ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বাড়ির নিচে গুপ্তধন, চলছে খননের প্রস্তুতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:০১, ২০ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২১:৪১, ২১ জুলাই ২০১৮

রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়িতে গুপ্তধন আছে। এমন গুঞ্জন গত এক সপ্তাহ ধরে চারদিকে চউর হতে থাকে। ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির সামনে কিছু ছেলে বুড়ো বসে আছে তীর্থের কাকের মতো। আশে পাশের বাসার জানালা দিয়ে অনেকে তাকিয়ে আছে বাড়িটির দিকে।     

সপ্তাহ খানেক ধরে বাড়িটি পাহার দিচ্ছে মিরপুর-২, থানার তিন পুলিশ সদস্য। বৃহস্পতিবার গিয়ে তাদেরকে পাহারত অবস্থায় দেখা যায়। সোনার হরিণের খোঁজে আশপাশের অনেক মানুষকে ভিড় করতেও দেখা যায়।  

জানা গেছে, গত ৯ জুলাই থেকে গুঞ্জন ছড়ায়, ওই একতলা বাড়ির মাটির নিচে স্বর্ণ-অলংকার, দামি মূর্তি, কষ্টি-পাথর আরও অনেক মহা মূল্যবান গুপ্তধন রয়েছে। গুঞ্জনের সত্যতা আরও বেড়ে যায় যখন পুলিশ দিনরাত বাড়িটি পাহারা দেওয়া শুরু করে।  

দূর-দূরান্ত থেকে গুপ্তধন থাকা বাড়িটি পরিদর্শন করতে এসেছেন উৎসুক জনতা। গুপ্তধনের রহস্য উন্মোচন করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে মিরপুর থানা পুলিশ। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোটি টাকা মূল্যের বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা বলে দখল, হাতবদলের চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। যা ঘটনার ধারে কাছেও তারা নেই। 

আরও জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই বাড়িটির বর্তমান মালিক দাবিদার মনিরুল আলম মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে এলাকার লোকজনের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে। এ কারণে বাড়িটির সামনে প্রতিদিন লোকজন ভিড় করছে। যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।  

বাড়িটির সামনে কর্তব্যরত এএসআই মুসলিম জানান, ‘গুপ্তধন আছে সন্দেহে জিডি করার পরে আমরা পর্যায়ক্রমে পাহারা দিচ্ছি। বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়া তুলে দিয়েছি। যেহেতু জনশ্রুতি আছে বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন আছে তাই এখানে ভীতিকর একটা অবস্থাও তৈরি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, দুই কাঠার উপর একতলা বাড়ির ভিতরে রয়েছে আটটি কক্ষ। যেখানে ভাড়াটিয়া ছিল। বাড়ির খননে মালিকের কোন আপত্তি নেই বলে জানায় পুলিশ। খননের খরচও তিনি বহন করবেন। যদি গুপ্তধন পাওয়া যায়, তাহলে তা বেওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে।  

উল্লেখ্য, জিডির কথা উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই এ ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই ও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বাড়িটি খনন করা প্রয়োজন। 

মিরপুরের ওই বাড়িটির নিচে দুই মণের বেশি স্বর্ণালঙ্কার ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে।   

গতকাল মিরপুরের ওই বাড়িটির আশপাশের অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, পাঁচ-ছয়বার হাতবদলের পর বাড়িটির বর্তমান দখলদার মনিরুল আলম। তিনি বাড়িটিতে থাকেন না। এমনকি বছরখানেক ধরে ভাড়াটিয়াও নেই ওই বাড়িতে। আট কক্ষের বাড়িতে মালিক পক্ষ মোহাম্মদ সুমন রেজা নামে একজনকে দায়িত্ব দেন। 

সুমন রেজা একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে এই বাড়িটি দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারও মানুষ এসেছে। খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা দিন রাত পাহারা দিচ্ছে। সবাই বলাবলি করছে- বাড়িটির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে। আমরাও এমনটা শুনেছি। আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।’ 

বাড়ির মালিক কে? আপনাকে এখানে কে নিয়োগ দিয়েছে জানতে চাইলে কথা কিছুটা এড়িয়ে যায় সুমন।  

বাড়িটির মূল তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, আড়াই বছর ধরে বাড়ির মূল মালিকের সঙ্গে তার দেখা নেই। শহীদুল্লাহ নামে মালিকের এক ঘনিষ্ঠ লোকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন। বাড়ির ভালো মন্দ সব কিছু তাকে জানান। 

জানা গেছে, যে পক্ষ থানায় গিয়ে দাবি করেছে ওই বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে, তারা কক্সবাজার ও ঢাকায় জমি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। কোনো পক্ষের হয়ে তারা বাড়িটি কৌশলে দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে কি-না তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। 

মিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) ওয়াহিদুজ্জামান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘বাড়ির মালিকের দায়ের করা জিডি’র প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে এই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সেখানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়িটি খোঁড়া হবে। আসল তথ্য পেতে সেই পর্যন্ত সবাই কে অপেক্ষা করতে হবে।’ 

এসি  

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি