বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের ১১তম দিনে পুতুলনাট্য
প্রকাশিত : ২২:৩৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২০
জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ দ্বিতীয়বারের মতো ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’ আয়োজন করেছে। দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞ পরিচালিত হবে। ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। উৎসবে প্রতিদিন ৩টি জেলা, ৩টি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে একটি লোকনাট্য পরিবেশিত হবে।
১৩ জানুয়ারি উৎসবের ১১তম দিন বিকাল ৪টায় নন্দনমঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এরপরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনায় দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী সাফিন ও শৈলি। সোহেল রহমানের পরিচালনায় কোলাজ: ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে, তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ এবং জয় বাংলা বাংলার জয়, গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশিত হয়। পিপলস্ থিয়েটার এসোসিয়েশনের প্রায় তিনশতাধিক শিশুর অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় শিশু সংগীত এবং ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরিচালনায় বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে ‘কথা আবৃত্তি সংগঠন’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পরিবেশনায় জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, সমবেত সঙ্গীত ‘সুন্দইরা মাঝির নাও উজান চলে ধাইয়া’ নৌকা বাইচের গান এবং ‘শ্যাম পিড়িতের এত যন্ত্রণা’ আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে শিল্পী ঝুমা ঘোষ, প্রিয়াংকা চক্রবর্তী, মনিষা ঘোষ, অনামিকা মল্লিক, অভিজিৎ সাহা, সুব্রত সাহা, তাহজিব আহমেদ, বাবুল দাস ও সঞ্জিব সূত্রধর। ‘ঢোল বাজে ঢোল বাজে, গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী মুসরারাত নূর অহনা, নাহিয়ান ইবনে হাসান, ফাহমিদা খানম মেঘলা, জান্নাতুল মাওয়া, তিথি দেব, মিথি দেব, অনিক সাহা, উৎপল দেবনাথ, নানজীবা শায়েরী ইশরা ও রুহা মেহজাবিন রঙিন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী রাজু চক্রবর্তী। যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী রাজু চক্রবর্তী, অভিনাশ মন্ডল এবং শ্রী চরণ দাস।
পিরোজপুর জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে’ 2টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী সঞ্জয় কুমার মিত্র, তনজিন আফরিন জিসা, রিনা দাস, স্মৃতি রাণী বড়াল, আজিজুল ইসলাম শান্ত, আবু সাঈদ, আরাফ, জসিম, প্রজ্ঞা বিশ্বাস ও নিশাত। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এবং আঞ্চলিক গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী তনুশ্রী ডাকুয়া, পায়েল দে, ঐশি রাণী, নাজমুন্নাহার মিম, রাকি মনি, জাভেদ আহমেদ আলভী, তানহা ইসলাম জিসান, ওবায়েদুল ফাত্তাহ, জিৎ ও ইভান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী এজাজ আহমেদ খান এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী তানজিম আহমেদ জিসা। যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী বিজয় মন্ডল, স্মৃতি রাণী বড়াল, কামরুল ইসলাম, ইমন ও অনুপ।
কক্সবাজার জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানি এবং আয়রে চাষী শ্রমিক মজুর’ গানের কথায় ২টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী মোবারক আলী মনির, মুমতাহাসীর নূর তাজবী, নাসির উদ্দিন বিপু, বেলাল উদ্দিন মনি, মোহাম্মদ সেলিম রুবেল, পূনিতা বড়ুয়া, রাবেয়া আক্তার, অর্পিতা দত্ত, প্রিয়া দত্ত ও পলি বড়ুয়া। ‘হাজার বছর ধরে এবং একটি গল্প শোনাব আজ’ গানের কথায় 2টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী অদিতি বড়ুয়া, অত্রী, গুনগুন, কাব্য ও অংকিতা বড়ুয়া। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী সমরজিৎ রায় এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন। যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সচিব কর্মকার, হাসান উল্লাহ ও আবছার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সমরজিৎ রায়।
একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত 8টায় দর্শনীর বিনিমেয়ে মঞ্চস্থ হয় শ্রী মঙ্গলু চন্দ্র রায়ের পরিচালনায় দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘পুতুলনাট্য’ ।
আগামীকাল ১৪ জানুয়ারি ২০২০ বিকেল বিকাল ৪টা থেকে একাডেমির নন্দনমঞ্চে পরিবেশিত হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি ও মাগুরা জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রাত 8টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনির মিনিময়ে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী ‘গম্ভীরা।
গত 3 জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার বিকেল 5টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান; উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন একাডেমির সচিব মো: বদরুল আনম ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ হাজার বছরের বর্ণিল ও বিচিত্র সংস্কৃতির অপরূপ লীলাভূমি। হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে আজও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতি আমাদের অন্যতম শক্তি যা বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বাতন্ত্রকে জানান দেয়। বাঙালি সংস্কৃতির রূপ, নির্মিত ও পরিবেশনা কৌশল আসলে মিশ্র প্রকৃতির; বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা, ভাষা ও প্রকরণের সমন্বয় ঘটে আমাদের সংস্কৃতি আজকের জায়গায় পৌঁছেছে।
২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশনার মধ্যে রয়েছে সমবেত সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, একক সংগীত, বাউল সংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, সমবেত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা, পুতুল নাট্য, একক আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীত ও নৃত্য, নাটকের কোরিওগ্রাফি, বৃন্দ আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবেশনা, আঞ্চলিক ও জেলা ব্রান্ডিং বিষয়ক সংগীত ও নৃত্য এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী।’
আরকে//