ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশে পড়াশোনার জন্য যে ১০ দেশে খরচ কম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৮, ১১ জুলাই ২০২৩

উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার আশা কার না আছে। অনেকে মনে করেন দেশে পড়াশোনা করে দেশেই ক্যারিয়ার গড়বেন। কিন্তু সবার চিন্তা ভাবনা তো আর এক নয়। অনেকেই স্বপ্ন দেখেন বিদেশে পড়াশোনা করে সেখানেই উন্নত জীবন যাপনের। তবে সবার স্বামর্থ এক নয়। এমন স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে অর্থের প্রয়োজন তা হয়তো অনেকেরই নেই। এমন পরিস্থিতিতে কম খরচের দেশ গুলোতে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। চলুন জেনে নিই, বিশ্বের কোন দেশগুলোতে পড়াশোনা এবং জীবন ধারণের ব্যয় তুলনামূলক কম। 

জার্মানি

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি। সে দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় খরচে চলে। ব্যাচেলর কোর্স ও বেশিরভাগ মাস্টার্স কোর্সের জন্য সাধারণত ফি নেই। কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রামে টিউশন ফি থাকলেও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।

জার্মানিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ সাধারণত প্রতি মাসে ৭২৫ ইউরো (প্রায় ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা) মতো হয়ে থাকে।

ফ্রান্স

ফ্রান্সে স্নাতকের পর বিদেশি শিক্ষার্থীরা সেখানে ব্যবসায়িক খাতে আকর্ষণীয় কাজের সুযোগ পেতে পারেন। যেকারণে ফ্রান্স অনেকের প্রথম পছন্দ। 

এখানে স্নাতক স্তরে বছরে খরচ হতে পারে ২ হাজার ৭৭০ ইউরো (প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা)। মাস্টার লেভেলে বছরে খরচ হতে পারে ৩ হাজার ৭৭০ ইউরো বা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা।

জীবনযাত্রার জন্য দেশটির অভিজাত শহরগুলো বাদ দিয়ে ছোট শহর বেছে নিলে ৬৫০ ইউরোর (প্রায় ৬২ হাজার ৬৫০ টাকা) কমে থাকা যাবে।

স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ

উত্তর পূর্ব ইউরোপের পাঁচটি দেশ ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন। এই পাঁচ দেশে জীবনযাত্রার উন্নত মান ও বিখ্যাত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচিত। এসব দেশে প্রতি বছর ভিড় জমায় হাজারো মানুষ। কোপেনহেগেন, অসলো, হেলসিংকি, স্টকহোমের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদা বর্তমানে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান প্রতিটি দেশেই সেদেশের ভাষার দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। নরওয়েতে বিশ্বমানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প খরচে পড়াশোনা করা সম্ভব, সেক্ষেত্রে নরওয়েজিয়ান ভাষায় দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডেও বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে যার মাধ্যমে বিনামূল্যে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার সহায়তা পাওয়া যায়। তবে এসব সুবিধা স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য দেওয়া হয়।

পোল্যান্ড

সাড়ে ৪০০র বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশ পোল্যান্ড ইউরোপের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করে আছে। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষা না থাকায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য অন্তত প্রয়োজন হবে মাধ্যমিক শিক্ষার শংসাপত্র, আর্থিক কার্যকারিতা শংসাপত্র ও ইংরেজি বা পোলিশ ভাষায় দক্ষতা।

পোল্যান্ড স্থিতিশীল অর্থনীতির ইউরোপীয় দেশ। বাইরের শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ এখানে প্রতি মাসে ৩৫০ থেকে ৫৫০ ইউরো (প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৪ থেকে ৫৩ হাজার টাকা)। শহর ভেদে এই বাজেটের তারতম্য ঘটে থাকে।

চীন

বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য পড়াশুনার সবচেয়ে ভাল জায়গা হতে পারে চীন। পড়াশোনা, থাকা খাওয়ার খরচ সহ এমনকি যাতায়াত ভাড়া অন্তর্ভুক্ত স্ক্লারশিপ পেতে পারেন আপনি এই দেশে। শর্ত একটাই, চীনা ভাষা জানতে হবে।
এখানে আপনি হয়ত ভয় পেতে পারেন, কারণ চীনা ভাষা জটিল একটা ভাষা।

তবে ভয়ের কোন কারণ নেই। বিদেশি ছাত্রদের সুবিধার জন্যই রয়েছে চীনা ভাষার সহজ রূপ, ফিনইন, যেখানে ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে আধুনিক ম্যান্দারিন শেখানো হয়। এই পদ্ধতিতে আপনি অল্প দিনেই শিখে নিতে পারেন চীনা ভাষা। তাহলেই স্কলারশিপ আপনার হাতের মুঠোয়!

চীনা ভাষা শেখানোর সুব্যবস্থা রয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট অফ মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ (আই এম এল) এবং কলাভবনের অধীনে পরিচালিত কনফুশিয়াস ইন্সটিটিউটে। পড়ানোর পাশাপাশি এখানে ছাত্রদের রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে সরাসরি স্ক্লারশিপ দেয়া হয়। এছাড়া ব্র্যাক ইউনিভারসিটিতেও রয়েছে বিশেষ সুব্যবস্থা। স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা এখানেও রয়েছে। 

চীনা ভাষা শিখতে খরচও কম। দশ থেকে বারো হাজারের মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এবং পনেরো হাজারের ভেতরেই ব্র্যাক ইউনিভারসিটিতে আপনি সম্পূর্ণ চীনা ভাষার ওপর কোর্স শেষ করতে পারবেন।

গ্রিস

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশের ছাত্ররা বিনা খরচে পড়তে পারে গ্রিসে। বাংলাদেশ যদিও এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবুও এ দেশি ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক কম খরচে পড়তে পারবে। বছরে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ ডলারের মত খরচ হতে পারে। গ্রিসে জীবনযাত্রার খরচও অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের তুলনায় কম। বিদেশে বিনা খরচে পড়াশুনা করার জন্যে তাই গ্রিস থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়।

চেক প্রজাতন্ত্র

চেক প্রজাতন্ত্রের নাম হয়তো অনেকেই ইতিমধ্যে শুনেছেন, হ্যাঁ এখানেও অল্প খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। ইংরেজিতে যথেষ্ট বিষয় রয়েছে প্রায় সব লেভেলেই। শুধুমাত্র ‘চেক ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সাইন্স’ এ আপনি কম খরচে পড়ার সুযোগ নিতে পারেন। এখানে বছরে ৬০০ ইউরো থেকে ১৫০০ ইউরোর মধ্যে বেশকিছু কোর্স অফার করে। তাছাড়া চেক ভাষায় টিউশন ফি ছাড়া দেশটিতে উচ্চশিক্ষা নিতে পারেন।

স্পেন

স্পেনের পড়াশোনার খরচ খুবই কম। বছরে এক থেকে তিন হাজার ডলার খরচ করলেই এখানের পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারবেন আপনি। থাকার খরচ অবশ্য সেই তুলনায় একটু বেশি, বছরে বারো থেকে চোদ্দ হাজার ডলারের মত।

অস্ট্রিয়া

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ার অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি মুক্ত।

এ তালিকায় আছে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিয়েনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়, জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ, গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় ও লিওবেন বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশটিতে জীবনযাত্রার খরচ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। প্রতি মাসে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরোয় (প্রায় ৮৬ হাজার ৭০০ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৩০ টাকা) ভিয়েনা ও সালজবার্গে আবাসন, খাবার, সামাজিক কর্মসূচি ও গণপরিবহণসহ সব খরচ মেটানো যেতে পারে।

তুরস্ক

তুরস্কের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাশ্রয়ী। একজন শিক্ষার্থীকে সাধারণত প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ থেকে ৪ হাজার ইউরোর (প্রায় ৯ হাজার ৬৪০ থেকে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫২৬ টাকা) মতো খরচ করতে হয়।

অন্যান্য দেশের তুলনায় সাশ্রয়ী তুরস্কে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৬৫০ ইউরো খরচ করে (৩৮ হাজার ৫৬০ থেকে ৬২ হাজার ৬৫০ টাকা) থাকতে পারেন।

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এখন শিক্ষার্থীদের ভর্তি পছন্দের তালিকায় যেমন বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তেমনি অনেকে বিদেশে পড়তে যাবার কথাও ভাবেন। আসলে উচ্চমাধ্যমিকের পরেই বাইরে পড়াশোনা করতে যাবার মোক্ষম সময়। এইচএসসি-র পর বিদেশে পড়তে গেলে অনেক বিষয় সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও কাজ করতে শেখে।

এসবি/ 
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি