বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জাসদের
প্রকাশিত : ২২:২২, ৩১ আগস্ট ২০২৩
২৯ আগস্ট ২০২৩ ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করার আবদার করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্ব নেতাদের লেখা খোলা চিঠি অনভিপ্রেত, যে কোনো দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অবমাননাকর; আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা, আদালতের প্রতি অবমাননাকর।
জাসদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশের আদালতে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করার আবদার করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্ব নেতাদের খোলা চিঠি লেখার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, তারা এ ধরনের চিঠিতে শুধু বিস্মিতই হন নাই, তারা ক্ষুব্ধও হয়েছেন।
তারা বলেন, ড. ইউনুসের দ্বারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা তাদের ক্ষতির প্রতিকার চেয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দেশের সংবিধান ও আইন দ্বারা গঠিত আদালতে সেই মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলমান। ড. ইউনুস দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থণের মৌলিক অধিকার চর্চা করছেন, তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করেছেন, মামলা জামিন নিয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছেন।
তারা আরও বলেন, ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের করার এই মামলার সাথে রাজনীতির কোনো যোগসূত্র নাই। বাংলাদেশ রাষ্ট্র বা সরকার তাকে হেনস্তা করার কোনো লক্ষ্যবস্তুও বানায় নাই। রাজনৈতিক একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন দ্বারা গঠিত আদালতে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী দেশের একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে তার দ্বারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের প্রতিকার চেয়ে দায়ের করা বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার আবদার যে কারো বক্তব্য প্রদান একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, আইন, বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননাকর।
জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো নোবেল পুরস্কার জয়ীই তার দেশের একজন নাগরিক হিসাবে তার দেশের প্রচলিত আইন বা বিচারের উর্ধ্বে নন, ঠিক তেমনই ড. ইউনুসও বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান, আইন, আদালত, বিচারের উর্ধ্বে নন। জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্ব নেতাদের ঐ বিবৃতিতে ড. ইউনুসের মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করার আবদারের সাথে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে শর্ত যুক্ত করা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত ও প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা এই বিবৃত্তিতে বিশ্ব নেতাদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাদের বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।
জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, অতীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার জন্যও কতিপয় বিশ্বনেতা বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর একের পর এক আসা সামরিক সরকার ও তাদের দ্বারা গঠিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এই বিশ্ব নেতাদের আবদারের মতই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছিল।
বিশ্ব নেতাদের খোলা চিঠি ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার আবদারের মধ্যে সামরিক শাসকদের জঘন্য মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখে তারা একই সাথে বিস্মিত ও ক্ষুদ্ধ। যখন বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য আবদার করে খোলা চিঠি লিখছেন তখন সমগ্র পৃথিবী দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের গত মেয়াদের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটার পর একটা মামলায় আদালতে হাজির হতে এবং কারাগারে দিয়ে হাজতি হিসাবে ছবি তুলতে (মাগ শট) বাধ্য করা হচ্ছে। তারা বিশ্ব নেতাদের কোনো দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, আইন, বিচার ব্যবস্থা, আদালতের প্রতি অবমাননাকর এধরণের অবিবেচক, অযৌক্তিক এবং বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে সংগঠিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার আগে ভেবে দেখার আহবান জানান।
আরও পড়ুন