ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভবন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৭, ২২ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৫৮, ২২ জুন ২০১৮

এইচ এন আশিকুর রহমান

এইচ এন আশিকুর রহমান

২৩ জুন দিনটি ঐতিহাসিক। ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীতে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রায় ২০০ বছর পর আবার ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে রোজ গার্ডেন থেকে এক দীর্ঘ অভিযাত্রার শুরু। বর্তমানে আরেক মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা উপস্থিত। ২৩ জুন ২০১৭ সালে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এবং মাত্র এক বছরে সুসম্পন্ন সুসজ্জিত সুউচ্চ ১১ তলা ভবনের তিনি ২৩ জুন ২০১৮ সালে শুভ উদ্বোধন করছেন। ত্বরিত কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক।

এ মুহূর্তে স্মরণ করছি জাতির পিতা সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা, তাঁর পরিবার, জাতীয় চার নেতা ও অসংখ্য শহীদকে, যাঁদের আত্মোৎসর্গ ছাড়া আমাদের জাতিসত্তা আমরা কল্পনা করতে পারি না।

মাননীয় নেত্রীর সংগ্রামী জীবন বিশাল কর্মকাণ্ড ও সফলতায় ভরপুর, অসামান্য গৌরবে সিক্ত—তবু জানি সবচেয়ে আনন্দের ক্ষণে উৎসবের স্থলে দুঃসহ স্মৃতি তাঁর ও আমাদের ভরপুর মুহূর্তকে শূন্যতায় ভরিয়ে দেয়। দুঃখ-বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, পাওয়া-না পাওয়া, তৃপ্তি-অতৃপ্তি, আনন্দ-উল্লাস—সব পেরিয়ে আমাদের অস্তিত্ব ঘিরে এক অন্তঃসলিলা স্রোত—নিদারুণ হাহাকার, চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়া অমূল্য সম্পদ ও নিকটজনের মর্মান্তিক শোক সব আনন্দমুখর মুহূর্তকে বেদনাবিধুর করে দেয়।

এই বিশাল সুরম্য ভবন—এ শুধু একটি ভবন নয়। এ ভবনের জানালা, কাঠ, দরজা, প্রাচীর পেরিয়ে দেখলে দেখা যাবে এক সুরম্য বাগান—Garden of Eden; যেখানে হাজার ফুল ফুটে আছে—যত ফুলই ছেঁড়া যাক না কেন, এ ফুলের শেষ নেই। ফুলগুলো স্বপ্ন, ভালোবাসা ও আলো দিয়ে তৈরি। ত্যাগ ও অসম সাহস দিয়ে ঘেরা এবং সৌরভে সিঞ্চিত এ বাগান। এ বাগানের বাগবান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সূর্য সেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন, তিতুমীর, ভাসানী, চিত্তরঞ্জন, সোহরাওয়ার্দী, সুভাষ, বেগম রোকেয়া, রবীন্দ্র, নজরুল ও অসংখ্য সংগ্রামী মানুষ এবং শহীদদের বীরত্ব ও ত্যাগের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তাঁর ভাষণে শব্দকে শাণিত অস্ত্রে পরিণত করে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। নিরস্ত্র বাঙালি জাতি খালি হাতে লড়াই করেছিল। বাংলার সহস্র বছরের অমিয় তেজ ও করুণার উৎসধারার এক যোগফল, সাহস ও সংগ্রামে দীর্ঘদেহী এক অপরূপ সুদর্শন পুরুষ শেখ মুজিব। তাঁর মধ্যে গ্রন্থিত হয়েছে বাংলার আত্মা, করুণাধারা, বীরত্ব, আত্মার আর্তি, বাংলার মানুষের সীমাহীন সাহস, বিদ্রোহ, যুগ-যুগের মুক্তিক্ষুধা ও বাংলার অপরূপ সুদর্শন রূপ।

বঙ্গবন্ধু অসীম দূরদৃষ্টি দিয়ে গড়তে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডটিকে। এই ভবন শুধু ভবনই নয়—এ ভবন আমাদের স্বপ্ন, ধ্যান ও তিতিক্ষায় ঘিরে আছে। এ ভবন হবে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও উন্নয়নের দর্পণ। এ ভবন থেকে শক্তি, প্রেরণা, কর্মচাঞ্চল্য, আমরা যে বীরের জাতি এ আত্মপরিচয় সঞ্চারিত হবে পুরো বাংলার ঘরে ঘরে।

মাননীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও দায়িত্ব ধারণ করেছেন। তাঁর জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব মুখ্য নয়—বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন তাঁর সাধনা, ধ্যান ও তপস্যা।

জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অপরাজেয় নেতৃত্বে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে শত ষড়যন্ত্রের মধ্যেও দেশকে স্থিতিশীল রেখেছেন। বাংলাদেশ আবার মূলস্রোতে। আমাদের ঠিকানা উচ্চ আকাশে, অনুচ্চারিত প্রতিবাদ আজ নির্ভয়ে উচ্চারিত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, স্বাধীনতা ও ভালোবাসা আজ লালিত। সমুদ্র বিজয়, স্থলচুক্তি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট—আমরা জয় পেয়েছি জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে। স্বল্প আয়ের দেশ বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল উন্নয়নশীল দেশে উপনীত। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উত্তরণ দৃষ্টিগ্রাহ্য আয়ত্তে। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ও অনিশ্চয়তা থেকে আমরা মুক্ত। বাংলাদেশ আজ পরিচিত উদীয়মান, মানবিক ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে।

এ অর্জন আমাদের রক্ষা করতেই হবে—যেকোনো মূল্যে এবং আমরা অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাব। এর জন্য প্রয়োজন জ্ঞানের চর্চা, উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা, অনুশীলন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা, চিন্তাভাবনা ও তা ধারণ করার যথোপযুক্ত ও সহায়ক অবকাঠামো, অবয়ব, পরিবেশ ও সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব। মননচর্চা ও অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। চাই সুষম ব্যবস্থা, আঞ্চলিক সমতা, বৈষম্যহীন সমাজ, সবার জন্য সম্পদের স্বত্বাধিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা, মমত্ববোধের বিস্তার, দক্ষ মানবশক্তি, প্রযুক্তি ও প্রবৃদ্ধির প্রসার, যা বর্তমানে বহমান। এসব লালনের লক্ষ্য রেখেই এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সুবিন্যস্ত এ ভবনে রয়েছে সুপরিসর কার্যক্ষেত্র, গবেষণাগার, ডিজিটাল ব্যবস্থাদি, ডাটা সেন্টার, সেমিনার রুম, সভাকক্ষ, গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা ইত্যাদি। বিশাল দায়িত্ববান রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের যা কিছু প্রয়োজন সব কিছুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আমরা চিন্তা করব, চিন্তা করাব; আমরা ভাবব, ভাবাব; শিখব, শেখাব। আমরা দেশ ও বিশ্বকর্মকাণ্ডের মূলস্রোতে থাকতে চাই।

আমরা জানি আমাদের সম্পদ অপ্রতুল। আমাদের জনসংখ্যা অধিক। কিন্তু আমাদের চাহিদা ও স্বপ্ন অনেক। ছোট দেশ, ব্যাপক দারিদ্র্য, প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদ কম। এ সমীকরণ জটিল ও সমাধান দুষ্কর। শেখ হাসিনা কঠিন কাজটি হাতে তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য সংবেদনশীল, বুদ্ধিদীপ্ত, দূরদর্শী সৃজনশীলতা সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন এবং আমাদের উন্নয়ন ও উপভোগ, সৃজিত সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। এ দুরূহ সমীকরণের সমাধান করার লক্ষ্যে আমাদের নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু তাঁর পাশে আমাদের সক্ষমতা নিয়েই এগিয়ে আসতে হবে।

এই নবনির্মিত ভবন ও নান্দনিক বৈশিষ্ট্য নিবেদিত রাজনৈতিক কর্মী, গবেষক, চিন্তাশীল ও সুধীজনের সমাহার ও ব্যস্ত কর্মপ্রবাহ—আশা করি অসীম শক্তির উৎসস্থলে পরিণত হবে।

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর কিভাবে ইতিহাস বিকৃত করার প্রচেষ্টা চলছে এবং বিকৃত রাজনীতির স্বার্থে সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। অতীতের সরকারগুলোর হাতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়েছিল উৎপাদন অক্ষম বা অনুৎপাদনশীল।

এই দুষ্টচক্র থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে, যা আমরা এরই মধ্যে শুরু করেছি। আশা করি, এ ভবন থেকে উৎসারিত চিন্তাভাবনা, সুস্থ শিক্ষা ও রাজনীতি বিষয়ক গবেষণা ও প্রয়াস আকাঙ্ক্ষিত নানা বিষয়ে দেশকে পথ দেখাতে সক্ষম হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় দেশ Production Possibility Frontier—উৎপাদনের অসীম সীমারেখায় পৌঁছতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির কবি (Poet of Politics)| আমি মনে করি, তিনি রাজনীতির রাজপুত্রও বটে। কিন্তু এ রাজপুত্রের মাথায় মুকুট ছিল না, পেছনে সিংহাসন ছিল না, হাতে তরবারি ছিল না, ছিল শুধু হৃদয়ের মহৎ ক্রন্দন ও হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। এই ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে উত্তরাধিকার বহন করছেন শেখ হাসিনা। তিনি আজ বাংলাদেশের হাল ধরেছেন। জয় ও অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী। তিনি সোনার বাংলা নির্মাণ করবেন—এ এক আশ্চর্য সম্পদ ও মর্যাদা। এ মহৎ অভিযাত্রার সাক্ষী হয়ে থাকবে এ ভবন।

কাল ২৩ জুন ২০১৮ শুভ দিন। তিনি এ ভবন উদ্বোধন করবেন, যা হবে আমাদের শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস। অনুপ্রাণিত আমরা ছড়িয়ে যাব মানুষের কাছে, তাদের সঙ্গে বসবাস করব, জানব ও জানাব, ভালোবাসাবাসির বন্ধনে আবদ্ধ হব।

এ ভবন অতীত গৌরব, ত্যাগ-তিতিক্ষা, ইতিহাসের কথা বলবে; এ ভবন বর্তমান রাজনীতি এবং মহৎ নেতৃত্বের কথা বলবে; এ ভবন কথা বলবে হিরণ্ময় ভবিষ্যৎ ও সোনার বাংলার। এ ভবন নির্বাক নয়, সবাক। এ ভবন চলত্শক্তিহীন স্থবির নয়, এ ভবন সচল-প্রাণরসে পুষ্ট, সংকল্পে দৃঢ় ও শক্তিমান। It will belong to ages. অনাগত কালের সঙ্গে এ ভবন যুক্ত হয়ে যাবে।

 

লেখক : সংসদ সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ।

এসএইচ/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি