বাদীর সম্মতি ছাড়াই মামলার আসামি বেরোবি শিক্ষক!
প্রকাশিত : ১৪:০১, ২৮ আগস্ট ২০২৪
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হককে বাদীর সম্মতি ছাড়াই মামলায় আসামি করার অভিযোগ উঠেছে।
ওই শিক্ষককের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে জানা যায়, তিনি কোটা আন্দোলনের পক্ষে সরব ছিলেন প্রথম থেকেই। ফেসবুকে একাধিক পোস্টও দিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের জন্য। প্রতিবাদী এই শিক্ষককে গত ১৮ জুলাই রংপুরে মডার্ন মোড়ে অটোচালক মানিক মিয়া হত্যাকাণ্ড মামলায় ১৯ নম্বর ‘আসামি’ করায় সকল মহল হতভম্ভ।
জানা যায়, রংপুর শহরের মডার্ন মোড় এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন মানিক মিয়া। গত ২০ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলাও করে তাজহাট থানায়। তখন মাহামুদুল হকের নাম ছিল না।
মামলার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাজহাট থানার ওসি বলেন, ৩১ তারিখে আদালতের আদেশ আসলে মামলার কাজ শুরু হবে।
মাহামুদুল হক বলেন, ‘মামলাটি করেছেন নিহতের মা, যিনি আমাকে চেনেন না। মামলার বিবরণ পাঠ করে জানলাম অটোচালক নিহত হয়েছেন আর আমি নাকি এর জন্য গিয়েছি কোটা বিরোধীদের সঙ্গে। রংপুর শহরের মর্ডানে যে স্থানে পুলিশ গুলি করেছে সে স্থানটি এখনও আমি চিনি না।’
মাহামুদুল হক আরও জানান, তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন, আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করা রাইটস ডিফেন্ডার। পুলিশকে গুলি করানোর মতো তার এখতিয়ার যেমন নেই তেমনি এ ঘৃন্যকাজ করা সম্ভবও নয় বলেও তিনি জানান।
মামলার বাদী নিহত মানিক মিয়ার মা মোছা. নুরজাহান বেগম বলেন, বাড়িতে আমার ছেলের বউ ছিল না। ছেলে ছিল না। বেটি-জামাই কেউ ছিল না। আমি মামলা করছি, আমি বুঝবার পারিনি। মামলা কিভাবে সাজাইছে তাও আমি জানি নে। আমি তো নামও লেখতে পারিনা বাবা। তাও কলম আমার হাতে দিয়া নাম লেখায়। আমি বলছি সই দিব না, উকিল বলে লেখো তো।
মাহামুদুল হককে চিনেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, না, আমি চিনি না। আমি খুবই দুঃখিত বাজান।
কিভাবে মাহামুদুল হকের নাম মামলায় আসলো এ প্রসঙ্গে মামলার আইনজীবী আলাউদ্দিন বলেন, আমি তো এইটা বলতে পারবো না। এইটা বাদী বলতে পারবে। মামলা স্থগিত আছে। মামলার আইনগত ঝামেলা আছে। সাক্ষীরা যাদেরকে দেখেছে তাদের নামটাই এসেছে বলেন বাদীর আইনজীবী।
বেরোবি বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, একটা মানুষ ঘটনাস্থালে না থাকলে মামলায় নাম দেওয়াটা দুঃখজনক।
আইনজীবীরা বলছেন, এভাবে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে মামলার আসামি করা হলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবেন। এই শিক্ষককে হয়রানি করার জন্যই তাকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সঠিক সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকলে মামলার গুরুত্ব কমে যায়। হয়রানির শিকার হন নিরপরাধ মানুষেরা। একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া সন্তান হারানোর কষ্ট বা বাবা হারানো কষ্ট মারাত্মক কষ্ট কিন্তু আমাদের মামলাটা যেন এমন না হয় যাতে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা। মামলাটা যেন এমন হয় যাতে সত্য বের হয়ে আসে। মূল অপরাধীরা যাতে সাজা পায়।
এএইচ
আরও পড়ুন