ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা

আকবর হোসেন সুমন

প্রকাশিত : ১২:৫৬, ২৪ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৩:০২, ২৪ জুন ২০২০

গত চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন কিংবা মৃত্যুর পরোয়ানাকে তোয়াক্কা করে পিছপা হননি তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে দল ও দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। এক হাতে সামাল দিয়েছেন নানামূখী ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে বিশ্বের কাছে মাতৃভূমিকে নিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। 

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হলো মঙ্গলবার। দেশের অন্যতম প্রাচীন এ দলের ত্যাগ তিতিক্ষায় যে অর্জন তা জনমানুষেরই কল্যাণে। যে দলের নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে পূর্ব বাংলার মানুষ, সেই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও কারিগর শেখ মুজিবের অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞেই নিজেকে নিবেদন করেছেন শেখ হাসিনা। 

ঐতিহ্যবাহী এই দলটি একদিনে গড়ে ওঠেনি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলেও মুক্তির হাহাকার কমেনি বাঙালি জাতির। অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণ আর বঞ্চনা নিয়েই চলছিলো। তবুও পশ্চিম পাকিস্তানিদের অত্যাচার, নির্যাতন, চরম অবেহলা, বৈষম্য ও দুঃশাসনে নিষ্পেষিত বাংলার জনগণ মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ খোঁজে। ঠিক সেসময় শৃংঙ্খল ভেঙে বঞ্চিত বাঙালির আশার বাতিঘর প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। জন্মলগ্নে নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।

ঢাকার কেএম দাস লেনে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ প্রাঙ্গণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির প্রথম কমিটিতে মাওলানা ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে থাকা অবস্থায় যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার পর দলের কাণ্ডারী পরিবর্তন হয়েছে। হাল ধরেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দলের লক্ষ্য, আদর্শ ও নীতিমালা ঠিক করে নিয়েই অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুক্ত করেছেন গণমানুষকে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর নেতৃত্বশুন্য দলটি বিভাজনের নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের নিপীড়নে গণতন্ত্র যেমন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এমনই এক অগোছালো পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে দীর্ঘ নির্বাচনের পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর পরে শূন্যস্থান পূরণে বিকল্প ছিলোনা বলেই ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি মনোনীত করেন সিনিয়ররা। দেশে ফিরিয়ে আনতে দল বেধে ভারত যান নীতি নির্ধারকরা। 

দেশে ফিরেই দলের দায়িত্ব তুলে নেন শেখ হাসিনা, ঠিক যেমন দেশ গড়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন পিতা শেখ মুজিব। শুরুতেই দল গোছানোর মতো কঠিন কাজটি করতে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছেন আগাছায় ভরা দলের হাল দেখে। দু’মুখো সাপের ডেরায় থেকে শক্ত হাতে খুটি বেঁধেছেন আওয়ামী লীগের। দ্বিধা বিভক্ত দলে নিজের অবস্থান তৈরি করতে আরেকটা যুদ্ধ করতে হয়েছে নিজের সাথেই। স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দল ও দেশের জন্য নিবেদিত কর্মীদের বাছাই করেছেন দৃঢ়তার সাথে। ৭৫-এ স্বজন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ফেরা এক নারী শেখ হাসিনা। দলকে শক্তি ও সাহসে পরিণত করে হারানোর যন্ত্রণা ভুলে থেকেছেন। 

প্রত্যেক জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে আস্থা অর্জন করেছেন, তেমনি জহুরীর মতো দক্ষতায় তৃণমূলে সৃষ্টি করেছেন যোগ্য নেতৃত্ব। এ বেলায় দক্ষিণ তো ও বেলায় উত্তর, দল গোছাতে শেখ হাসিনা ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের নানা প্রান্তে। তৃণমূলের ভীত গড়ে সেই শক্তি নিয়েই পা রেখেছেন রাজনীতির মাঠে। 

আওয়ামী লীগের পথ চলা কখনোই সহজ ছিলো না। ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নামেন শেখ হাসিনা। সে আন্দোলনে পাশ থেকে অনেকেই সরে গেছেন, আবার কেউ কেউ সেই কাতারে কাঁধ মিলিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করেছেন। তবুও পিছপা হননি তিনি। সামরিক শাসনের ঘোড়দৌড়ে লাগাম টেনে ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিতে রাজপথেই খুঁজে নেন সমাধান। একসময়ে জনরোষে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থানে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ।

৭১ বছরের পথ চলায় প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। পরের মেয়াদে জামায়াত বিএনপি জোটের ক্ষমতার রাজনীতি আর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আবারও হোঁচট খায় আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অনেকটা সুসংহত হতে সক্ষম হয়ে জোটসরকার বিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছিল দলটি। ওই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আবারও সংকটের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ও শীর্ষ নেতারা অনেকেই গ্রেফতার হন। পাশাপাশি দ্বিতীয় সংকট তৈরি করে একাংশের সংস্কার তৎপরতা।

আলোচিত এক এগারোর মাইনাস ফর্মুলায় শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকেই নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র ছিলো। একাত্তরের অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যে বাঙালী স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, সেই বাঙালী স্বাধীন দেশে সামরিক শৃঙ্খল চায়নি। সে দফায়ও জনগণের চাপের মুখেই শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো। মামলার বোঝা তো মাথায় আছেই।

প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ৭০ এর নির্বাচনের মতোই বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ বিরতির পর আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এরপর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রপ্তানী আয় কাজে লাগিয়ে এবং দারিদ্রের লাগাম টেনে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন দেশকে। টানা তিন মেয়াদে বিশ্বসভায় দেশের মানচিত্র ও পতাকার স্থান সুদৃঢ় করেছেন। আন্তর্জাতিক অর্জনগুলোও সমৃদ্ধ করেছে দেশের ভাবমূর্তি। 

দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে এ পর্যন্ত ২১ বার হত্যা চেষ্টা হয়েছে শেখ হাসিনাকে, উৎরে গেছেন প্রতিবারই মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর দেশপ্রেমের নিগূঢ়তায়। জোট সরকারের মেয়াদ শেষের আগেই ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা হয়েছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো অপ্রতিরোধ্য যে গতিতে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা এগিয়ে নিচ্ছিলেন তার গতি রোধ করা।

নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সুখী সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াসহ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। চার দশকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পেয়েছে পূর্ণতা আর দেশ পেয়েছে অদম্য সাহস। 

লেখক- স্টাফ রিপোর্টার, একুশে টেলিভিশন।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি