ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বোনকে ডাক্তার বানাতে চান হকার মিজান

প্রকাশিত : ১৫:৩৫, ১৩ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১২:২১, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

নীলক্ষেত অঞ্চলের পরিচিত মুখ মিজানুর রহমান। সবাই তাকে মিজান নামেই ডাকে। প্রতিদিন সকালে দুই ঘণ্টা ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। এরপর বইয়ের দোকানে কাজ করেন। মা-বাবা আর তিন ভাই-বোন নিয়ে তাদের সংসার। অভাবের সংসারে পড়ালেখাও খুব বেশি করতে পারেননি। কিন্তু পড়ালেখা না করতে পারলেও ভাই-বোনেদের পড়ালেখা শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি। এই আশা নিয়েই ২০০৮ সালে ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জলগড় থেকে ঢাকায় আসেন মিজান। তখন থেকেই জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নীলক্ষেত এবং নিউ মার্কেটের বিভিন্ন পয়েন্টে ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন মিজান। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন পথে নামেন। বিক্রি বাবদ যা লাভ হয় তাই দিয়ে নিজের জন্য সামান্য রেখে বাকি টাকা বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনদের জন্য পাঠিয়ে দেন। প্রতিদিনই গড়ে তিনশ টাকা করে লাভ হয় তার। দারিদ্র্যতাকে মেনে নিয়েই হাসিমুখে প্রতিদিনই ফেরি করে বেড়ান মিজান।

মাঝে মাঝে কষ্টের টাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য বা রাজনৈতিক কোনো কর্মী ভাগ বসায় বলে অভিযোগ করেন মিজান। তার অভিযোগ, অনেক সময় পান-সিগারেট বিনা পয়সায় নিয়ে যান তারা। এভাবে চলতে থাকে তার অল্প পুঁজির ব্যবসা। এর মধ্যে ২০১৫ সাল থেকে এ ব্যবসার পাশাপাশি নতুন কাজ পান মিজান। নীলক্ষেতের জননী বুক সেন্টারে দৈনিক ২৫০ টাকা হাজিরা হিসেবে কাজ নেন তিনি। সেখানে দুপুরের খাবারও পান মিজান। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দোকানে কাজ করেন তিনি।

এর আগে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নীলক্ষেতের বই মার্কেটে ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন মিজান। আবার সন্ধ্যার পর দোকানের কাজ শেষে ফেরি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। কোনোদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কোনোদিন নিউমার্কেটের বিভিন্ন পয়েন্টে। রাত ১১টা পর্যন্ত এভাবে ফেরি করেই চলে তার ব্যবসা।

তার স্বপ্ন ছিল দুই ভাই-বোনকেই ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু ২০১৫ সালে বিয়ে করার পর থেকে তার একার পক্ষে সংসারের হাল ধরা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তার ছোট ভাই সবুজকে ঢাকায় নিয়ে আসেন মিজান। এখন দুইভাই একসঙ্গে কাজ করছেন, টাকা পাঠাচ্ছেন বাড়িতে। সংসারও চলছে ভালোই। এখন তাদের দু’ভাইয়েরই স্বপ্ন যেভাবেই হোক একমাত্র বোনকে ডাক্তার বানাবেন।

তাদের একমাত্র বোন নাসিমা আক্তার এবার ভোলার দৌলতখান উপজেলার আজহার আলী হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। সরকারি কোনো উপবৃত্তি না পেলেও মন খারাপ হয় না মোটেও। মিজানের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করতে প্রতি মাসেই লেখা-পড়া বাবদ একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা পাঠান বোনের জন্য। এখন মিজানের দুই বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন সবাইকেই সমান চোখে দেখেন মিজান।

পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দিতেই প্রতিদিন তার জীবন যুদ্ধে নামতে হয়। এক সময় অনেক কিছু থাকলেও এখন নিজেদের বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। তারপরও মিজানুর রহমানের জীবনযুদ্ধ থেমে থাকেননি। ছনের ঘরে উঠেছে টিনের ছাউনি। কিন্তু বাড়িভিটা ছাড়া কোনো জমি না থাকলেও পরিবারের সবার মুখে হাসি আছে। সবার মুখে এই হাসি ধরে রাখতে চান মিজান।

আর/ডব্লিউএন

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি