`বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে দুই অঙ্কে আসবে বাংলাদেশ`
প্রকাশিত : ২০:৪১, ২৬ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ২১:০৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৯
আগামী ২০২০ সালে বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ (ইজি অব ডুয়িং বিজনেস) সূচকে বাংলাদেশ দুই অঙ্কে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, সূচকটিতে বাংলাদেশ এ বছর ৮ ধাপ এগিয়েছে। এখন আমাদের অবস্থান ১৭৬তম বা তিন অঙ্কের ঘরে। আগামী বছরে এটা ডবল ডিজিটে চলে আসবে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নিজস্ব কার্যালয়ে ‘এসএমই খাতের উন্নয়ন ও টেকসইকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। ইআরএফ, বিসিক এবং প্রিজম বাংলাদেশ এ কর্মশালার আয়োজন করে।
ইআরএফের সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন শিল্পসচিব মো. আব্দুল হালিম বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাক হোসাইন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ফুড, নিউট্রিশন এন্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের টিম লিডার ম্যানফ্রে ফ্রেনহোলস। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম।
বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ (ইজি অব ডুয়িং বিজনেস) সূচকের বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে অনেক সংস্কার করেছি। কিন্তু কিভাবে বিশ্বব্যাংক স্কোরিং করে র্যাংকিং করে এসব বিষয়গুলো আমরা ভালোভাবে বুঝিনি। যার ফলে আমরা রিফর্ম করলেও নম্বরটা পায়না।
তিনি বলেন, গত মার্চে আমরা বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলি, তখন তারা বললো এ বছরের র্যাংকিং এপ্রিল মাসের ভিত্তিতে হবে। আর এটা অক্টোবরে ঘোষণা করা হবে। আমরা ক্ষমতায় এসেছি জানুয়ারিতে, বুঝতে বুঝতে ফেব্রুয়ারি চলে গেল। তখন বিশ্বব্যাংক বললো এবারই আমদের কিছুটা এগুতে হবে। কাজ শুরু করলাম।
এ কাজ করার উদাহরণ দিতে দিয়ে তিনি বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিতে গেলে ১৪ থেকে ১৮ ধাপে অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এটাকে আমরা কমিয়ে ৪ ধাপে নামিয়ে আনলাম। ভূমি সংশ্লিষ্ট নানা সংস্কার করা হলেও এগুলো ওয়েবসাইটে না দেয়ার কারণে আমরা নাম্বার পায়না। পরে এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেয়ার ব্যবস্থা করা হলো।
তিনি আরও বলেন, রাজউকের সংস্কারের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক জরিপ চালালে রাজউক চেয়ারম্যান বলে এটা সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যে অফিসার অনুমোদন দেন তিনি বলেন আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। সেখানেও আমার নম্বর হয়ে গেলো শুণ্য। তারপরও এবার আমরা ছয় না আট ধাপ এগিয়েছি। কিন্তু এটাতে আমরা সন্তুষ্ট নয়। আগামী বছর আমরা ডাবল ডিজিটে আসতে চাই।
বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সেবা এক ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনে (বিসিক) ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা হবে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নজরে এনে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।
একটা দেশের মোট শিল্পকারখানার ৯০ শতাংশ এসএমই খাতের হওয়ার উচিত। বাংলাদেশেও এ অনুপাত বিরাজমান। আগামীতে এখাতে বিনিয়োগ আরও সহজ করাতে বিসিককে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ এর আওতায় আনা হবে।
ফ্রিল্যান্সারদের দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিন এক যুবক আমাকে এসে বলল, আমি ফ্রিল্যান্সার। অস্ট্রেলিয়ার এক নারীর প্রতিষ্ঠানের ওয়েবপেজ ডেভেলপ করে দেয়ার বিনিময়ে তিনি আমাকে ৫০০ ইউএস ডলার পেইড করেছেন। কিন্তু ব্যাংক আমাকে টাকা দিচ্ছে না। ব্যাংক জানতে চায়, ওই নারীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী, কেন টাকা পাঠাল- এই সব।’
‘অন্য একজন বলল, ফ্রিল্যান্স করে তিনি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করেন। তারপরও নিয়মিত আয় নেই- এই অজুহাতে একটি ভালো স্কুল তার ছেলেকে ভর্তি নেয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব অভিযোগ পাওয়ায় আমি আইসিটি প্রতিমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করলাম। এরপর আমরা ফ্রিল্যান্সারদের একটি ডাটাবেজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এ ডাটাবেজের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ কাজ শেষ হলেই প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হবে। এ রেজিস্ট্রেশন কার্ড থাকলেই তার টাকা উঠাতে ব্যাংক কোনো প্রশ্ন করবে না। এ সনদ দিয়েই তারা অন্যান্য কাজ সহজেই করতে পারবেন।’
‘ডাটাবেজ শুরুর আগে আমাদের ধারণা ছিল দেশে হয়তো দু-এক লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে দেখলাম ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এরা প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স আয় করছে’।
অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব আব্দুল হালিম বলেন, আমাদের সরকারের পলিসি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিসিকের অবদান ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। এরমধ্যে এসএমই'র অবদান ২৮ শতাংশ। যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। দিনদিন জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমই'র অবদান বাড়ছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। ফলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মোশতাক হোসাইন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার দেশে ৩ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ঘোষনা দিয়েছে। উক্ত সময়ে আমরা ২০ হাজার একর জমিতে ৫০টি বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবো। এছাড়া প্রায় ১০ হাজার লোককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে উদ্যোক্তারা।
তিনি বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের সুযোগ না দিলে তারা অপরিকল্পিতভাবে শিল্প গড়ে তুলবে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য দেশের আনাচে কানাচে যে শিল্প নগরী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেখানে উদ্যোক্তাদের প্লট দেয়া, ঋণের ব্যবস্থাসহ ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে। গত ৬২ বছরে দেশে ৭৬টি শিল্প নগরীতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার উদ্যোক্তাকে প্লট দেয়া হয়েছে। এতে সাড়ে ৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া দেশের রফতানি বাজারে বিসিকের অবদান ১০ শতাংশ। আমরা প্রায় ৬ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য উৎপাদন করে থাকি। এটা অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর সিংহভাগ রফতানি করা হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের ইজি অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। কোনো দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মকানুন ও তার বাস্তবায়ন কতটুকু সহজ বা কঠিন তার ওপর বিশ্বব্যাংক এই সূচক তৈরি করে থাকে। সর্বশেষ তালিকায় এবার আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। আগামী মাসে ডুয়িং বিজনেস- ২০২০ রিপোর্ট প্রকাশ করবে বিশ্বব্যাংক।
আরকে//
আরও পড়ুন