বেনাপোল চেকপোস্টে যাত্রীদের মধ্যে ইফতার বিতরণ
প্রকাশিত : ১৮:২৪, ১৯ মে ২০১৯
‘এবছরও ইফতার! আলহামদুলিল্লাহ। ভেবেছি গত বছর কোন উপলক্ষ ছিল, ভাগ্যক্রমে হয়তো আমিও পেয়েছিলাম।’ অভিব্যক্তি, পঞ্চাশোর্ধ ক্যান্সার রোগী দোহারের ফিরোজা বেগমের। মমতাময়ীর মলিন মুখে স্মিত হাসি! যেন ধন্যবাদের পশরা! দুর্বল শরীরে ধীর পায়ে তিনি যখন এগুচ্ছিলেন, শারীরিক অবস্থা বোঝা যায়নি। ভারতের সিএমসি হাসপাতাল থেকে দেশে ফিরছেন। বছরে দু‘বার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।
মাহে রমজান উপলক্ষে যাত্রীদের মধ্যে ইফতার বিতরণ কর্মসূচি ও তাদের সেবা, পরিবর্তন ও আধুনিকায়নে বিস্মিয় প্রকাশ করেছেন এই নারী।
আরেকজন যাত্রী চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ের আলাউদ্দিন বেপারী (৫৫)। চেন্নাই থেকে ফিরছিলেন তিনি। ছত্রিশ ঘন্টার ভ্রমণক্লান্ত এই মুসাফির! এক ঘন্টা আগেও অনিশ্চিত ছিলেন এ বেলায় সীমান্ত পার হতে পারবেন কিনা? চেকপোস্টে ঢুকেই হাতে ইফতারের প্যাকেট! পরিশ্রান্ত যাত্রী বিস্মিত হয়েছেন! খুশিটা অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট। বললেন, ইফতার নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ মহান। আরও কিছু বললেন নিচু স্বরে। হয়তো প্রার্থনা, হয়তো শুকরিয়া। যাবার আগে কর্মকতাদের ধন্যবাদ দিলেন।
‘আঙ্কেল, আমিতো রোযা না’ বলে ছয় বছরের শিশু ইফতারের বক্স ফেরত দিতে উদ্যত! হয়তো তার মা ইশারায় কিছু বলেছেন। অন্য রোযাদারের ইফতার হবে বলে। বিতরণে নিয়োজিত রাজস্ব কর্মকর্তা সমীরণ শিশুটির পিঠে আদর করে দিলেন। বললেন ‘তুমিও কমিশনার স্যারের মেহমান, এ বক্স তোমার’! শিশুর চোখে মুখে সীমাহীন আনন্দ। সমগ্র চেকপোস্ট ইফতারের আগে থেকে উৎসবময়। মা-পুত্রের যুগলবন্দী সব ছাপিয়ে! এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন ভারত থেকে আগত বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীরা।
গতবারের ন্যায় এবারও যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক কাস্টম চেকপোস্টে ভারত গমনাগমনকারী পাসপোর্টযাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে ইফতারের ব্যবস্থা করেছেন বেনাপোল কাস্টম হাউস।
এবার রোজায় উন্নতমানের ইফতারের ব্যবস্থা করায় হতবাক হয়েছে যাত্রীদের। কাস্টমের ইতিহাসে কোনো চেকপোস্টে পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য এ ধরনের গণহারে ইফতার বিতরণ করার ব্যবস্থা দৃষ্টান্ত স্থাপন এই প্রথম। এতে ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে সরকারের। ভারত ও বাংলাদেশে এ নিয়ে রীতিমতো প্রশংসার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে আসছে। আগে যেখানে শ‘পাঁচেক যাত্রী চলাচল করতো বর্তমানে বেড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজারে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এই দ্বিতীয় বারের মত বেনাপোল কাষ্টম কমিশনার আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ব্যতিক্রমী ইফতার আয়োজন করেছেন। ইমিগ্রেশন অভ্যন্তরে সন্ধার আগেই সাজিয়ে রাখা হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। ফলে স্থানীয় মুসল্লিরাসহ বেনাপোল স্থলপথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গমনাগমনকারী পাসপোর্টযাত্রীরা উপকৃত হচ্ছেন। রমজান মাসের প্রথম দিক থেকেই ইফতারি আয়োজন করেছেন তারা। প্রতিদিন শত শত মুসল্লি ও যাত্রীরা যোগ দিচ্ছেন ইফতারি অনুষ্ঠানে। এক সাথে বসে ইফতার করছেন কাষ্টম ও ইমিগ্রেশন পুলিশের সদস্যরা। খুশি যাত্রীরাসহ স্থানীয় মুসল্লিরা। এমন উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা। পুরো রমজান মাসব্যাপি আগত পাসপোর্টযাত্রীদের ইফতারি সেবা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন কাষ্টম কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বেনাপোলে যোগদানের পরপরই এ ধরনের উদ্যোগ যেমনি প্রশংসিত হয়েছে। তেমনি উপকৃত হয়েছেন মানুষ। দেশ-বিদেশে কাস্টমসের সুনাম অর্জিত হয়েছে। প্রতিদিন ভারত থেকে আসা শতশত পাসপোর্টযাত্রী এ ধরনের সেবা গ্রহণ করছেন।
চেকপোস্টে দায়িত্বরত রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, ইফতার ব্যবস্থা মাসব্যাপী চলবে। চেকপোস্টে আগত দেশী-বিদেশী সবার জন্য এ ব্যবস্থাপনা কাস্টমস কমিশনারের সৌজন্যে। আমাদের প্রত্যাশা দেশের সমজাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অফিসে এমন সেবা চালু হবে। এবার রোযাদার মহিলা ও শিশুর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মসজিদের উপস্থিত মুসল্লিদের জন্যও একই ব্যবস্থা। প্রতিবছরই এখন থেকে ইফতার দেয়া হবে।
বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, পাসপোর্টযাত্রীরা আমাদের সম্মানিত মেহমান। যাতায়াতের ব্যস্ততায় তারা ঠিকমতো ইফতারি করতে পারে না। তাদের ইফতারির সমস্যার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি যাত্রীকে আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য মেহমানদারি করছি। রমজানে এটা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। রোজায় দেশি-বিদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করতে পেরে গোটা কাস্টম হাউস গর্বিত। দু’দেশের কাস্টমস ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে। আমরা এই ধরনের আরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।
কেআই/
আরও পড়ুন