বৈঠকে ফখরুল-মওদুদের বাকযুদ্ধ
প্রকাশিত : ২০:১৭, ১৭ জুন ২০১৯ | আপডেট: ২১:৪১, ১৭ জুন ২০১৯
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাকযুদ্ধে নেমেছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাল্টাপাল্টি প্রশ্ন আর আক্রমনাত্মক বাক্যে ক্ষোভ ঝেড়েছেন একে অপরের ওপর। শেষ পর্যন্ত স্কাইপিতে অংশ নিয়ে বৈঠকের সভাপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর হস্তক্ষেপে দুইজনের তর্কবিতর্কের বিরতি হয়। তবে উভয়ের ক্ষোভ আর প্রশ্নের উত্তর ও কোন সমাধান বা সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকের সমাপ্তি হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষুব্ধ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চান, কার সিদ্ধান্তে ভোটবিহীন সরকারের অবৈধ সংসদে যেতে চার এমপি শপথ নিলেন। আবার আপনি এমপি হয়ে কার সিদ্ধান্তে শপথ নিলেন না। সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী বাছাই ও বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে স্থায়ী কমিটি বা দলের সংসদীয় বোর্ড কেন জানল না? এতে কি স্থায়ী কমিটিকে অপমান করা হয়নি? আপনি কার ব্যাগ ক্যারি করতে এ সিদ্ধান্ত নিলেন?
জবাবে মির্জা ফখরুলও কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, হোয়াট ডু ইউ মিন? যা হয়েছে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। তা ছাড়া ব্যাগ ক্যারি করার অভ্যাস আমার নেই, আপনারই আছে। আপনিই তো এরশাদের দল করেছেন। তার ব্যাগ ক্যারি করেছেন।
জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আগে কী করেছি, সেটা মূল বিষয় নয়। এখন কী করছি, সেটা দেখার বিষয়।’ এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেই ফেলেন, এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। আপনারা যদি মনে করেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিই?।
এ সময় স্কাইপিতে অংশ নিয়ে বৈঠকের সভাপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুই নেতার তর্কবিতর্ক ‘চুপচাপ’ শুনছিলেন। শেষ মুহূর্তে অবশ্য ‘ঐক্যবদ্ধ’ থাকার অঙ্গীকার করে হাসিমুখে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষ হয়।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, চার এমপির শপথ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন দেওয়া, বগুড়া-৬ আসনে জি এম সিরাজকে প্রার্থী করাসহ কয়েকটি ইস্যুতে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন প্রভাবশালী দুই সদস্য। একপর্যায়ে তারা উচ্চবাচ্যও শুরু করেন। বেশ কিছু সময় এ বিতর্ক চলে। পরে অবশ্য স্থাইপিতে বৈঠকে অংশ নেওয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সবশেষে সবাই একমত হন, যে কোনো মূল্যে দলের ঐক্য বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে না। এরপর সবাই হাসিখুশি মুখে বেরিয়ে আসেন। স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের তর্ক-বিতর্ক চলার একপর্যায়ে আরেক সদস্য সবার উদ্দেশে বলেন, এর আগে আমরা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না বললেও গিয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাব না বলেও গিয়েছি।
৮৬ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও তা পরিবর্তন করেছেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতেই পারে। আমরা নির্বাচনে যাব না বলেও গিয়েছি। শপথও নিয়েছি। সিদ্ধান্ত আমরা পরিবর্তন করতেই পারি। কিন্তু আপনি কেন বললেন এটি শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত। তিনি যখন সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা দলীয় সিদ্ধান্তই বলতে হবে। আবার আপনি শপথ নিলেন না। তাহলে দাঁড়াল কী? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একই বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত দিলেন? আবার আপনি বললেন শপথ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল? এটিও কেন বলতে গেলেন।
এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কিছু কর্মসূচি দেব। তবে এখনই তা চূড়ান্ত হয়নি। আমরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়েই আলোচনা করেছি।
আরকে//
আরও পড়ুন