ঢাকা, রবিবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৪

বৃত্তিপ্রাপ্তদের থেকে আইনবর্হিভূতভাবে বেতন নিচ্ছে ভিকারুননিসা!

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ১৬:১০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৯:০০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের মূল ফটক- কলেজের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের মূল ফটক- কলেজের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

বর্তমানে একুশে টেলিভিশন’র নিজস্ব প্রতিবেদক। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি নিউএইজ, এনটিভি’র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৭’তে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘আসমত আলীর অনশন’ প্রকাশিত হয়। তার বহু গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থাপিত হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাসিক বেতন আদায় করছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ। বেতন না নিতে বোর্ডের নির্দেশনা থাকলেও মাসের পর মাস বেতন আদায় করছে কলেজটি। এ নিয়ে অভিভাবকরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও বন্ধ হয়নি বেতন আদায়। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তিপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা একুশে টেলিভিশনকে এমন অভিযোগ জানান। তবে বোর্ড বলছে, এমনটি হয়ে থাকলে ভিকারুননিসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে (এসএসসি-২০১৯) বৃত্তিপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর থেকেই প্রতি মাসে মাসিক বেতন ও অন্যান্য খরচ বাবদ টাকা আদায় করছে কলেজটি। অভিভাবকরা বোর্ডের বৃত্তির বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালে তাদেরকে লিখিত অবেদন করতে বলা হয়। বোর্ড বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও আবেদন করানো এক প্রকার স্বেচ্ছাচারিতার সামিল বলে মনে করেন অভিভাবকরা। আবেদন করলেও অর্ধেক নেওয়া হচ্ছে বেতন। বৃত্তিপ্রাপ্ত যে সব শিক্ষার্থীর আবেদন করেননি তাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে পুরো বেতন।

গেল বছরের ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বোর্ডের ‘মেধাবৃত্তি’ ও ‘সাধারণবৃত্তি’র বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ সকল বৃত্তির মেয়াদ রয়েছে ২০১৯ এর জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। বোর্ডের সচিব স্বাক্ষরিত ঐ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকল মেধাবৃত্তি ও সাধারণবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পাবেন। সরকারি অনুদান প্রাপ্ত ও শিক্ষা বোর্ডের অধিভূক্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর নিকট থেকে মাসিক বেতন বা টিউশন ফি আদায় করতে পারবে না। বেতন আদায় করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৃত্তিপ্রাপ্তদের নিকট থেকে বেতন আদায় করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে বোর্ড- বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি

গত ২৩ ফেব্রুয়ারিতে পূর্বের মাসের বেতন পরিশোধ করতে হয়েছে বলে জানান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে বৃত্তিপ্রাপ্ত এক শিক্ষার্থী। কলেজটির বেতন আদায়ের রশিদে দেখা যায় মাসিক বেতন (অর্ধেক) ও পরীক্ষার ফি বাবদ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ‘এটা আমার মেয়ের একটা অর্জন। বোর্ড তাকে বৃত্তি দিয়েছে। বেতন না নেওয়ার বিষয়ে বোর্ডের নির্দেশনা থাকার পরও বেতন নিচ্ছে কলেজ। এটা তো মেধাকে মূল্যায়ন করা হলো না। টাকার অংকের চেয়ে বড় কথা হলো, বৃত্তি দিয়েও বেতন নেওয়া হচ্ছে!’ বিষয়টি কলেজের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিনা এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু অধ্যক্ষ বলেছেন- অর্ধেক বেতন দিতে হবে। এত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেতন না নিলে কলেজ চলবে কিভাবে।’ বৃত্তিপ্রাপ্ত এমন অন্তত দশজন শিক্ষার্থীর অভিভাবদের সঙ্গে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এক দিকে বোর্ড বৃত্তি দিয়েছে অন্যদিকে কলেজ বেতন নিচ্ছে। বিষয়টা উপহাস ছাড়া কিছুই না।’

এদিকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন আদায় করে বিপাকে পড়েছিল রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ। বেতন আদায়ের বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের কাছে অভিযোগ করেন এক অভিভাবক। তদন্তে বিষয়টি প্রমানিত হলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার কলেজ পরির্দশক অধ্যাপক ড মো. হারুন-অর-রশিদ ঐ কলেজের অধ্যক্ষকে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি একটি চিঠি পাঠান। তাতে বৃত্তি প্রাপ্তদের নিকট থেকে আদায়কৃত বেতন ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছিল।

অন্যদিকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের পাশাপাশি প্রতি মাসে বৃত্তির অর্থ ভর্তিকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তলন করবেন শিক্ষার্থীরা বলে বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে। তবে বোর্ডের নির্ধারিত সে অর্থ পাচ্ছেন না ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী। এ প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, কলেজের কথা মতো বৃত্তির অর্থের জন্য একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত ঐ ব্যাংক হিসাবে কোন টাকা জমা হয়নি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া

বৃত্তিপ্রাপ্তদের নিকট থেকে বেতন আদায়ের বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না নিলে শিক্ষকদের বেতন দেবো কীভাবে? এরপরও যেসব শিক্ষার্থী আবেদন করে তাদের বেতন আংশিক বা পুরোটাই মৌকুফ করা হয়।’ বোর্ডের নির্দেশনার পরও আলাদা করে কেন আবেদন করতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো মাত্র ৬ মাস হলো যোগদান করেছি। অনেক আগে থেকেই এমন নিয়ম চলে আসছে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক- সংগৃহীত

বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে কোনভাবেই কলেজ বেতন আদায় করতে পারে না বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ এমনটি করেছিল। আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে বিষয়টি প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নিয়েছি। ভিকারুননিসা নূন যদি বৃত্তিপ্রাপ্তদের থেকে বেতন আদায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃত্তিপ্রাপ্তদের নিকট থেকে কোন ভাবেই তারা বেতন নিতে পারবে না। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।’

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি