ব্যাংকিং কার্যক্রমের অধিকার নেই রিজাল ব্যাংকের: অর্থমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১৫:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৫:২৯, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭
ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের কোনো ধরণের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির বিষয়ে ব্যাংকটির দেওয়া বিবৃতির প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সেমিনার শেষে অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থচুরির বিষয়ে ব্যাংকটিকে বাংলাদেশ বলীর পাঠা বানাচ্ছে, ব্যাংকটির এমন বিবৃতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তাদেরকে (রিজাল ব্যাংক) আমরা বলীর পাঠা বানাচ্ছি না। তাদের বলীর পাঠা বানানোর কোনো উদ্যেশ্য আমাদের নেই। তবে রিজার্ভ চুরির ব্যাপারে নেতিবাচক কার্যক্রমের জন্য তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার কোনো অধিকার নেই।
সেমিনারে আলোচিত বিষয়ের ওপর তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে আমাদের পণ্যের উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে দারিদ্র্য হ্রাস করতে হবে। উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। তবে আমাদের দেশের এখন মোট চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে। চাহিদা পূরণের এ সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
‘সাউথিস্ট বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর কম্প্রিহেনসিভ ডিভলপমেন্ট প্লান’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমহন প্রকাশ, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডিভলপমেন্ট অথরিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব শফিকুল আজম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে শনিবার রাজধানীর শিশু একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী রিজাল ব্যাংক নিয়ে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ঠিক আছে। কারণ, রিজাল ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক উল্টাপাল্টা আচরণ করেছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেনি। রিজাল ব্যাংককে পৃথিবী থেকে বিদায় করা উচিত।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেয়। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার সরিয়ে নেয় শ্রীলংকার একটি ব্যাংকে, যা অল্প দিনের মধ্যেই ফেরত পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে নিয়ে যায় হ্যাকাররা। ওই ব্যাংক থেকে এ অর্থ সেখানকার ক্যাসিনোতে চলে যায়। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পরে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং বিভাগ এ অর্থ উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়। মামলা করেছে রিজাল ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট শাখার ম্যানেজার ও ক্যাসিনোর মালিকের বিরুদ্ধে। এসব উদ্যোগের ফলে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। কিছু অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক এবং আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচনা করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
গত মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিউইয়র্ক ফেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ওই মামলাটি করা হবে নিউইয়র্কে। বাংলাদেশ আশা করছে, ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও সেখানে বাদী হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
আরকে/এমআর
আরও পড়ুন