বর্ষার প্রথম দিনে
প্রকাশিত : ০৮:৫৬, ১৫ জুন ২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৭, ১৫ জুন ২০২২
ভোর হলে, দোর খুলে দেখা মেলে আকাশে মেঘের ঘনঘটা। এই বুঝি নামলো ঝুম বৃষ্টি, তবে আসি আসি করেও বৃষ্টির দেখা নেই গেল কদিন ধরে। এরমাঝেই টুপ করে চলে এলো কদম, জারুল, সোনালুর ঋতু বর্ষা। বর্ষা মানেই প্রকৃতিতে প্রাণসঞ্চার, সতেজ সবুজে বাংলার নিসর্গ স্নিগ্ধতা। বুধবার আষাঢের প্রথম দিনে তাই শুধুই বৃষ্টি বন্দনা।
আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুইয়ে মিলে বর্ষাকাল। বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখায় বর্ষা যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। রবি ঠাকুরের ভাষায়, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’
আষাঢ়, বাংলা পঞ্জিকার তৃতীয় ঋতু। এটি বর্ষা মৌসুমে অর্ন্তভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। আর নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। বর্ষায় গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্নতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। নদীতে উপচেপড়া জল, আকাশে থাকে মেঘের ঘনঘটা। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ যখন পুড়ে তখন বর্ষার ঝুম ঝুম বৃষ্টির বরণডালা প্রশান্তি এনে দেয় মানুষের মনে।
বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরো কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোঁটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য।
অনেকেই মনে করেন, বর্ষা যেমন আনন্দের, তেমনি হঠাৎ বিষাদে ভরিয়ে তোলে জনপদ। তবুও বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলীর আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাঙলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষতো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।
তবে বর্ষার বৈচিত্র শহরে আর আগের মতো নেই, কদম ফুলের দেখা মেলাও ভার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে আষাঢ়ের কদমে। আর কদম ছাড়া বর্ষার কোথায় যেন অপূর্ণতা রয়ে যায়। তারপরও জরাজীর্ণ গ্রীষ্মক্লান্ত প্রকৃতিকে বর্ষার আকাশ-ভাঙা জলে স্নান করিয়ে সিক্ত হয় ধরণীতল। ইট কাঠের ফাঁকেই কোথাও কোথাও কদাচিৎ দেখা মেলে কদমের।