ঢাকা, শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফিলিস্তিনের বন্ধু ছিলেন স্টিফেন হকিং

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ১৪ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ২২:২৭, ১৪ মার্চ ২০১৮

স্টিফেন হকিং পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবেই সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে হকিং সম্পর্কে অনেকেই যে বিষয়টি  জানেন না তা হলো, ফিলিস্তিনিদের দাবির পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন হকিং। ফিলিস্তিনি জনগণের বন্ধ ছিলেন প্রয়াত এই বিজ্ঞানী।

২০১৩ সালে প্রথমবার হকিংয়ের ফিলিস্তিন প্রীতির কথা বিশ্ব মিডিয়ার নজরে আসে। সেসময় ইজরায়েলে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈজ্ঞানিক সভায় যোগদান থেকে নিজেকে বিরত থাকেন তিনি। জেরুজালেমে অনুষ্টিত সেই প্রেসিডেন্সিয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন সেসময়কার দেশটির প্রেসিডেন্ট শিমন পিরেজ।

সে বছর যুক্তরাজ্যের ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় থাকা হকিংস ৩ মে একটি চিঠিতে ওই সভার আয়োজকের উদ্দেশ্যে লেখেন, বর্তমান ইজরায়েলি সরকারের নীতি হল ধ্বংসের নেতৃত্ব দেওয়া।

তিনি আরও লেখেন, আমি এই প্রেসিডেন্সিয়াল কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ এই কারণে গ্রহণ করেছিলাম যে, এর মাধ্যমে শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমি আমার মতামত রাখতে পারব না তা নয়; বরং আমি পশ্চিম তীর নিয়েও বক্তব্য দিতে পারব। যাই হোক, ফিলিস্তিনের বিভিন্ন একাডেমী থেকে আমি অনেকগুলো ই-মেইল পাই। তারা সেখানে দ্বিধাহীন কণ্ঠে আমাকে আহবান জানায় যে, আমি যেন ঐ কনফারেন্সটি বয়কট করি। তাদের প্রতি সম্মান রেখে আমারও মনে হয়েছে যে, আমার এই কনফারেন্সে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতেই হবে।

হকিংয়ের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছিল ফিলিস্তিনের বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক যুক্তরাজ্যের বিশেষ কমিটি। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থাটি বলেছিল, ফিলিস্তিনে তার (হকিংস) নিজস্ব যোগাযোগ এবং জ্ঞান থেকে তিনি ইজরায়লের কনফারেন্স বয়কটের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটা তার সম্পূর্ণ নিজস্ব সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার স্বাধীনতা তার আছে।

হকিংয়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে দেরি করেনি ফিলিস্তিনও।  দেশটির ইজরায়েল বর্জন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ওমর বারঘৌতি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা স্টিফেন হকিংসের এই বয়কটকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করছে এবং স্বাগত জানাচ্ছে।

আলি আবু নিমাহ নামের একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক লিখেছেন, “কয়েক বছর আগে হকিংসের ইজরায়লের কনফারেন্স বয়কট করার যে সিদ্ধান্ত সেদিকে যখন আমরা তাকাই তখন ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং সহমর্মিতার বিষয়টি স্পষ্ট ধরা পরে”।

ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের পাশেও ছিলেন হকিং

স্টিফেন হকিং পাশে ছিলেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদেরও। গত বছরও তিনি ফেসবুকে তার অনুসারীদের ফিলিস্তিনের একটি পদার্থ বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুদান আহবান করে পোস্ট করেন।

পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন অ্যাডভান্সড ফিজিক্স স্কুল নামের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ঐ অনুদান আহবান করা হয়। ফেসবুকের ঐ আহবানে তিনি লিখেছিলেন, “আমি সকল জায়গার বিজ্ঞানীদের চলাচলের স্বাধীনতা, বই প্রকাশের স্বাধীনতা এবং জোট গঠনের স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানাই”।

২০১৬ সালে ফিলিস্তিনের এক নারী শিক্ষিকা হানান আল হ্রুব বিশ্ব শিক্ষিকা পুরস্কার অর্জন করলে তাকেও ফেসবুক ভিডিওতে জনসমক্ষ্যে স্বাগত জানান। সেখানে হানানকে উদ্দেশ্যকে করে তিনি বলেছিলেন, “সব স্থানের মানুষের জন্য আপনি এক অনুপ্রেরণা”।

তিনি আরও বলেছিলেন, “যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি সমাজ যেখানকার শিশুরা প্রতিনিয়তই সহিংসতার শিকার হয়, হানান আল হ্রুব সেখানে সকলের মাঝে আশা জাগিয়ে তুলছেন। তার নিজের শ্রেণীকক্ষের হৃদয় থেকে মানসিক আঘাত পাওয়া শিশুদের তিনি সাহায্য করে যাচ্ছেন”।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে পৃথিবী শুধু ৭৬ বছর বয়সী একজন পদার্থবিজ্ঞানীকেই হারায়নি বরং ফিলিস্তিন হারিয়েছে তাদের এক বন্ধুকেও

সূত্রঃ আল-জাজিরা

//এস এইচ এস// এআর

   


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি