ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বাড়ছে সিমেন্টের দাম: দায়ী ৫ কারণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮


দেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে রডের দাম বাড়ানো হলেও সিমেন্টের দাম অপরিবর্তিত ছিল। তবে সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের দাবি, বর্তমান দামে সিমেন্টে বিক্রি করলে তাদের আর্থিক ক্ষতি গুণতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই প্রতিবস্তা সিমেন্টের দাম ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে ৫টি কারণ দাঁড় করিয়েছেন তারা।

সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, এ খাতের সবগুলো কাঁচামালই আমদানিনির্ভর। বৈশ্বিক বাজারে সিমেন্টের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর কাঁচামালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। সিমেন্ট উৎপাদনে প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল হলো ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম। মূলত, সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত ক্লিংকারের দাম আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সিমেন্টের দামের উপর। সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির তথ্যানুসারে, ২টি কারখানা ক্লিংকার উৎপাদন করলেও বাকি ৩২টি কারখানা ক্লিংকারসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করেই সিমেন্ট প্রস্তুত করে।

শুধু ক্লিংকারের দাম-ই নয়, দাম বেড়েছে জ্বালানি তেলেরও। এ ছাড়া সিমেন্টের ব্যাগের দামও বেড়েছে আগের তুলনায়। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি গ্যাসের দামও। এদিকে শুধু কাঁচামালের দাম-ই নয় খরচ বেড়েছে পরিবহন ব্যবস্থারও। এ ছাড়া বাংলাদেশের বন্দরের চিরায়ত সমস্যাতো রয়েছেই। বন্দরের অনিয়ম ও পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তাঁদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে প্রস্তুত পণ্য পরিবহন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই খরচ বেড়েছে। এখন প্রতি বস্তা সিমেন্টে বাড়তি খরচ হচ্ছে কোম্পানিভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বাড়তি খরচের একাংশ সমন্বয় করা হয়েছে। তাই প্রতিবস্তা সিমেন্ট প্রতি ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাম বাড়ার আগে মানভেদে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হতো ৩৪৫ থেকে ৩৯০ টাকা। এখন প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৬৫ থেকে ৪১০ টাকা।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতি ও উদ্যোক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সিমেন্ট খাতে উৎপাদনে রয়েছে ৩৪ কারখানা। এগুলো ২০১৭ সালে সম্মিলিতভাবে উৎপাদন করেছে প্রায় আড়াই কোটি টন সিমেন্ট। এ হিসেবে দাম বাড়ায় সিমেন্ট ব্যবহারকারীদের বছরে বাড়তি ব্যয় করতে হবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে বছরে সিমেন্টের বেচাকেনা দাঁড়াবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই পাঁচটি কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ টন। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানি হয় ১ কোটি ৪৫ লাখ টন। উদ্যোক্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েছে টনপ্রতি চার থেকে পাঁচ ডলার। ক্লিংকার রপ্তানিকারক দেশ চীন, নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্লিংকার আমদানি শুরু করেছে। এতে চাপ পড়ছে বৈশ্বিক বাজারে। মূলত চীনের আমদানিই বিশ্ববাজারের ক্লিংকারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে রডের পর সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আবাসন খাতে। আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবি, এরই মধ্যে তারা ফ্ল্যাট বিক্রি নিয়ে ঝামেলায় ভোগছেন। ক্রেতারা প্রস্তুতকৃত দামেও ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন না। এরইমধ্যে রডের বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা ক্ষতির মধ্যে আছি। এবার সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি করায় ফ্ল্যাট নির্মাণে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এতে আবাসন খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

এমজে/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি