বন্দিদশার ৩৩ দিন মনে হয়েছে ৩৩ বছর: নাবিক জয় মাহমুদ
প্রকাশিত : ১২:২৫, ১৫ মে ২০২৪
বাগাতিপাড়ার বাড়িতে নাবিক জয় মাহমুদ
জিম্মি করার পর সোমালিয়া দস্যুরা আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার করতো। তবে যখন দেখেছে আমরা নিয়মিত নামায পড়ছি এবং রোজা রাখছি তখন তাদের মন নরম হয়। এরপর থেকে তারা নরম সুরে আমাদের সাথে কথা বলে এবং অত্যাচারের মাত্রা কমিয়ে দেয়। কখনও ভাবিনি আমরা জীবিত বাড়ি ফিরে আসতে পারবো।
ভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সোমালিয়া জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া সাধারণ নাবিক (ওএস) নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ।
বুধবার (১৫ মে) সকালে জয় মাহমুদ তার গ্রামের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে ফিরে আসেন। তার ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয় সজন ও প্রতিবেশিরা এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় করেন।
জয় মাহমুদকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন সজনসহ প্রতিবেশীরা। তার ফিরে আসায় অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করেন।
বাগাতিপাড়ার উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জয় মাহমুদ বলেন, জলদস্যুরা যখন আমাদের জিম্মি করে তখন আমরা ভাবিনি বেঁচে বাড়ি ফিরবো। বন্দুকের নলের মুখে আমাদের থাকতে হয়েছে। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আতঙ্কের। প্রতিটি দিন মনে হয়েছে অনেক দিন। বন্দিদশার ৩৩ দিন মনে হয়েছে ৩৩ বছর।
তিনি বলেন, প্রতিটি দিন কেটেছে আতঙ্ক ও কষ্টের মধ্যে। শুধু নামাজ পড়েছি আর আল্লার কাছে দোয়া চেয়েছি। তবে আস্তে আস্তে তারা যখন স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে তখন মনে একটু একটু করে সাহস পাই আমরা। ঈদের দিন ঈদ মনে হয়নি। ঈদে শুধু নামায পড়তে পেরেছিলাম আর কিছুই করতে পারিনি। এবার ঈদের আনন্দ ছিল না।
জয় মাহমুদ বলেন, এখন বাড়ি ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।
এদিকে জয় মাহমুদ সুস্থ্যভাবে বাড়ি ফিরে আসায় মায়ের মুখে খুশির ঝলক এবং তার সহপাঠিরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
জয়ের মা আরিফা বেগম বলেন, ‘আমার ধন বুকে ফিরে এসেছে এটাই বড় আনন্দ। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহ য়ে আমার বুকের মানিককে ফিরে দিয়েছে এই জন্য তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। এবার আমদের কাছে ঈদ ছিলনা। বুকের ধন জয় জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন কেটেছে। সে জীবিত বাড়ি ফিরে আসায় আমাদের এখন ঈদের দিন মনে হচ্ছে।’
জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে আজ বুধবার সকালে বাড়ি ফিরেছে। আমরা খুব আনন্দিত। আমরা প্রধানমন্ত্রী, দেশবাসী, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, মিডিয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে আল্লাহপাকের কাছে শত কোটি শুকরিয়া।’
জয়ের বৃদ্ধ দাদি জানান, ‘আমার নাতি বাড়ি ফিরে এসেছে তাই মনে শান্তি পাচ্ছি। কত যে কান্দিচি তা বলে বুঝানো যাবেনা। আল্লাহপাক আমার নাতিকে দীর্ঘজীবন দান করুন, এটাই আমার চাওয়া।’
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এর মধ্যে জয় মাহমুদ একজন।
এএইচ
আরও পড়ুন