ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের অভাবে দুর্ভোগে কর্মজীবী মায়েরা

প্রকাশিত : ২০:২৩, ১৫ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৩০, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

আজকের শিশুই জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে বেড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকারি বেসকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।

এরপর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি করা লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ হন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিমা-ব্যাংক, শপিং মল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালসহ অফিস, ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠান এবং শপিংমলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়নি। ফলে এদিকে যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ পান কর্মসূচি। অন্য দিকে শিশু স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে অনেক  বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের জন্য বলা হলেও মানছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মা যদি কর্মস্থলে শিশুকে তার চাহিদা অনুযায়ী বুকের দুধ ও ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার খাওয়াতে পারেন তার সুফল অনেক। সবচেয়ে বড় সুফল শিশুর সুস্থতা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মজীবী মহিলা সাদিয়া আফরিন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, সন্তান জন্মানোর চার মাস পরে কাজে যোগদান করতে বাধ্য হন।

তিনি জানান, অফিসে যে কোন সময় কন্যা শিশুটি দুধ খাওয়ার জন্য চিৎকার  করতো। অনেক সময় বাধ্য হয়ে কন্যা সন্তানকে বাড়িতে রেখে আসতে হতো। এসময় সঠিকভাবে দুধ পান করাতে পারেন নি তিনি। এনিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাকে। এক প্রকার নিরুপায় হয়ে মায়ের দুধের বিকল্প হিসাবে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির গুঁড়ো দুধ খাওয়াতে থাকে। ফলে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়তো কন্যা সন্তানটি।

তিনি এক প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে যদি ব্রেস্টফিডিং কর্নারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না । আমার মেয়েটা অপুষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠতো না।

এব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এস কে রায় একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আমাদের সংস্থার উদ্যোগে ইতোমধ্যে ৭১২টি হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

আমরা যখন আলোচনা করি তখন সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন অনেক ভাল উদ্যোগ। আমরা ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বিশেষ করে আমরা চেষ্টা করেছি গার্মেন্টসগুলোতে ব্রেস্টফিডিং কর্নার চালু করার কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিকগুলো আমাদের কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি। উল্টা ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের বিরোধীতা করেছে। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি। কাজ করে যাচ্ছি আশা করি কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের পরিচালক খুরশিদ জাহান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন,  

সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করার জন্য চিঠি দিয়েও কোনও জবাব পাননি। কর্মজীবী মায়েরা কী সন্তান জন্মানোর পরে কাজ করবে না? তাদের কী আর কাজের দরকার নেই? অফিসে যদি বাচ্চা দেখার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে মা কাজ করবে কী করে। অনেকেরই বাসায় শিশু সন্তানকে দেখার মতো কেউ নেই। তাছাড়া মা সন্তানকে বাসায় রেখে আট ঘণ্টা কাজ করলে ব্রেস্টফিডিং তো বন্ধ হয়ে যাবে।

খুরশিদ জাহান বলেন, ২০০৯ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন তখন থেকেই সবাইকে আমরা চিঠি দিয়েছি। গত দুইতিন মাস আগেও সব ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছি। কেউ কেউ রেসপন্স করলেও সবাই করেনি। শুধু চিঠি নয়, দেখা করেও তাদেরকে বলা হচ্ছে বিষয়টা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।  আমরা এবিষয় কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি আগামী বছরের মধ্যে শতভাগ প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্টফিডিং কর্নার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

আমরা ফাউন্ডেশন বিজিএমইএ এবং এফবিসিসিআই’র সঙ্গে বৈঠক করেছে, প্রতিটা পোশাক কারখানায় ব্রেস্টফিডিং সেন্টার রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়েছেন। ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন তাদেরকে এ বিষয়ে সব ধরনের ট্যাকনিক্যাল সাপোর্টও দেবে। 

এখনও সব জায়গায় সরকারি এই নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেসরকারি ক্ষেত্রে সরকারি হুকুমের মতোই একটা সার্কুলার হয়ে যাবে এটা ভাবলে হবে না। আমরা বারবার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে দেখছি সীমিত পরিমাণে সাড়া পাচ্ছি। ওদের যে রেগুলেটরি অথরিটি রয়েছে তাদেরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিচ্ছি। তাতেও সাড়া মিলছে না। তবে থেমে থাকলে চলবে না, আমাদের চেষ্টা জোরদার রাখতে হবে। আরও কংক্রিটভাবে কাজ করতে হবে। বিবিএফ চিঠির পর চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনও উত্তর পাই না আমরা। 

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের এক জরিপে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের এক তৃতীয়াংশ শিশু খর্বকায়, আর ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন কম, ১৪ ভাগ শিশু কৃশকায় (লম্বার তুলনায় ওজন খুবই কম)। এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিংয়ের যে হার একশ’ভাগ হবার কথা, সেখানে আমাদের রয়েছে ৫৫ শতাংশ। শিশুর পুষ্টিমাণ নিশ্চিতে সব জায়গায় ব্রেস্টফিডিং কর্নার চালু করার প্রয়োজন।

টিআর/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি