ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বাসেই মিলবে সুস্থতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২৪, ১৬ মে ২০২১

ছুটির দিন শনিবারের এক শান্ত সন্ধ্যায় ডালাসের এক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রী হাসপাতালে তার রুটিন মাফিক রাউন্ডের সময় হঠাৎ এক রোগীকে দেখতে পেয়ে থমকে দাঁড়ালেন। বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী রোগীটি তাকে বলছিলেন, আজ আমি মারা যাচ্ছি। কিন্তু আফসোস! কি করে বাঁচতে হয়, তা জানলাম না সারাজীবন ধরেও।

হতবিহ্বল ছাত্রীটি কিছুসময় রোগীটির মাথাকে একটু উঁচু করে ধরলেন। দু’দিন পরেই লোকটি মারা যায়। মিং হি নামের ঐ ছাত্রীটি এরপর প্রথম সুযোগেই যা করে, তাহলো- মেডিকেল স্কুলের একটি কোর্সে ভর্তি হয়ে যায় সে। যার নাম ‘স্পিরিচুয়ালিটি এন্ড মেডিসিন'। যে কোর্সটিতে ছাত্রছাত্রীদের শেখানো হয়- রোগীদের সাথে তারা কীভাবে বিশ্বাস, নিরাময় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলবে সেসব।  

আমেরিকার অর্ধেকেরও বেশি মেডিকেল স্কুলে এখন এ ধরনের কোর্স আছে। তিন দশক আগে যা ভাবাই যেত না। কেন? কারণ রোগীরা এখন আধ্যাত্মিকতা নিয়ে অনেকটাই মাথা ঘামাচ্ছেন।

নিউজউইকের এক জরিপে দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ আমেরিকানই বলেছেন, এসব বিষয় নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পছন্দ করেন তারা। ৮৪ শতাংশ আমেরিকানই মনে করেন, অসুস্থদের জন্যে প্রার্থনা করলে তার রোগমুক্তির সম্ভাবনা বাড়ে। 

বিলিফনেট একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় ওয়েবসাইট। এখানে যে ৩৫ হাজার প্রেয়ার সার্কেল আছে, তার তিন চতুর্থাংশই নিরাময় সংক্রান্ত। সদস্যরা তো বটেই, অপরিচিত যে কেউই এখানে লগ ইন করে তার হিলিং রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন, একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্যে তার মনে বা আত্মায় কী ঘটে, তা তার দেহের কোষের স্তরে কী ঘটে তার চেয়ে কোনও অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর এজন্যে গোটা মার্কিন মুলুক জুড়ে চলছে নানা উদ্যোগ। 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ঘোষণা দিয়েছে- আগামী কয়েক বছর ধরে তারা মোট সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে মাইন্ড-বডি মেডিসিন গবেষণায়। আধ্যাত্মিকতা ও নিরাময় বিষয়ে রীতিমতো কনফারেন্সের আয়োজন করেছে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, যার উপজীব্য হলো- ক্ষমার নিরাময় গুণ। 

এ বিষয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে গত কয়েক বছরের মধ্যে যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, তারই ফসল হলো এসব, বলেন পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির নিউরোলজিস্ট ড. এন্ড্রু নিউবার্গ, মস্তিষ্কের ওপর ধ্যান এবং প্রার্থনার ভূমিকা নিয়ে যিনি ব্যাপক গবেষণা করেছেন।  

প্রশ্ন হলো, এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞান কী বলে? ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশেল ক্রাকোফ ৭৫০ জন রোগীর কথা বলেন, যাদের এনজিওপ্লাস্টি করা হয়েছে সম্প্রতি। এ রোগীদের জন্যে প্রার্থনা করা হয়। যদিও এ রোগীদের সাথে কোনও পার্থক্য ডাক্তাররা পেলেন না প্রচলিত চিকিৎসা করানো দ্বিতীয় গ্রুপের সাথে বা তৃতীয় গ্রুপের সাথে- সঙ্গীত, নিরাময়ের মনছবি বা স্পর্শ হিলিং করা হয়েছে যাদের। কিন্তু একটা মজার বিষয় হলো- যেসব রোগী মিউজিক থেরাপি এবং প্রার্থনা দুটোই পেয়েছেন, অন্যদের তুলনায় তাদের মৃত্যুবরণের হার ৩০ ভাগ কম।

লিন্ডা এইচ পাওয়েল নামে শিকাগোর এক গবেষক এ সংক্রান্ত সব গবেষণাগুলোর একটা মেটা এনালাইসিস করেন। অপ্রাসঙ্গিক বা দুর্বল গবেষণাগুলোকে তিনি খুব কঠোরভাবে বাদ দেন তার তালিকা থেকে। তবে তিনি একটি বিষয়ে খুব চমৎকৃত হন যে, যে মানুষগুলো নিয়মিত চার্চে যায়, অন্যদের তুলনায় তাদের দ্রুত মারা যাওয়ার হার ২৫% কম।

আসলে বেশিরভাগ ধর্মীয় চর্চাতেই রয়েছে ধ্যান, শিথিলায়ন, সুস্থ জীবনাচারের কথা। যা আসলে সুস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলোকেই নিশ্চিত করে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি