নির্দেশনা পরে বিবেচনা করা যাবে। তাকে আরও প্রশ্ন করা হয় এই ধরনের পোস্টারের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয় এটা তো জানেন, তারপরও কেনো এটা করছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা শুধু আমি একাই করি নাই। এটা সবাই করেছে। সবার অপরাধ না হলে আমার কেনো একার অপরাধ হবে।
রিটকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার পরিবেশের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, জলবায়ু উষ্ণতার অন্যতম কারণও। সে কারণে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়।
ইংরেজি ওই দৈনিকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী উপহার দেওয়ার কথা বললেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্লাস্টিকে মোড়ানো (লেমিনেটেড) নির্বাচনি পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন গোটা ঢাকা শহর। প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বৃষ্টি, কুয়াশা, আর্দ্রতা কিংবা ধুলাবালি থেকে পোস্টারগুলো রক্ষা করার জন্য তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার করছেন।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পোস্টার প্লাস্টিকে মোড়ানোর (লেমিনেটেড) কারণে পরিবেশের জন্য মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে। একদিকে এই প্লাস্টিক নষ্ট হবে না। অন্যদিকে, একে পুনরায় ব্যবহার করারও সুযোগ নেই। তাঁরা আরও বলেছেন, বছরের পর বছর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পড়ে থেকে পরিবেশের ক্ষতি করা ছাড়া এগুলোর আর কোনো কাজ নেই।
পরিশেষে বলা যায়, যারা জনপ্রতিনিধি হবেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন তারাই আইনকে তোয়াক্কা করছেন না। যারা স্লোগান দিচ্ছেন গড়ে তুলবেন পরিচ্ছন্ন নগরী, নগর পিতা হওয়ার আগেই তারা হাইকোর্টকে পাত্তা না দিয়ে করছেন ময়লার ভাগাড়।
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।