বদির ভাই সহ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ
প্রকাশিত : ২০:২৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
কক্সবাজার জেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের একটি স্কুলের মাঠে শনিবার কয়েক হাজার মানুষের সামনে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আইজি সহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পুলিশ এবং প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা হাজির ছিলেন।
কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক জাকারিয়া আলফাজ - যিনি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের মাঠে আত্মসমর্পণের ঐ অনুষ্ঠানে ছিলেন - বিবিসিকে জানান, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল রহমান বদির আপন তিন ভাই সহ ঘনিষ্ঠ আটজন আত্মীয় ছিলেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বলেন, মি বদির আরেক ভাই মজিবর রহমান - যিনি টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় রয়েছেন - আত্মসমর্পণ করেননি।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, `ইয়াবা গড ফাদারদের` তালিকায় যে ৭৩ জনের নাম আছে, তাদের ৩০ জন আজ আত্মসমর্পণ করেছে।
কক্সবাজার জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে তাতে ১১৫১ জনের নাম থাকলেও আত্মসমর্পণ করেছে মাত্র ১০২ জন।
পুলিশ জানিয়েছে অনুষ্ঠানে মি বদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, তবে এলাকার নবনির্বাচিত এমপি এবং মি বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক জাকারিয়া আলফাজ বলেন, এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা-মাইকিং করা হয়।
"ফলে স্কুলের মাঠ ছিল কানায় কানায় ভর্তি। আশপাশের বাড়ির ছাদ ও বারান্দাগুলো মানুষে ঠাসা ছিল।"
মি আলফাজ বলেন - এই আত্মসমর্পণ নিয়ে মানুষের মনে অনেক সন্দেহ ছিল, কিন্তু একশরও বেশি মানুষ যারা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত তাদেরকে এভাবে অস্ত্র এবং ইয়াবা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
"মানুষের মনে সন্দেহ ছিল প্রহসন হচ্ছে কিনা, কিন্তু অনুষ্ঠানের পর অনেক মানুষের মুখে ইতিবাচক কথা শুনেছি।"
পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩৫০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট অনুষ্ঠানে জমা পড়েছে।
পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে প্রায় তিনশর মত লোক মারা গেছে, প্রাণে বাঁচতেই কি এই আত্মসমর্পণ?
মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে গত বছর পুলিশ কঠোর পথ নেয়। কয়েক মাসের মধ্যে `পুলিশের ক্রসফায়ারে` সারা দেশে তিনশরও বেশি লোক মারা যায়।
ইয়াবা চোরাচালানের প্রধান রুট হিসাবে বিবেচিত কক্সবাজারেই মারা গেছে ৫৩ জন। আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করে কি পুলিশ সেই কঠোর অবস্থান পরিবর্তন করছে?
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিবিসিকে বলেন, "মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে।"
তবে একই সাথে মি হোসেন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে এই আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
"এই এলাকায় বিয়ের পাত্র ট্যাবলেটের ব্যবসা করে জেনেও স্বচ্ছন্দে তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিত। সেখানে আজ এত লোকের আত্মসমর্পণ একটি বিরাট পরিবর্তন ... মাদকের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা।"
আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আগামীকাল (রোববার) মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র-বিবিসি
আরকে//
আরও পড়ুন