ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশী ফল আমদানিকারকদের জন্য আশীর্বাদ  

ফরমালিন আম ও কৃষকের সর্বনাশ  

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫৩, ৩০ মে ২০১৮ | আপডেট: ১২:২৯, ৩১ মে ২০১৮

বাংলাদেশে আম শুধু ফলই না। আমকে বাংলাদেশে ডাকা হয় ‘ফলের রাজা’ হিসেবে। কিন্তু সেই আমকেই নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। কেমিক্যাল বিশেষ করে ফরমালিনযুক্ত থাকার অভিযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নষ্ট করা হচ্ছে এসব আম। তবে সংশ্লিষ্ট খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন ফরমালিনের মিছে বাহানায় এসব আম উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। সর্বনাশ হচ্ছে দেশীয় আম চাষীদের আর লাভের পাল্লা ভারী হচ্ছে বিদেশী ফল আমদানিকারকদের।

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের কাঁচা শাকসবজি ও ফলের বাজারে ফরমালিনের প্রকোপ বেশ সাড়া ফেলে। সেই সময় থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ফরমালিন বিরোধী টানা অভিযানে প্রায়ই নষ্ট করে দেওয়া হতো কাঁচা শাক-সবজি, ফলমূল ও মাছ-মাংস। কিন্তু এরপরের সময়গুলোতে, কৃষি গবেষকরা বলছেন, আমে ফরমালিন যুক্ত করার যে বিষয়টি সচরাচর শোনা যায় তা ঠিক নয়। কারণ ফলমূলে ফরমালিনের প্রয়োগ মানবদেহে তা কোন ধরণের ক্ষতি করে না। তবুও এই ফরমালিনের অভিযোগে ধ্বংস করা হয় বাজারে থাকা ফলমূল বিশেষ করে আম।

কারওয়ান বাজারের এক ফল বিক্রেতা আবদুর রহিম ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমরা তো আমে ফরমালিন দেই না। আর ইদানীং কেউই আমে ফরমালিন দেয় না। কিন্তু এরপরেও আমাদের দোকান থেকে আম নিয়ে তা ধ্বংস করা হয়। এতে তো আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হই”।   

তবে শুধু দেশীয় আম বিক্রেতারাই না বরং দেশীয় আমের বিরুদ্ধে এমন ‘চিরুনী অভিযানে’ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আম চাষীরা। রাজশাহী, নওগাঁ, চাপাই নবাবগঞ্জের মতো জেলাগুলোতে থাকা আম চাষীরা হচ্ছে সর্বশান্ত। রাজশাহী থেকে কারওয়ান বাজারে আম সরবরাহকারী ও আম চাষী হেদায়েত মিয়া জানান, “এখন আর আমাদের আম কেউ দোকানে রাখতে চায় না। থাইল্যান্ড থেকে আসা আম দোকানে থাকে। আর যে কয়েকটি পাইকার বা আড়তদার আমাদের দেশীয় আম রাখতে চায় তারা অনেক কম দাম বলে। এতে তো আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছি”।

হিসাব বলছে, বিগত দুই সপ্তাহে শুধু রাজধানীতেই প্রায় দুই হাজার মণ দেশীয় আম ধ্বংস করা হয়। র‍্যাব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সহ বিভিন্ন সংস্থা রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ি বাজারসহ বড় বড় বাজারগুলোতে এসব অভিযান পরিচালনা করে। সারাদেশের হিসেবে ধ্বংস হওয়া এই আমের সংখ্যা আরও বেশি। 

দেশীয় আম ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের আশঙ্কা যে, বিদেশ থেকে যারা আম এদেশে আমদানি করে তাদেরকে কোন ধরণের সুবিধা দিতেই ধ্বংস করা হচ্ছে দেশীয় আম। অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি (এসিআই) এগ্রি বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারী ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমে যে ইথোপিন (এক ধরণের ফরমালিন) প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয় সেই ইথোপিন কিন্তু মানব স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়। বরং আমে যে ইথোপিন দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবহণ করা হয় তা গ্লোবাল প্র্যাকটিস। এই থাইল্যান্ড থেকে যে আম আসে তাতে কী ইথোপিন নেই? আছে। সেই আম আমরা ঠিকই উচ্চ দাম দিয়ে কিনে খাই কিন্তু দেশীয় আম খাব না”।   

এফ এইচ আনসারী আরও বলেন, “এখন আমের মৌসুম। পবিত্র রমজান মাসও চলছে। এই সময়টাই আম চাষী, ব্যবসায়ীদের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। মানুষরা সারাদিন রোজা রাখার পর এক টুকরা খেজুরের সাথে আম খেতে পারেন। আমকে শুকিয়ে ড্রাই (শুষ্ক) করে সংরক্ষণ করেও তা খাওয়া যেতে পারে। এখন যদি চাষীদের আম এভাবে অভিযানের নামে নষ্ট করা হয় তাহলে এতে তাদের সর্বনাশ কেউ ঠেকাতে পারবে না। মৌসুমের শুরুতে ফলের ভালো মূল্য পায় চাষীরা। কিন্তু এই ফরমালিনের গুজব যদি বন্ধ না হয় তাহলে তারা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে না। আর দিন যত বাড়বে আমের মূল্য এমনিতেই আরও কমে আসবে। এটা তাদের জন্য ক্ষতি”।

তাহলে আমে ফরমালিনের এই সমস্যা কেন এমন প্রশ্নের জবাবে এফ এইচ আনসারী বলেন, “এটা আসলে যোগাযোগের সমস্যা। একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে এতদিনে। আমাদের দেশে প্রচুর বিজ্ঞানী আছেন। তারা ইতোমধ্যে বলেছেন যে, এই ফরমালিন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক না। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি আকারেও বিষয়টি পরিষ্কার করে জানিয়েছে। এরপরেও এ বিষয়ে আমাদের দ্বিধা থাকার কথা না। মূলত বিদেশী ফল আমদানিকারকদের সার্থেই এমনটা করা হচ্ছে”।

বাজারের এসব গুজবকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশীয় আমের সার্থে সরকার কাজ করবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন দেশীয় আম চাষী,কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।     

এসি 

  


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি