বিশ্বাসীর ভয় পাওয়ার কিছু নাই
প্রকাশিত : ১৪:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১২:১৭, ২৩ এপ্রিল ২০২০
আসলে অনেকে আমরা ভুলেই গিয়েছি যে যখন কেউ মারা যায়, জৈবিক জীবনের অবসান হয় তখন আমরা বলি- ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। যে আমরা আল্লাহর; তাঁর কাছ থেকে এসছি, তাঁর কাছেই ফিরে যাব।
আসলে একজন ভালো মানুষের জন্যে, একজন বিশ্বাসীর জন্যে মৃত্যু তো আসলে তাঁর কাছে ফিরে যাওয়া। অতএব একজন বিশ্বাসী আতঙ্কিত হয় কীভাবে?
আমরা আমাদের বিশ্বাসে যখনই ফিরে আসব আমাদের কোনো ভয়-আতঙ্ক থাকবে না।
করোনা আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে গুছানোর একটা চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি- বর্তমানে করোনা আতঙ্কিত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রধান দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই বলছেন যে, মৃত্যুর সংখ্যা যদি লাখের কম হয় তাহলেই তিনি সন্তুষ্ট। দুই/আড়াই লক্ষ মৃত্যুর ব্যাপারটা তিনি ‘স্বাভাবিক’ বলেই মনে করছেন!
আসলে কারণটা কী? কারণ খুব সুস্পষ্ট। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যত্নায়ন বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাব্যবস্থাকেই এজন্যে দায়ী করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে তিন কোটি মানুষ যাদের কোনো স্বাস্থ্য বীমা নাই। সাড়ে চার কোটি মানুষ তাদের অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য বীমা। আসলে চিকিৎসা তো দূরের কথা! প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত মানুষরা আসলে করোনার টেস্ট করানোর সুযোগ পায় নাই। বিশেষভাবে অভিবাসীরা করোনার প্রাথমিক টেস্ট করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।
তাদেরকে করোনা টেস্ট করাতে হলে নিজের পকেট থেকে গুণতে হবে টাকা। এর খরচ পড়ে কখনও কখনও তিন হাজার থেকে তিন হাজার ন’শ ডলার পর্যন্ত। যা আমাদের টাকায় তিন লক্ষ টাকার ওপরে।
দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকা ১৫ই মার্চ সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক শ্রমমন্ত্রী রবার্ট রেইখের উল্লেখ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ‘পাবলিক হেলথ’- জনস্বাস্থ্য সিস্টেম বলে কোনো সিস্টেম নাই। যুক্তরাষ্ট্রে যা আছে সেটা হচ্ছে চিকিৎসার পুরোপুরি বাণিজ্যিকীকরণ। শুধু বিত্তবানরাই এই সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম।
আর সেখানকার সমাজ-পরিবেশ, জীবনাচার সবটাই ফাস্ট। প্রায় সবটাই প্রকৃতিবিরুদ্ধ।
করোনায় মৃতের সংখ্যা এবং মৃত্যুর কারণ যদি দেখি- নিজের প্রতি অযত্ন-অবহেলা করলে যে রোগগুলো হয়; সুস্থ জীবনাচার অনুসরণ না করলে যে রোগগুলো হয়- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এই রোগে আক্রান্তরাই করোনার প্রধান শিকার।
পরম সৃষ্টিকর্তা চান আমরা নিজের যত্ন নেই, অন্যের যত্ন নেই। নিজের কল্যাণ করি, অন্যের কল্যাণ করি। এবং এই অন্যের কল্যাণ করার মধ্য দিয়েই অন্যের যত্ন নেয়ার মধ্য দিয়েই নিজের যত্ন নেয়ার প্রয়োজনীয়তাটাকে আমরা আরও গভীরভাবে যাতে উপলব্ধি করতে পারি।
মানুষের জন্যে কল্যাণকর-অকল্যাণকর নৈতিক বিধিবিধান দিয়ে তিনি যুগে যুগে মহামানবদের পাঠিয়েছেন। যখন মানুষ সেই মহামানবদের কথা শুনেছেন অনুসরণ করেছেন তারা সুস্থ থেকেছেন; ভালো থেকেছেন। নিজে পরিতৃপ্ত থেকেছেন এবং অন্যদেরও জীবনকে কল্যাণময় করেছেন।
আসলে একজন বিশ্বাসীর কি মৃত্যু আছে? একজন বিশ্বাসী তো মারা যায় না! একজন বস্তুবাদী, একজন নাস্তিক তার মৃত্যু আছে। সে মনে করে যে দেহ শেষ সে শেষ। কিন্তু আমরা যারা বিশ্বাসী, আমাদের দেহ শেষ হলেই কি আমি শেষ?
এই দেহ তো আত্মার বাহন। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমরা অনন্ত জীবনের পথে যাত্রা শুরু করি এবং মৃত্যু প্রত্যেকটা প্রাণের জন্যেই অবধারিত। অতএব মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কী আছে?
এসএ/