বাগেরহাটে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশিত : ২২:৩০, ১৮ জুলাই ২০১৯
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বদলী করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি। বদলীকৃত শিক্ষকদের পুন:রায় স্ব-কর্মস্থানে ফিরিয়ে আনতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আদেশ দিলেও গত দু’মাসে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে- অর্থের বিনিময়ে ওইসব শিক্ষকদের বদলী করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি। এ বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলী নির্দেশিকা-২০১৯ অনুযায়ী, যে সকল বিদ্যালয়ে ৪ জন বা তার কম সংখ্যক শিক্ষক আছেন সেসব বিদ্যালয় থেকে প্রতিস্থাপন না করে সাধারণভাবে শিক্ষক বদলী করা যাবে না।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, উপজেলার ১৩৩ নং ধানসাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকে মাহাফুজা আক্তারকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলী করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। ২১৫ নং সন্নাসী বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে চম্পারানী হালদারকে অন্যত্র বদলী করেন তিনি। শুধু এ দুটি বিদ্যালয়ই নয়, উপজেলার ১০টির অধিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিনি এভাবেই বদলী করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট দু'একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষকদের বদলী না করার আবেদনও করেছেন। আবেদনের প্রক্ষিতে গত ৭ মে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিন বদলীকৃত শিক্ষকদের বদলীর আদেশ বাতিল করে মূল বিদ্যালয়ে সংযুক্তি করণের আদেশ দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দিকে।
কিন্তু সে আদেশ দেয়ার পর দুই মাস অতিবাহিত হলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি বিষয়টি আমলে না নিয়ে তার নিজের নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বহাল রেখেছেন। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
২১৫ নং সন্নাসী বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তফা বলেন, আমার বিদ্যালয়ে মাত্র ৪ জন শিক্ষক ছিল। সেখান থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি একজন শিক্ষককে তার পছন্দের জায়গায় বদলী করেন। নিয়ম বহির্ভূত বদলীর বিষয়টি আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানালেও কোন ফল পাইনি। এছাড়া বদলী হওয়া সহকারী শিক্ষক চম্পারানী হাওলাদার বদলীকৃত কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আমার কাছ থেকে ছাড়পত্রও নেয়নি।
১৩৩ নং ধানসাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ এনামুল হক বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমার বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষককে বদলী করেছেন। বদলী করার সময়ে আমাকে বলেছেন, আমার বিদ্যালয়ে আরেকজন শিক্ষককে দিবেন, কিন্তু তা এখনও দেননি।
১৭১ নং পূর্ব আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তার বলেন, আমার বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক ছিল। সেখান থেকে মিতা হালদার নামে একজন সহকারী শিক্ষককে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। বর্তমানে মাত্র দুই জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষকদের নিয়মের মধ্যেই বদলী করা হয়েছে। তারপরও জেলা কর্মকর্তা মহোদয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তবে অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে গিয়ে প্রতিবেদককে অফিসে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিন বলেন, বদলীর বিষয়ে কোন প্রকার অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। মোরেলগঞ্জে সহকারী শিক্ষকদের বদলীর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যার প্রেক্ষিতে ওইসব শিক্ষকদের পূর্বের বিদ্যালয়ে ফিরে আসার জন্য বদলী আদেশ বাতিল করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দীকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এনএস/এসি
আরও পড়ুন