ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিপদ থেকে সুরক্ষায় ‘দান’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৯, ১০ আগস্ট ২০১৯

নানারকম অনিয়ম-অনাচার এবং অসচেতনতার ফলে আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছি। ফলে বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় আমাদের প্রত্যাহিক জীবনকে পযুর্দস্ত করে তুলেছে। 

এছাড়া, অবিদ্যজনিত ভ্রান্ত বিনোদন ও ভার্চুয়াল ভাইরাসের অপ্রভাব অশান্ত, অস্তির করে তুলেছে পরিবারগুলোকে। তাই সব ধরনের বালা-মসিবত থেকে  সুরক্ষা পেতে সাধ্যমতো দানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে আমাদের। 

দান বলতে শুধু অর্থ নয়, সময় নিয়ন্ত্রণ, অন্যের অধিকার রক্ষায় কাজ করা, নিজের স্বত্য ত্যাগ করে অন্যের জন্য কিছু করাকে বুঝায়। যেমন রক্ত দান। জীবিত অবস্থায় একজন মানুষের সবচেয়ে বড় দান অন্যের জীবন বাঁচাতে রক্ত দান করা। 

তাই বিপদ ও ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষার পেতে প্রতিদিন কিছু না কিছু দান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দান করলে মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। শুধু আপনি নন, আপনার পরিবারের মাঝেও এ ধারা চালু রাখুন। ছোট খাট বিষয়ে বাচ্চাদের শিক্ষা দিন। অপরের উপকারার্থে এগিয়ে আসুন।  

দানের ব্যাপারে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে বিশ্বাসের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি হলো বাধ্যতামূলক দান। দান সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের অনেক স্থানে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “সৎ দান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় ৭টি শীষ আর প্রতিটি শীষে থাকে শত শস্য দানা। আল্লাহ যাকে চান তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন।”

দান-সদকা প্রকাশ্যেও দেয়া যায়, গোপনেও দেয়া যায়। প্রকাশ্যে দিলে অন্য লোকেরাও দানখয়রাত করতে অনুপ্রাণিত হয়, কিন্তু তাতে লোক দেখানোর মনোভাব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গোপনে দিলে এই আশঙ্কা থাকে না। তবে হাদিস শরিফে আছে, প্রকাশ্যে দান-সদকাকারী উচ্চস্বরে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতকারীর মতো। আর গোপনে সদকা-খয়রাতকারী নিচুস্বরে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতকারীর মতো। তবে গোপনে দান করার উপরই বেশি জোর দেয়া হয়েছে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আরশের নিচে ছায়া দিবেন যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। প্রথম শ্রেণি হচ্ছে এমন রাষ্ট্রপতি যিনি সর্বদা ইনসাফের উপরই প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন যুবক যে ছোট থেকেই আল্লাহ তাআলার ইবাদতের উপর বেড়ে উঠেছে। তৃতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো। চতুর্থ শ্রেণি হচ্ছে এমন দু’ ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবেসেছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তারা পরস্পর একত্রিত হয় এবং তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। পঞ্চম শ্রেণি হচ্ছে এমন পুরুষ যাকে কোনো প্রভাবশালী সুন্দরী মহিলা ব্যভিচারের জন্য ডাকছে; অথচ সে বলছেঃ আমি তা করতে পারব না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ তাআলাকে ভয় পাচ্ছি। ষষ্ঠ শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে এরূপ লুকিয়ে সদকা করেছে যে, তার বাম হাত জানছে না তার ডান হাত কি সদকা করছে। সপ্তম শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে একাকীভাবে আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ করে দু’ চোখের পানি প্রবাহিত করছে”।-(বোখারী)

অন্য এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, নিজের জন্য যা আকাঙ্ক্ষা কর, অন্যের জন্যেও তাই আকাঙ্ক্ষা কর। তাহলেই তুমি প্রকৃত বিশ্বাসী হতে পারবে। -বোখারী

দানের ব্যাপারে শুধু ইসলাম তথা কোরআন ও হাদিসে নয়, ঋগবেদ, ভগবদ্গীতা, বাইবেলেও দানের ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। 

ঋগবেদে বলা হয়েছে, “নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব”-ঋগবেদ-১.১২৫.৬

বাইবেলে ঘোষণা করা হয়েছে, “ যখন দান করো গোপনে কর। তোমার নীরব দান সদাপ্রভু দেখছেন। তিনি তোমাকে পুরস্কৃত করবেন।”-মথি ৬:৩-৪

এছাড়া আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন থেকে তার সবধরনের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি দরজা খোলা থাকে। তার মধ্যে একটি হলো দান খয়রাত বা সদকা। 

সুতরাং এতে থেকে বোঝা যায়, দানই মানুষকে ইহকাল ও পরকাল তথা সকল বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই আসুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দান খয়রাতকে অভ্যাসে পরিণত করি। নিজে করার পাশাপাশি পরিবারেও এ সংস্কৃতি চালু করি। 

আই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি