বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ
প্রকাশিত : ০৮:৩৭, ১৪ নভেম্বর ২০২৩
আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ডায়াবেটিস দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।’ অর্থাৎ ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলে একে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন (আইডিএফ) ১৪ নভেম্বরকে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৭ সাল থেকে পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালন শুরু হয়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার ১৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব করে। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং এদের অনেকেই জানেন না যে তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে হিসেবে দেশের চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম এই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। আগে যে কাজটি মানুষ শ্রম দিয়ে ঘাম ঝরিয়ে করতেন এখন তা মেশিন করে দিচ্ছে। ফলে পরিশ্রম করতে হয় না বলে মানুষের ওজন বেড়ে যাচ্ছে, পরিবর্তে বাড়ছে মানসিক চাপ। সামাজিক, অর্থনৈতিক এমনকি রাজনৈতিক কারণেও মানসিক চাপ বাড়ছে।
ডায়াবেটোলিস্টরা বলছেন, মানসিক চাপ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে। ডায়াবেটোলিস্টরা বলছেন, ডায়াবেটিস হলে অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না এবং খাদ্য থেকে আসা গ্লুকোজ পোড়াতে পারে না বলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।
চিনি জাতীয় সব খাবার পরিহার করা, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া এবং দৈনিক ব্যায়াম করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় বলে ডায়াবেটোলিস্টরা জানিয়েছেন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে শরীরে উচ্চ হারে চিনি (গ্লুকোজ) জমা হয়। ফলে ঘন ঘন পানি পিপাসা পায় ও প্রস্রাব হয়ে থাকে এবং অবসন্নতায় পেয়ে বসে ভুক্তভোগীকে। শরীরের ওজনও কমতে থাকে। নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডায়াবেটিসের কারণে চোখের ভেতরের অঙ্গগুলো দুর্বল হতে শুরু করে। এই কারণে ধীরে চোখে পাওয়ার কমতে থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এক সময় পুরো চোখ নষ্ট হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সৃষ্টি করে এবং স্নায়ুগুলো (নার্ভ) দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু হয় এবং দু’জন নতুন করে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। ২০২১ সালে পৃথিবীতে ৫৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৬৪ কোটি ৩০ লাখে উন্নীত হবে এবং ২০৪৫ সালের পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হবে ৭৮ কোটি ৩০ লাখ।
অন্যদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ২৪ কোটি মানুষ জানেন না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে, রক্তে তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গ্লুকোজ। তাদের বেশির ভাগই টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত। ১২ লাখেরও বেশি শিশু ও কিশোর (০-১৯ বছর) টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০২১ সালে বিশ্বের ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
২০২১ সালে ৯৬৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় ডায়াবেটিসের কারণে, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের ৯ শতাংশ।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে চিকিৎসকেরা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে একটি ডায়াবেটিসপ্রবণ দেশ। শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিসের রোগী। এখনই ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এএইচ