ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিড়ালের জন্য চাকরি ছাড়লেন এই যুবক!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৭, ১১ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

চাকরির জন্য শখ ছাড়েন অনেকেই কিন্তু শখের জন্য চাকরি ছাড়তে দেখা যায় কজনকে? তাও আবার ভ্রমণ সঙ্গী নিজের পোষা বিড়ালকে নিয়ে?

রিচার্ড ইস্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন৷ গোটা অস্ট্রেলিয়া ঘুরবেন স্লিপার ভ্যানে৷ তবে ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে কোনও মানুষকে রাখছেন না তিনি৷ সঙ্গে থাকবে তার পোষা বিড়ালটি৷ উইলো তার খুব পছন্দের পোষ্য৷ দু’জনের পারস্পরিক বোঝাপড়াও বেশ জোরালো৷

সোশ্যাল মিডিয়া এখন বিশ্বের মানুষকে একত্র করেছে এক জায়গায়৷ এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতেও যেমন দেরি হয়নি তেমনি লাখ লাখ লাইক কমেন্ট পরতেও দেরি হয়নি৷ শুধু তাই নয়৷ বহু মানুষ রিচার্ডকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন৷ রিচার্ড ও উইলোর বন্ডিং দেখে অনেকেই ভাবছেন এমন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলবেন৷

ইস্ট এটিকে বলছেন ‘দ্য মোস্ট ওয়েল-প্রিপেয়ার্ড মিড-ওয়াইফ ক্রাইসিস ইন হিস্টরি’৷ রিচার্ড চান তিনি ও তার ৬ বছরের বিড়াল উইলো পুরো অস্ট্রেলিয়ার যত রাস্তা আছে একটাও বাদ না দিয়ে শুধু ঘুরেই বেড়াবেন৷ এরপরই বেড়িয়ে পড়েন দুজন৷ তিন বছর পরেও তাদের ভ্রমণ শেষ হয়নি৷ তারা দুইয়ে মিলে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যান৷ একসঙ্গে মনে গেঁথে রাখার মত সুন্দর জায়গায় মনের আনন্দে বেড়ান৷

এভাবেই একে অপরকে সময় দিয়ে চলেছেন দুজনে৷ যেখানে কোনও দেনা পাওনার হিসাব নেই৷ নেই কোনও বাধ্যবাধকতা৷ সেখানেই মজেছেন তামাম ইন্টারনেট ইউজার্স৷ চাওয়া পাওয়ার হিসাবের বাইরে থেকে এরকম বেহিসাবি ঘুরে বেড়াতে কে না চায়?

এই গল্পের শুরু হয় ২০১৪ সালে৷ সে বছরই বেড়ানোর জন্য আইটির চাকরিটা ছেড়ে দেন ইস্ট৷ ‘আমি দশ বছর ওই সংস্থার সঙ্গে চাকরি করেছি৷ তারপরেও আমার প্রতিশ্রুতিময় লাগছিল না আমার পেশাটি৷ আমি লোকসান করেছি বলে মনে হতে থাকে৷’ জানিয়েছেন ইস্ট৷ ‘তখন আমি ভাবি মাস ছয়েকের ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসব৷ কিন্তু সেই একই সমস্যার মধ্যে ফিরতে আমায়৷ এই ভাবনাটা মাথায় আসতে থাকে৷ এরপরই ভাবি নাহ৷ ছ’মাসের বেশি সময় দরকার৷ ছ’মাসে হবে না৷’

তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার ভকসওয়াগন ভ্যানটি রিমডেল করবেন৷ সেটাকে বাড়ির মত তৈরি করে ফেলতে হবে৷ যাতে থাকবে বাড়ির মত সবরকম সুবিধা৷ তিনি জানান ‘তারপরেই ভ্যান লাইফের কথা মাথায় আসে৷ আমি নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিই৷ যা কিছু আমি কিনেছিলাম সব বিক্রি করে দিই৷ আমার মাথার মধ্যে ছিল আমি কিভাবে জীবন কাটাব৷ তাই তারপর আমি কম খরচে জীবন যাপন শুরু করে দিই৷’

ইস্ট তার সব মায়ার জিনিস বিক্রি করে দেন৷ কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি একটি জিনিস৷ তা হল তার পোষ্য বিড়াল উইলোকে৷ উইলোর থেকে আলাদা করে নিজেকে ভাবতে পারেননি ইস্ট৷ ‘সত্যি কথা বলতে কি উইলো আমার জীবনের প্লানের মধ্যে ছিল না৷ কিন্তু এটা ঘটে যায়৷ আমি বুঝতে পারি যে উইলোকে পেছনে ফেলে রেখে আমি যেতে পারব না৷ সে সব সময় আমার পাশে ছিল৷ তাই আমি প্রমিস করি আমি কোনও দিনও তাকে ছেড়ে দেব না৷ এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত৷’ জানান ইস্ট৷

কিন্তু বিষয়টা বলতে যতটা সহজ ঘটানোটা তত সহজ ছিল না৷ একটা বিড়ালকে ‘ট্রাভেলিং ক্যাট’ তৈরি করা সহজ নয়৷ কারণ সে সারা জীবন ঘরের ভিতরে থেকেছে৷ ‘যখন আমি ভ্যানটা তৈরি করছিলাম সসময় উইলো অনেকটা সময় আমার সঙ্গে কাটিয়েছে৷ তখন সে বুঝতে পারে এটা তার জন্য নিরাপদ ঘর হবে৷ এবং সে শিখে ফেলে তার ভিতরে থাকা৷’ জানান ইস্ট৷

যদিও তিনি উইলোকে ভ্রমণের পাঠা খুব ধীরে ধীরে পড়িয়েছেন৷ ‘আমি প্রথমে উইলোকে নিয়ে উইকেন্ড ট্যুরে যেতে শুরু করি৷ তারপর পুরো সপ্তাহ৷ এরপর সে শুধু শিখেই ফেলে না বেড়ানোকে ভালবেসে ফেলে৷’ এমনটাই নিজের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন ইস্ট৷

‘আমরা দুজনেই শিখে ফেলি কীভাবে একটা ছোট্ট জায়গায় থাকতে হয়৷ তবে এখন আমরা সত্যিই আমাদের ‘পা’ খুঁজে পেয়েছি৷’ জানান তিনি৷ এই জুটি সপ্তাহে প্রায় ৪০ মাইল ভ্রমণ করে৷ উইলো ইতিমধ্যেই ট্রপিক অফ ক্যাপ্রিকর্ন পার করে ফেলেছে ছ’বার৷ উইলোর এই ভ্রমণে সবথেকে প্রিয় বিষয় হল বেড়ানোর সময় বেড়ালের ঘুমনোর সবথেকে ভালো জায়গা কোনটা সেটা খুঁজে বের করা৷ ইস্ট জানিয়েছেন ‘উইলো সবসময় খুঁজতে থাকে সবচেয়ে ভাল জায়গা কোনটা আর সবথেকে নরম ঘাস কোন মাঠে আছে৷ তবে সে সবথেকে পছন্দ করে ধুলোয় স্নান করা৷’

‘ধুলোয় চান করা উইলোর আগেকার অভ্যাস৷ সেই ধুলো ভর্তি গা নিয়েই ভ্যানের ভিতর চলে আসে উইলো৷’ ইস্ট তার এই জীবনকে ‘ক্যাট লাইফ’ বলে ডাকেন৷ যেটা তাকে অনেক বেশি জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে৷ ‘যদি উইলো মনে করে এক জায়গায় সে ভ্যানের বাইরে ঘুমোবে৷ তাহলে কিছুতেই তাকে তখন ধরে ভ্যানের ভিতর আনা যাবে না৷ সেখানেই তখন কিছুক্ষণ থেকে যাই৷ একটা বেড়ালের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে সময় নিয়ে বসতে শেখা যায় এবং দেখা যায় বিশ্বের সময় কিভাবে এগোচ্ছে৷’

আর কিছু ভাবতে চান না ইস্ট৷ এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান সময়৷ তিনি ও তার উইলো মিলে যা ইচ্ছে তাই করতে চান৷ সেটাই করে চলেছেন৷ সেটাই করে যাবে ন৷ দুজনের এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়৷

সূত্র: কলকাতা ২৪x৭

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি