ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বৃষ্টির ঘ্রাণ যে কারণে ভালো লাগে আমাদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০২, ২৮ জুলাই ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

সম্প্রতি জানা গেছে, দীর্ঘ সময় শুষ্ক আবহাওয়ার পর বৃষ্টির পরমুহুর্তে সৃষ্ট ঘ্রাণ বিভিন্ন কারণে মানুষের স্নায়ুতে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে। এই ভালো লাগার পেছনে রাসায়নিক বিক্রিয়াঘটিত বেশকিছু কারণ রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া, গাছপালা বা বিদ্যুত চমকানো- সবকিছুই বৃষ্টির সময়কার ভেজা মাটি ও নির্মল বাতাসের মনোরম সৌরভের অনুভূতি তৈরি করার পেছনে ভূমিকা রাখে।

ইংরেজিতে `পেট্রিকোর` নামের এই সুঘ্রাণের উৎসের সন্ধানে বহুদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন বৈজ্ঞানিকরা।

ভেজা মাটি

১৯৬০ সালে দু`জন অস্ট্রেলিয় গবেষক প্রথম এই নামকরণ করেন। বৃষ্টি যখন প্রথম শুষ্ক মাটি স্পর্শ করে তখন আমরা যে উষ্ণ, সোঁদা গন্ধ পাই তা ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্টি হয় বলে জানান তারা।

যুক্তরাজ্যের জন ইনস সেন্টারের আণবিক জীবাণুবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক মার্ক বাটনার বলেন, ‘মাটিতে এই ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে আছে।’

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন মাটির সোঁদা গন্ধ পান তখন আসলে বিশেষ এক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার তৈরি করা অণু গন্ধ পান আপন।’

জিওসমিন নামের ওই অণু স্ট্রেপটোমাইস দিয়ে তৈরি হয়, যা সাধারণত উর্বর মাটিতে উপস্থিত থাকে।

বৃষ্টির পানির ফোঁটা মাটি স্পর্শ করলে মাটিতে উপস্থিত জিওসমিন বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃষ্টির পর আরো অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

অধ্যাপক বাটনার বলেন, ‘অনেক প্রাণীই এই গন্ধের বিষয়ে সংবেদনশীল হলেও মানুষ এ সম্পর্কে অতিরিক্ত অনুভূতিশীল।’

এই গন্ধকে `পেট্রিকোর` নাম দেওয়া দু`জন গবেষক ইসাবেল বেয়ার আর আর.জি. থমাস ১৯৬০ সালে জানতে পারেন যে সে সময় ভারতের উত্তর প্রদেশে এই ঘ্রাণ আহরণ করে সুগন্ধি হিসেবে বিক্রি করা হতো `মাটি কা আত্তর` নামে।

বর্তমানে সুগন্ধি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে জিওসমিনের ব্যবহার বাড়ছে। তবে জিওসমিনের গন্ধ ভালবাসলেও, অনেকেই কিন্তু এর স্বাদ অপছন্দ করেন। মানুষের জন্য এটি ক্ষতিকর না হলেও পানিতে বা ওয়াইনে সামান্য পরিমাণ জিওসমিনের উপস্থিতিও সহ্য করতে পারেন না অনেকেই।

ডেনমার্কের আলবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেপ্পে নিয়েলসেন বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতিতে যে মাত্রায় পাওয়া যায়, সেই পরিমাণ জিওসমিন মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হলেও মানুষ কেন এর স্বাদ পছন্দ করে না সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানি না আমরা।’

পেট্রিকোর পরিভাষা

নেচার জার্নালে প্রকাশিত হওয়া বৈজ্ঞানিক ইসাবেল জয় বেয়ার ও রিচার্ড থমাসের ১৯৬৪ সালের প্রবন্ধ ‘ন্যাচার অব আর্গিলেশাস ওডর’এ প্রথমবার এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। গ্রীক শব্দ `পেত্রোস` ও `ইকোর` থেকে উদ্ভূত হয়েছে এই শব্দ। পেত্রোস অর্থ `পাথর` আর ইকোর অর্থ `ঈশ্বরের শিরায় প্রবাহিত তরল।`

গাছ

বিভিন্ন গবেষণার বরাত দিয়ে অধ্যাপক নিয়েলসেন বলেন, জিওসমিন তারপিনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক গাছে উদ্ধৃত সুঘ্রাণের উৎস তারপিন। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল বোটানি গার্ডেনসের গবেষণা প্রধান ফিলিপ স্টিভেনসনের মতে, বৃষ্টির কারণে এসব সুবাস প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

‘গাছে উপস্থিত যেসব রাসায়নিক সুগন্ধ তৈরি করে সেগুলো অনেকসময় পাতার মধ্যে তৈরি হয় এবং বৃষ্টির কারণে এগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে বায়ুতে নির্গত হয়।’

নিয়েলসেন বিবিসিকে বলেন, ‘শুকনা ভেষজ গুড়া করলে যেমন তার ঘ্রাণ বৃদ্ধি পায়, তেমনি দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুমের পর বৃষ্টি হলে গাছের শুকিয়ে যাওয়া অংশগুলো থেকে নতুনভাবে সুবাস তৈরি হয়।’

অতিরিক্ত শুষ্কতার ফলে গাছের অভ্যন্তরীন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে পড়ে। বৃষ্টির সময় গাছ নতুন সজীবতা পায় এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে সুঘ্রাণ ছড়ায়।

বজ্রপাত

বৃষ্টির সময় সুঘ্রাণ তৈরির পেছনে বজ্রপাতেরও ভূমিকা রয়েছে। বিদ্যুৎ চমকানোর কারণে বায়ুমন্ডলে বৈদ্যুতিক আবেশ তৈরি হওয়ায় প্রকৃতিতে ওজোন গ্যাসের একধরণের গন্ধ প্রতীয়মান হয়।

মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যারিবেথ স্টোলযেনবার্গ বলেন, ‘বিদ্যুৎ চমকানোর পাশাপাশি ঝড় এবং বিশেষত বৃষ্টির কারণে বাতাস পরিষ্কার হয়। যার ফলে বৃষ্টি পরবর্তী সুঘ্রাণও সহজে ছড়িয়ে পড়ে।’

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি