ঢাকা, রবিবার   ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা, দুশ্চিন্তায় পুলিশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। বেপরোয়াভাবে চলছে ছিনতাই। আজ ধানমন্ডি তো কাল মোহাম্মদপুর, আবার পরশু যাত্রাবাড়ী ও শ্যামলী। এভাবে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। 

জানা গেছে, জানা গেছে, গেল বছরের শুরুতে ডিএমপির পক্ষ থেকে ছিনতাই রোধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছিনতাইকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই তালিকা ধরে পুলিশ নিয়মিত অভিযানও চালাত। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে সেই তালিকা আর তেমন কাজে দিচ্ছে না। 

ডিএমপির কয়েকটি বিভাগের দায়িত্বশীল অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতিদিন কমবেশি ছিনতাই প্রতিরোধে কাজ করছেন। কিন্তু সেটি রোধ করা কঠিন হচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিগত সময়ের তুলনায় ছিনতাইকারীর সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনাও। সেই সাথে বেড়েছে ছিনতাইয়ে জড়িত ব্যক্তিদের হিংস্রতাও। আগে চাকু বা ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে পথচারীদের টাকা ফোন কেড়ে নিত তারা। এখন রামদা, হাসুয়া ও বড় ছোরা ব্যবহার করছে। ছিনতাইয়ে কেউ একটু বাধা দিলেই তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করছে। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। 

গত ১৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৯টায় রাজধানীর মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হাফেজ কামরুল হাসান ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইলফোন ও সাত হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পথচারীরা মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে মারা যান কামরুল। পরে এ ঘটনায় দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

গত ১ জানুয়ারি পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকায় থাকা আত্মীয়ের বাসা থেকে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন এক নারী ও ওই নারীর ভাই। এসময় তাদের একটি মোটরসাইকেলে আসা তিন ছিনতাইকারী পথরোধ করে। পরে তাদের গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে সোনার গয়না (চেইন ও আংটি) ও পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা চাপাতি দিয়ে পুরুষ যাত্রীর ঊরু ও হাতে কোপ দিয়ে অটোরিকশার চাবি নিয়ে পালিয়ে যায়।

গত ৬ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা অটোরিকশা চালক জসিম মোল্লা (৪২) রাতে বাসা থেকে বের হন। পরদিন মীরহাজিরবাগ তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা রোডের ইঞ্জিনিয়ার গলির মাথায় পাকা রাস্তার উপর জসিমের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এসময় জসিম মোল্লার মাথায়, পিঠে, বাম হাতের কব্জি, বাম পায়ের গোড়ালি ও ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপের আঘাত ছিল। এ ঘটনায় মৃত জসিম মোল্লার স্ত্রী শিল্পী গত ১৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর ফকিরাপুর এলাকায় রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাজু মোল্লা (২২) নামে এক যুবক ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে ছুরিকাঘাতের শিকার হন। পরে তার মৃত্যু হয়। 

গত ২১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় এক নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে অভিযান চালিয়ে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

গত ২১ জানুয়ারি গুলশান-২ নম্বরে রাত নয়টার দিকে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুল কাদের ও তার শ্যালক আমির হামজা গুলশান-১ হয়ে মোটরসাইকেলে বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে ১৫-২০ জন তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে রড, ইট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে নগদ প্রায় এক কোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমির হামজা ও কাদের আহত হন। 

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে মতিঝিল থেকে মগবাজার যেতে জাহাঙ্গীর আলম ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া করেন। রাত তিনটার দিকে পশ্চিম রামপুরার বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের সামনে এলে জাহাঙ্গীর আলমের পেটে ছুরি ধরে সাথে থাকা একটি মোবাইল, নগদ টাকা ও রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। তখন রিকশাচালক চিৎকার করলে টহল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসে। পুলিশ দেখে ছিনতাইকারীরা পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় জীবন ও সোহাগ নামে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের শিকার হচ্ছেন খোদ পুলিশ সদস্যরাও। গত মঙ্গলবার দিনদুপুরে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য আদাবর এলাকায় থাকা বিট পুলিশের অফিসে যায় এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। পরে তারা সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের কোপানোর জন্য ধাওয়া দেয়। মোহাম্মদপুর থানার একজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা এখন সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছি। যেকোনো সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হামলা করে বসতে পারে। কারণ আমরা তাদের ধরছি, অভিযান করছি।’

তবে র‌্যাবের ভাষ্য, গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ, র‌্যাব, সেনা ও যৌথবাহিনী মিলে দুই শতাধিক ছিনতাইকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীর সংখ্যাই বেশি। তবে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় ছিনতাই বেড়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে।

ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিটি থানায় টহল জোরদার করা হয়েছে। অপরাধীদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে যাদের নাম পাওয়া হচ্ছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাইকারীর উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে, পুলিশ এখন টহল বাড়িয়ে এই অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করছে। তারা দিনে ও রাতে মিলে টহল দিচ্ছে। আগে যেসব এলাকায় পুলিশ টহলই দিত না সেগুলোও এখন টহলের আওতায় আনা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর থানাগুলোতে প্রতি রাতে টহল বাড়ানো হচ্ছে। যেসব এলাকায় বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে সেগুলো চিহ্নিত করে এই টহল চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিটি থানায় টহল জোরদার করা হয়েছে। অপরাধীদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে যাদের নাম পাওয়া হচ্ছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশ বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই প্রতিদিন পেশাদার ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

এসএস//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি