ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বল বীর বল উন্নত মম শির!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪৪, ২৭ আগস্ট ২০১৮

সাহসী ও বীরের জাতি বাঙ্গালীদের সর্বদা সাহস যুগিয়ে আসা এবং সবসময় ন্যায় ও অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৪৩-তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করলেও  জাতীয় ও বিদ্রোহী কবির জন্ম ও প্রয়াণ দিবস বাংলা দিনক্ষণ অনুযায়ী পালিত হয়। সে হিসেবে আজ ১২ ভাদ্র পালিত হচ্ছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে অর্থ্যাত ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ৭৭ বছরের দীর্ঘ জীবনকালে কবির কাছ থেকে সৃজনশীল কাজ পাওয়া যায় মাত্র ২৩ বছর। ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারানোর পর আর সেভাবে সাহিত্যে মনোনিবেশ করতে পারেননি ছোট বেলার ‘দুখু মিয়া’।

পারিবারিক দারিদ্রের কারণে অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু করা নজরুলের অভিজ্ঞতার পাল্লা বেশ বৈচিত্র্যময়। কাজ করেছেন খাবারের দোকানে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে। সেই ব্রিটিশদের অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াতে বরণ করেছেন জেল বন্দীত্ব।

এক পর্যায়ে শুরু করেন সাংবাদিকতা; মনোনিবেশ করেন সাহিত্যকর্মে। কাজী নজরুল ইসলাম শুধু কবিতা লিখেছেন তাই নয়; রচনা করেছেন গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প, গানসহ নানান সাহিত্যকর্ম। “ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”-জনপ্রিয় এই গানটির রচয়িতা কবি কাজী নজরুল ইসলামই।

কবি তার সাহিত্যকর্মের মধ্যে দিয়ে সবসময় অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন আর শোষণের প্রতিবাদ করে গেছেন। বলিষ্ঠ কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন দুর্বল, নির্যাতিত আর নিপীড়িতদের পক্ষে। ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগ থাকলেও তাঁর রচনা সবসময়ই ছিলো অসাম্প্রদায়িক।      

১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে দেওয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে।

জীবদ্দশায় মৃত্যুর পর মসজিদের কাছে শায়িত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি লিখেছিলেন- “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই”। সেই অনুযায়ী মৃত্যুর পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে বেশকিছু কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কবিকে স্মরণ করে এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

দিনের শুরুতেই আজ ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান কবির ভক্ত ও অনুরাগীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ছাড়াও থাকছে, ফাতেহা পাঠ, আলোচনা।

বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।

বাংলা একাডেমিতে আজ শুরু হচ্ছে দুই দিনের কর্মসূচি। সকাল ৭টায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ আয়োজন। এরপর ৩০ আগস্ট বিকালে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

আলোচনা সভা ও ‘নজরুল পুরস্কার-২০১৭’ প্রদান ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে নজরুল ইন্সটিটিউট। আজ বিকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

এছাড়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধি সৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

//এস এইচ এস//

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি