বোনকে উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর আহত ভাই, আসামীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে
প্রকাশিত : ২২:২৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার জেবেন্নুর সুলতান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী অপহরণ হওয়ার ৪৮ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়ে গেছে আসামীরা। সন্দ্বীপ থানার পুলিশ আটক করতে পারেনি এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত মূল হোতাদের। গত বুধবার বিকালে ছাত্রী অপহরণের ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, বুধবার আমিন রসুলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী মুছাপুর জেবেন্নুর সুলতান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে তার ভাই জুয়েল বাঁধা দিয়ে বোনকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে ছাত্রীটিকে তুলে নিয়ে মাইটভাংগা ৭নং ওয়ার্ডের আব্বাস মাঝির বাড়ীর একটি ঘরে আটকে রাখে। পরে জুয়েল তাদের পরিবারের লোকজনকে জানালে ছাত্রীর পিতাসহ চাচাতো ভাইয়েরা ছাত্রীকে উদ্ধার করতে আব্বাস মাঝির বাড়িতে আসলে অপহরণকারীদের সাথে থাকা আরও ১২- ১৫ জন মিলে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে ইট,লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে ছাত্রীর পিতা ও চাচাতো ভাইয়েরা মারাত্মক ভাবে আহত হয়। অন্যান্যরা সন্দ্বীপে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও ছাত্রীর ভাই জুয়েলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তার ডান পা ইটের আঘাতে ভেঙে যায়। মুখের বাম পাশে ইটের আঘাতে থেতলে যায় এবং চোখ মারাত্মক ভাবে ফুলে যায়।
হাসপাতালে থাকা জুয়েলের চাচা জানায়, জুয়েলের পেটে ও বুকে প্রচুর আঘাতের কারণে রক্তবমি হচ্ছে।
ঘটনার একদিন পর বৃহষ্পতিবার রাতে মেয়ের পিতা সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে আমিন রসুলসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অঞ্জাতনামা ৮/১০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে।
মামলার পরেও আসামীদের ধরতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে জেবেন্নুর সুলতান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মানববন্ধন করেছে।
জানা গেছে,আমিন রসুল উপজেলা ছাত্রলীগের উপ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। সে ছাত্রীটিকে দেড় বছর ধরে উত্যক্ত করে আসছিল। মেয়েটি এক বছর পূর্বে মুছাপুর বদিউজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অনেককে জানালেও কোন প্রতিকার না পেয়ে পরিবারের লোকজন বাধ্য হয়ে তাকে জেবেন্নুর সুলতান উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়।
ছাত্রীর পিতা সিদ্দিকুর রহমান জানান, আমিন রসুল দেড় বছর ধরে আমার মেয়েকে উত্যক্ত করতো। মেয়ে বিষয়টি পরিবারে জানালে আমার ছেলে জুয়েল বিষয়টি হেড মাষ্টারকে অবহিত করে। কিন্তু এতেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় আমার মেয়ে প্রায় তিন মাস স্কুলে যেতে পারেনি। পরে আমরা মেয়েকে স্কুল বদলি করে জেবেন্নুর সুলতান উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে আসি।’
বুধবার আমিন রসুল সন্ত্রাসী নিয়ে আমার মেয়েকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমার ছেলে বাধা দিলে তাকে মারধর করে। পরে আমরা বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ একটু দেরী করে আসে। আমরা আমিন রসুলের মুরুব্বিদের ঘটনাটি বলে আমাদের মেয়েকে ঘর থেকে বের করে উঠানে আনতে বললে আমিন রসুলসহ ১০/১৫ জন আমাদের ডাকাত বলে চিকিৎসা দিয়ে মারধর শুরু করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মেয়েটিকে উদ্ধার করে আমাদের হাতে তুলে দেয়।
জেবেন্নুর সুলতান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার নাথ জানান, স্কুল ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার পথে আমাদের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করার ঘটনা শুনতে পাই। এর পরদিন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দোষীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করে।
সন্দ্বীপ থানার ওসি (তদন্ত) মো. হালিম জানান, ‘অপহরণ ঘটনার মামলা হয়েছে এবং আমরা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’
কেআই/এসি
আরও পড়ুন