বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন
বিদেশি ঋণের প্রবৃদ্ধি উদ্বিগ্নতা বাড়াচ্ছে অর্থনীতিতে
প্রকাশিত : ১৭:৫৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৮
বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে চারশ’ কোটি ডলার বেসরকারি খাতে বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণ ছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ১১শ’ কোটি ডলার। বিদেশী এ ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ শতাংশ। বেসরকারি খাতে বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণ বৈদেশিক মুদ্রার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। যা অর্থনীতিতে উদ্বিগ্নতা বাড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে‘ প্রাইভেট কমার্শিয়াল বোরোয়িং ফ্রম ফরেন সোর্সেস ইন বাংলাদেশ: অ্যান অ্যানাটমি’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান। এছাড়া বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিডার নির্বাহী কমিটির সদস্য নাভাস চন্দ্র মন্ডল, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণের ১১ ধরণের উদ্বিগ্নতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ফরেন কারেন্সি রিস্ক, মোরাল হ্যাজার্ড, কস্ট অব বোরোয়িং, ফরেন কারেন্সি বোরোয়িং লোকাল বিজনেস অর্গানাইজেশন, লোন ইউটিলাইজেশন, পলিসি আনসার্টিইনিটি, পলিসি সাপোর্ট, ভেরিফিকেশন অব অ্যাপ্লিকেশন, বোরোয়িং ফ্রম অফ শোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং ঋণ অনুমোদনে দীর্ঘ সূত্রিতা। এতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২৪ শতাংশ বিদেশী ঋণ পোশাক খাতে। এরপর বিদ্যুতে ২১শতাংশ, সুয়েটারে ১৬শতাংশ,ডায়িং ও নীট গার্মেন্টসে ১২শতাংশ, টেক্সটাইলে ১১শতাংশ, প্ল্যাস্টিকসে ৫শতাংশ, সেবায় ৩শতাংশ এবং ওষুধে ২শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান বলেন, ব্যবসায়ী বিশেষ করে রফতানিকারকদের দাবীর প্রেক্ষিতে বিদেশী ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে প্রথম দিকে এ ঋণের কিছু অপব্যবহার হয়েছিল। এখন এ ধরণের ঘটনা ঘটে না। পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোরভাবে নজরদারী করছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ বেসরকারি খাতে বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশে এ ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও বিষয়টি সর্তকতার সঙ্গে দেখতে হবে।
বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণের প্রয়োজন য়েছে। তবে বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণ যেন ভিন্ন খাতে ব্যবহার না হয় সেদিকে বিশেষ নজরদারী করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করলে তারল্য সংকট থাকবে না। তবে এজন্য সরকারি বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করা জরুরী। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিলে ব্যাংকিং খাতে কোন তারল্য সংকট থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিডার নির্বাহী কমিটির সদস্য নাভাস চন্দ্র মন্ডল বলেন, ২০০৯ সালের দিকে ব্যাংকে উচ্চ সুদের কারণে একটি সংকট সৃষ্টি হয়। ব্যাংক ঋণ নিয়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে অনেক বেশি খরচ পড়ে যাচ্ছে। আরও কয়েকটি কারণে সরকার বিদেশী ঋণের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ঋণ গ্রহীতাদের ঋণের অর্থ সঠিক বিনিয়োগ করতে হবে।
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে কোন সংস্থার এক টাকাও খেলাপী না। অথচ ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের অর্থ ঋণ খেলাপী হয়ে পড়েছে। এটা মানা যায় না। ব্যাংকে ক্যাশ রিকভারী অনেক কমে গেছে। এটি ভাবনার বিষয়। কেন এটা হচ্ছে তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণ ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে অর্থনীতিতে তার বড় ধরণের প্রভাব পড়বে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বিদেশী ঋণ নিয়ে খাতুন গঞ্জের ব্যবসায়ীদের একটি অংশ তাদের স্থানীয় ঋণও পরিশোধ করতে দেখা গেছে। এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব -উল-আলম বলেন, বিদেশী ঋণের ব্যবহার বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সব পক্ষকে সর্তক থাকতে হবে। বিদেশী ঋণে অনেক ধরণের ঝুঁকি রয়েছে- এ কারণে ব্যাংকারদের পাশাপাশি গ্রাহকদেরও ভালো ধরণা থাকতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশী ঋণ অর্থনীতির জন্য চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে সরকারের সৃষ্টি রাখতে হবে। রেমিটেন্স, রফতানি এবং উৎপাদনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদেশী ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, বিদেশী ঋণের কোন অপব্যবহার না হয় সে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে নজরদারী করতে হবে। এটি না করতে পারলে ঝুঁকির মুখে পড়বে অর্থনীতি।
আরকে// এআর
আরও পড়ুন