ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বোমার গ্রাম থেকে চামচের গ্রাম, সে এক শিল্প বটে!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৮, ১৭ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ২০:৪৮, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রায় ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা বর্ষণের শিকার হয়েছে প্রতিবেশী দেশ লাওস। কারণ লাওসের ‘হো চি মিন ট্রেইল’ সড়ক দিয়েই ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট গেরিলাদের কাছে রসদ পৌঁছাত; এজন্য ওই সড়ক লক্ষ্য করেই গোলা বর্ষণ করত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। বলা হয়, লাওসে যে পরিমাণ বোমা ফেলা হয়েছে তা নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত মোট বোমার চেয়েও বেশি। এসব বোমার এক তৃতীয়াংশই নাকি সে সময় অবিস্ফোরিত থাকে। তবে এখনও নাকি মাঝে মাঝে একটি-দু’টি বিস্ফোরণ ঘটে। 

যুদ্ধ শেষে কেটে গেছে প্রায় ৪৭ বছর; কিন্তু এখনও মাঝেমধ্যেই বোমার হদিস মেলে। শুধু তাই নয়, এখনও বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। 

লাওসের যে গ্রামটিতে সবচেয়ে বেশি বোমা ফেলা হয়েছিল, সেটি হল ঝিয়াংখুয়াং প্রদেশের বান নাপিয়া। গ্রামটিতে এতো বোমা বর্ষণ হয়েছে যে, পরবর্তীতে এটি বোম্ব ভিলেজ বা ‘বোমা গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

জমা করে রাখা বোমার খোলস

যদিও নেতিবাচক বিশেষণের এই পরিচিতি উতরে গেছেন বান নাপিয়াবাসী। এখন গ্রামটি নতুন করে পরিচিতি পেয়েছে চামচ গ্রাম নামে। 

কেমন করে এমন রূপান্তর, গল্পটা সেখানেই। 

যুদ্ধপরবর্তী সময়ে যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে বান নাপিয়ার মানুষ, তখনই বাধে আরেক বিপত্তি।

গ্রামবাসীর প্রধান পেশা চাষাবাদ, কিন্তু দুর্ভাগ্য, গ্রামের সব জমিতেই অসংখ্য বোমা ছড়িয়ে ছিটিয়ে, কোথাও মাটি চাপা পড়ে রয়েছে। জমি চাষ করতে গিয়ে পরিত্যক্ত বোমা বিস্ফোরণে তখন মৃত্যু আর পঙ্গুত্ব বরণের ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে। 

কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। তাই এক পর্যায়ে বোমার সঙ্গেই মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেল বান নাপিয়ার মানুষ। 

এখনও বান নাপিয়ায় গেলে দেখা যায়, বোমার খোলস দিয়ে তৈরি বালতি, ফুলের টবসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র।

ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে বোমার খোলসে

কখনও বড় আকারের বোমার খোলস ব্যবহার হচ্ছে চুলা তৈরিতে, আবার ছোট বোমার খোলস দিয়ে তৈরি হচ্ছে ছাইদানি। এমনকি নৌকাও বানানো হয়েছে জঙ্গি বিমানের জ্বালানি ট্যাংক দিয়ে। 

বর্তমানে বান নাপিয়ার বেশিরভাগ মানুষের পেশা বোমার খোলস গলিয়ে তা থেকে বিভিন্ন জিনিস তৈরি। তবে এখানে তৈরি চামচ সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছে। 

পর্যটকরা লাওসে গেলেই এই গ্রামটি ঘুরে দেখেন একবার। এজন্য এখন পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন স্মারক যেমন, চাবির রিং, গয়না ইত্যাদি তৈরি করেন বান নাপিয়ার মানুষ, সেটিও কিন্তু বোমার খোলস গলানো ধাতু থেকেই। এভাবেই বোমার গ্রাম থেকে চামচের গ্রামে রূপ নিয়েছে বান নাপিয়া।

রেস্তোরাঁর বাইরে সাজানো হয়েছে বোমার খোলসে

যুদ্ধপরবর্তী সময়ে লাওস সরকার যাবতীয় বোমা পরিষ্কার করা শুরু করেছিল। তবে এজন্য যে প্রযুক্তি, লোকবল এবং অর্থ প্রয়োজন তার কোনোটিই নেই দেশটিতে। এজন্য স্বল্প পরিসরে এখনও দেশটিতে বোমা মুক্তকরণ কাজ চলমান।  

সূত্র: অ্যাটলাস অবসকিউর, বিবিসি বাংলা

এসবি/  
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি