ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নির্যাতন, ন্যায়বিচার বঞ্চিত ভুক্তভাগী (ভিডিও)

ফারজানা শোভা, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

বিশ্ববিদ্যালয়ে আশংকাজনক হারে বাড়ছে যৌন নির্যাতন। অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি হলেও আলোর মুখ দেখে না সেই কমিটির রিপোর্ট। ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয় ভুক্তভাগী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনি দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহার আর সচেতনতার অভাবেই যৌন নির্যাতন বন্ধে উচ্চ আদালতের নীতিমালা ভূমিকা রাখতে পারছে না।

২০০৯ সালে যুগান্তকারী রায়ের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নেয়া হয়নি আশানুরূপ পদক্ষেপ। তবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি আবারও মামলা করলে কিছুটা নড়েচড়ে বসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। 

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কাগজে-কলমে কমিটি করলেও বাস্তবে নিজস্ব শৃংখলা কমিটি দিয়েই কাজ চালাচ্ছে তারা। নেই অফিস, হেল্প লাইন বা অভিযোগ বক্স।  

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি মোটামুটি সক্রিয় থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ফল। ভুক্তভোগী সঠিকভাবে অভিযোগ না করলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তদন্ত।  কোন কোন ক্ষেত্রে দোষীকে চাকরিচ্যুত, বহিষ্কার করা হলেও অভিযোগের সংখ্যার তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল।   

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “একজন সদস্য হিসাবে এখানে আছি, তাদেরকে বলবো খুবই আপত্তিকর ফোন করা হয়েছে রাত-বিরাতে। সত্যি সত্যি মনে হয়েছে আমরা কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায়, তখন জিডি করতে হয়েছে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি প্রধান অধ্যাপক ড. জেবুউননেছা বলেন, “১২ বছরের ২৭টি অভিযোগ, স্টুডেন্ট কিন্তু আমাদের অনেক।  সেই অনুপাতে এই অভিযোগ খুবই সামান্য। তবে বর্তমানে কমিটি চাইছে আগামী ১২ বছরে ২৭টা কেন একটা অভিযোগও যাতে না পড়ে।”

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি কমিটি প্রধান আলিয়া শাহনুর আমিন বলেন, “একজন শিক্ষার্থী যখন ভর্তি হচ্ছেন তখন তাদেরকে কোর্ড অব কন্ট্রাক্টটা দেওয়া হচ্ছে। সে সেটা ভালোভাবে পড়ছে, সুতরাং লংঘন করার তাদের সুযোগ নেই।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের এই কমিটি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার কথা থাকলেও আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে। 

আইনজ্ঞ ও মনিটরিং সংস্থা বলছে, শাস্তির বিধান আরও কঠোর করা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ডেপুটি ডিরেক্টর মৌলী আজাদ বলেন, “ইউজিসির মূল কাজ হচ্ছে সমস্ত তথ্য নিয়ে একটা সুপারিশ করা। আমরা কিন্তু এক্সিকিউটিভ বডি না।”

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির রিটকারী সারমা আলী বলেন, “একটা আইন হওয়া দরকার। সব থেকে দুঃখ আইন আমাদের অনেকই আছে কিন্তু আইন বাস্তবায়নের জন্য যেসমস্ত সাপোর্ট-সার্ভিস দরকার সেটা নাই। সব যে কোর্টে যাবে তা নয়, অপরাধ অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, সেই জায়গাটাকে বুঝানো।”

আর সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন- যৌন নির্যাতন ও এর প্রতিবাদ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। 

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, “ছাত্র-শিক্ষক-প্রশাসন সকলেই যদি তৎপর হই এবং প্রচার-প্রচারনার মাধ্যমে সকলের মধ্যে যে অ্যাওয়ারনেস তৈরি করা যায় তাহলে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে।”

স্বদিচ্ছার অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে যৌন নিরাপত্তা বিধানে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজরদারী বাড়ানো ও একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন বন্ধ অসম্ভবই থেকে যাবে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি